তিনটা পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আমল যা মানুষ ছেড়ে দিয়েছে
, ০৭ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০১ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন, ৩০শে জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ১৬ই মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) মহিলাদের পাতা
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন যে, বর্তমান যামানায় মানুষ পবিত্র কুরআন শরীফ শুনবে এবং আমল করবে।
তবে তিনটা আয়াত শরীফ আমল তারা ছেড়ে দিয়েছে এবং তার গুরুত্ব অনুধাবনে মানুষ অক্ষম হয়েছে। তারমধ্যে প্রথম হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে মানুষেরা! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা থেকে সৃষ্টি করেছি। অর্থাৎ হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম ও হযরত উম্মুল বাশার হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাদের থেকে সৃষ্টি করেছি।
তবে গোত্রে গোত্রে সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে বিভক্ত করেছি। যাতে একজন আরেকজনের পরিচয় পেতে পারে। তবে জেনে রাখ, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে সবচেয়ে সম্মানিত ঐ ব্যক্তি, যিনি তাক্বওয়া অবলম্বন করেছেন বা মুত্তাক্বী হয়েছেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সবকিছু জানেন ও খবর রাখেন। (পবিত্র সূরা হুজুরাত শরীফ)
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর শরীফে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, মানুষ আজকে তাক্বওয়া উনার গুরুত্ব ভুলে গিয়েছে। যে তাক্বওয়া হচ্ছে সবকিছুর মূল এবং যিনি তাক্বওয়া অর্জন করে মুত্তাক্বী হয়েছেন তিনি যে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে সম্মানিত, এটা মানুষ অনুধাবনে ব্যর্থ হচ্ছে। এই আমল থেকে মানুষ মনে হয় গাফিল হয়ে গেছে। অথচ, তাক্বওয়া অবলম্বন করার দরকার রয়েছে যা সবচেয়ে প্রধান বিষয়।
এই তাক্বওয়া অর্জন করেছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে তওবা করে বাইয়াত হয়ে, সম্মানিত ছোহবত মুবারক লাভ করেছেন, উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম দিয়েছেন জান মাল, সময়, শ্রম দিয়ে, উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী যিকির ফিকির করেছেন এবং সম্মানিত আদেশ, নিষেধ মুবারক যথাযথভাবে পালন করেছেন। এভাবে উনারা তাক্বওয়া অর্জন করে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক হাছিল করেছেন। পরবর্তী উম্মত তাক্বওয়া অর্জন করেছেন এবং করবেন যাঁরা নায়েবে নবী, ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া, যামানার মুজাদ্দিদ উনাদের কাছে একই তরতীবে অর্থাৎ তওবা করে, বাইয়াত হয়ে, সম্মানিত ছোহবত মুবারক লাভ করে, উনাদের সম্মানিত নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী যিকির ফিকির করে, উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম দিয়ে, উনাদের সম্মানিত আদেশ নিষেধ মুবারক যথাযথভাবে পালন করে। মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদের সকলকেই তাক্বওয়া অর্জন করে সন্তুষ্টি রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক্ব দান করেন। (আমীন)
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এরপর বলেন যে, দ্বিতীয় হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, যখন সম্পত্তি বণ্টনের সময় হবে, তখন আত্মীয়-স্বজন ইয়াতীম-মিসকীন যারা উপস্থিত হবে, তাদেরকে খাদ্য খাওয়াবে ও উত্তমভাবে কথা বলবে ও আচরণ করবে।”
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আমল মানুষ ছেড়ে দিয়েছে। যখন কোন মানুষ ইন্তিকাল করে, ইন্তিকাল করার পর, তিনদিন তার শোক প্রকাশ করার সময়। চতুর্থ দিন হচ্ছে, তার সম্পদ বণ্টনের সময়। মানুষ সম্পদ বণ্টন করার জন্য ফারায়েজ করে, যার যার সম্পত্তি বুঝিয়ে দেয়। যারা আত্মীয় স্বজন রয়েছে, ইয়াতীম মিসকীন রয়েছে মৃত ব্যক্তির, তাদের অনেকেই উপস্থিত হয়, মনে করে থাকে, তাদের কোন ওয়ারিস সত্ত্ব রয়েছে। সেটা নেয়ার জন্য এসে থাকে ইয়াতীম। মিসকীন গরীব বিধবা যারা রয়েছে তারা যখন এসে থাকে যার যা প্রাপ্য সম্পদ তোমরা তা বণ্টন করে দিয়ে দাও। যার যার সত্ত্ব নিয়ে যাক। কিন্তু যদি অতিরিক্ত ইয়াতীম-মিসকীন এসে থাকে, তারা কিছু সেখান থেকে লাভ করতে পারেনা। তারা ওয়ারিস হয়না, যার জন্য তারা কিছুই পায়না। তারা নিরাশ হয়ে ফিরে যায় তখন তাদেরকে নিরাশ করে ফিরিয়ে না দিয়ে তাদেরকে কিছু সেখান থেকে খাদ্য খাওয়াবে, কিছু মেহমানদারী করে দিও। আর সম্ভব হলে কিছু হাদিয়া তোহফা দিয়ে দিও।
কিন্তু আজকাল মানুষ এ আমল থেকে গাফিল হয়েছে। ইয়াতীম মিসকীনের হক্ব মানুষ ভুলে গেছে, মৃত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা ইয়াতীম-মিসকীন রয়েছে তাদের মানুষ খোঁজ খবর নেয় না এবং তাদের গুরুত্ব দেয় না। এ বিষয়টাই হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, ইয়াতীম মিসকীনদের প্রতি দৃষ্টি রাখা। তিনদিন হচ্ছে, শোক প্রকাশ করার সময়, চতুর্থ দিন মানুষ খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে, মাহফিল করে থাকে, ঈছালে ছওয়াবের ব্যবস্থা করে থাকে, এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যে সে কথাই বলা হয়েছে। অর্থাৎ এই আয়াত শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে চতুর্থ দিন মানুষ সম্পদ বণ্টন করার সময় কিছু সম্পদ বণ্টন করে আর কিছু সম্পদ থেকে মানুষকে মেহমানদারী করে দেয় যা প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক।
তৃতীয় আয়াত শরীফ সম্পর্কে যেটা বলা হয়েছে, সেটা হচ্ছে, পর্দা সম্পর্কে নির্দেশ মুবারক এসেছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে ঈমানদাররা! তোমাদের যারা অধীন রয়েছে, বাঁদী- দাসী, কর্মচারী এবং তোমাদের যে নাবালিগ-নাবালিগা যারা রয়েছে, তারা যেন তিন সময় তোমাদের অনুমতি নিয়ে তোমাদের ঘরে প্রবেশ করে। তিন সময় তোমাদের পর্দা রক্ষা করার সময়। কোন তিন সময়? ফজরের নামায উনার পূর্ব সময়, যোহর নামায উনার পর সময়, মানুষ খাওয়া দাওয়া করে বিশ্রামে যায়। যখন তাদের কাপড় চোপড় টিলা করে রাখে এবং ইশার নামায উনার পর মানুষ যখন বিশ্রামে যায়। এই তিন সময় তোমাদের যারা অধীন রয়েছে, বাঁদী-দাসী কর্মচারী, ছেলে মেয়ে প্রত্যেকেই যেন তোমাদের অনুমতি নিয়ে তোমাদের ঘরে প্রবেশ করে। এছাড়া অন্য সময় প্রবেশ করলে তাদেরও গুনাহ হবেনা এবং তোমাদেরও গুনাহ হবেনা। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দেখা যাচ্ছে যে মানুষ এই তিন সময় বিনা অনুমতিতে ঘরে প্রবেশ করে যায়। নাবালিগ-নাবালিগা যারা রয়েছে তারাও এবং বাঁদী-দাসী যারা রয়েছে তারাও না বলে ঘরে প্রবেশ করে। কিন্তু সেটা মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক হুকুম উনার খিলাফ। এই তিনটা আমল থেকে মানুষ বেখবর হয়ে গেছে। আর এই তিনটা আমলই মানুষের জন্য মহা জরুরী অর্থাৎ ফরয। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে এই তিনটা আয়াত শরীফ উনার উপর আমল করার যেন তাওফীক্ব দান করেন। (আমীন)
-আহমদ ফাতেমা আক্তার
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












