তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (৪)
, ২৪ শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৭ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ১০ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
(আল মুক্বদ্দিমাহ্)اَلْمُقَدِّمَةُ
এ সকল ওলামায়ে সূ’দের জায়ঠিকানা হচ্ছে ‘জুব্বুল হুযন’। এ সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَعَوَّذُوْا بِاللهِ مِنْ جُبِّ الْحُزْنِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا جُبُّ الْحُزْنِ قَالَ وَادٍ فِىْ جَهَنَّمَ يَتَعَوَّذُ مِنْهُ جَهَنَّمُ كُلَّ يَوْمٍ أَرْبَعَمِائَةِ مَرَّةٍ قِيْلَ يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَنْ يَّدْخُلُهَا قَالَ اَلْقُرَّاءُ الْمُرَاءُوْنَ بِاَعْمَالِهِمْ وَاِنَّ مِنْ اَبْغَضِ الْقُرَّاءِ اِلَى اللهِ اَلَّذِيْنَ يَزُوْرُوْنَ الْاُمَرَاءَ
“হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে লক্ষ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন- মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে আপনারা জুব্বুল হুযন থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করুন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জুব্বুল হুযনটা কি? জুব্বুল হুযন কাকে বলে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এটি জাহান্নামের একটা উপত্যকা। এই জুব্বুল হুযন থেকে স্বয়ং জাহান্নাম প্রতিদিন চার শত বার পানাহ্ চায়। না‘ঊযুবিল্লাহ! (জাহান্নাম বলে যে, আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি জাহান্নামকে জুব্বুল হুযন থেকে পানাহ্ দান করুন। তাহলে সেটা কত কঠিন জায়গা?) তিনি জিজ্ঞাসিত হলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই জুব্বুল হুযনের মধ্যে কারা প্রবেশ করবে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ঐ সমস্ত নামধারী আলিম-উলামা, ক্বারী, ছূফী, দরবেশ, যারা লোক প্রদর্শনের জন্য আমল করবে, রিয়া করবে, গাইরুল্লাহর জন্য আমল করবে। এ সমস্ত কারণে তারা জুব্বুল হুযনে প্রবেশ করবে। আর নিশ্চয়ই যারা আমীর-উমরাদের সাথে নিসবত রাখে দুনিয়া হাছিল করার জন্য, এরা হচ্ছে সবচাইতে নিকৃষ্ট ওলামায়ে সূ’। (এদের জন্যই রয়েছে জুব্বুল হুযন। )” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি)
এরা হচ্ছে ‘দাজ্জালে কায্যাব’। এ সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِىْ اٰخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُوْنَ كَذَّابُوْنَ يَأْتُوْنَكُمْ مِنَ الْاَحَادِيْثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا اَنْتُمْ وَلَا اٰبَاؤُكُمْ فَاِيَّاكُمْ وَاِيَّاهُمْ لَا يُضِلُّوْنَكُمْ وَلَا يَفْتِنُوْنَكُمْ
“হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় অনেক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে। তারা তোমাদেরকে এমন কথা বলবে, যা তোমরা শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদা, চৌদ্দ পুরুষ শুনেনি। কাজেই, এদের থেকে দূরে থেকো, এদেরকে দূরে রেখো, তাহলে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না, ফিতনায় ফেলতে পারবে না। ” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
শুধু তাই নয়; এই সকল ওলামায়ে সূ’রা দাজ্জালের থেকেও অনেক বড় ও কঠিন এবং ভয়ঙ্কর ফিতনাকারী। এ সম্পর্কে হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘বিদায়াতুল হিদায়াহ্’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَنَا مِنْ غَيْرِ الدَّجَّالِ اَخْوَفُ عَلَيْكُمْ مّـِنَ الدَّجَّالِ فَقِيْلَ وَمَا هُوَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ عُلَمَاءُ السُّوْءِ
“আমি তোমাদের ব্যাপারে এক সম্প্রদায়কে দাজ্জালের চেয়েও অধিক বেশি ভয়ঙ্কর মনে করি (যাদের ফিতনা হবে দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে অনেক বড় কঠিন ও ভয়ঙ্কর)। তখন একজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সেটা কোন্ সম্প্রদায়? জবাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ওলামায়ে সূ’। অর্থাৎ ওলামায়ে সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মালানাদের ফিতনা দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে অনেক বড় কঠিন ও ভয়ঙ্কর। ” না‘ঊযুবিল্লাহ! (ই’জাযুল কুরআন লিস সুয়ূত্বী ৩/৫২০-৫২১, বিদায়াতুল হিদায়াহ্ ১/২)
অর্থাৎ দজ্জাল ঈমানদারদের যতটুকু ঈমানী ক্ষতি করবে। ওলামায়ে সূরা তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি করবে। না‘ঊযুবিল্লাহ!
এই জন্যে বলা হয়,
ایک زمانہ بدنام علماء سوء
بہتر از صد سال طاعت بے ریا
“সামান্য সময় ওলামায়ে ছূদের হাক্বীক্বত প্রকাশ করা একশত বৎসর রিয়াহীন অর্থাৎ মক্ববুল ইবাদত থেকেও উত্তম। ”
অর্থাৎ একজন মানুষ যদি কোনো ওলামায়ে সূ’র বিভ্রান্তিতে পড়ে যায় বা ধোঁকায় পড়ে যায়, তাহলে তার জীবনটা বরবাদ হয়ে যায়। কারণ, সে তার গুমরাহীতে গোমরাহ্ হয়ে বেঈমান হয়ে মারা যাবে। তাই, ওলামায়ে সূ’দের বিভ্রান্তি থেকে, কুফরী থেকে, বেঈমানী থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচানোর জন্য ওলামায়ে সূ’দের হাক্বীক্বত প্রকাশ করাটা ফরয। সেজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি ওলামায়ে ‘সূ’দের হাক্বীক্বত প্রকাশ করেছেন, করতে বলেছেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওলামায়ে ‘সূ’দের হাক্বীক্বত প্রকাশ করেছেন, করতে বলেছেন। আর সেজন্য উনাদের অনুসরণে ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ‘ওলামায়ে সূ’দের হাক্বীক্বত প্রকাশ করে পবিত্র জুমুয়াহ্ শরীফ-এ ধারাবাহিকভাবে আলোচনা মুবারক করেছেন এবং অন্যান্য সময়ও আলোচনা মুবারক করেছেন।
মূলত, মূর্তিপূজারী, মুশরিক ও দাজ্জালের চেয়ে কঠিন ভয়ঙ্কর ফেতনাবাজ ওলামায়ে সূ’দের খপ্পর থেকে মুসলমানদের ঈমান, আমল ও আক্বীদাকে হিফাযত করার জন্য কিতাব পাঠ করা এবং ব্যাপক প্রচার-প্রসার করা আবশ্যক।
খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে এবং বিশ্বের সমস্ত মুসলমানদেরকে এই সকল মূর্তিপূজারী, মুশরিক ও দাজ্জালের চেয়ে কঠিন ভয়ঙ্কর ফেতনাবাজ ওলামায়ে সূ’দের ফেতনা থেকে নিজেদের ঈমান, আমল ও আক্বীদাকে হিফাযত করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আল আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












