মন্তব্য কলাম
দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশই হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরে এক লাফে ৪১% শুল্ক বৃদ্ধি- ব্যবসার পরিবহন ব্যয় বাড়িয়ে আমদানি-রপ্তানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে কঠিন চাপ তৈরি করবে
, ২৪ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২০ রবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০৪ আশ্বিন, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মন্তব্য কলাম
যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তামূল্যে মারাত্মক বিপর্যয় তথা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করবে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর ২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা খরচের বিপরীতে আয় করেছে ৫ হাজার ২২৭ কোটি টাকা
অর্থাৎ মুনাফা ২ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করার পরও কেন ৪১% মাশুল বৃদ্ধি করা হবে?
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইহুদীবাদী ও নব্য ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী- ‘ডিপি ওয়ার্ল্ডে’র যেন কোনো বদনাম না হয়, সে জন্যই কি আগাম মাশুল বৃদ্ধি করা হলো না?
৭ জুলাই থেকে ছয় মাসের জন্য এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে নৌবাহিনী পরিচালিত সংস্থা চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড।
এতে বন্দরের কার্যক্রমে গতি আরও বেড়েছে, যা বন্দর ব্যবস্থাপনায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার সাক্ষ্য দেয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের কৌশলগত গুরুত্ব ও অর্থনৈতিক দিক ইত্যাদি বিবেচনায়
বন্দরের মাশুল বৃদ্ধি ও টার্মিনাল পরিচালনার ভার নব্য ইষ্ট ইন্ডিয়া এবং ইহুদীবাদী কোম্পানির ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা বরদাশত করবে না ইনশাআল্লাহ।
দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশই হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এই বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি হয়, তার মধ্যে রয়েছে খাদ্যশস্য, সিমেন্ট, সার, কয়লা, লবণ, চিনি, জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল ইত্যাদি। বন্দর দিয়ে রপ্তানি করা হয় তৈরি পোশাক, পাট, পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, চা, হিমায়িত পণ্য ইত্যাদি। ফলে দেশের গোটা অর্থনীতি নির্ভর করে এই বন্দরের ওপর।
অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি ও গেইটওয়ে।
গত ৪০ বছর চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন সেবা খাতে ট্যারিফ (মাশুল) বাড়ানো না হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ মন্ত্রনালয়। গত ২৪ জুলাই বন্দরের প্রস্তাবিত ট্যারিফ অনুমোদন করেছিল।
বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতা ও অভ্যন্তরীণ অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এমনিতেই ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্থরগতি চলছে। ব্যবসায়ীরা যখন টিকে থাকার লড়াই করছেন, তখন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সেবা খাতে গড়ে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ (মাশুল) বাড়িয়ে দিয়েছে।
বন্দরের এ সিদ্ধান্তকে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে বিবেচনা করছেন ব্যবসায়ীরা।
এ জন্য এই মাশুল কমানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তাদের মতে, মাশুল না কমালে চাপে পড়বে দেশের রপ্তানি খাত।
অন্যদিকে এই অতিরিক্ত চার্জের বোঝা আমদানি-রপ্তানিকারকদের ওপর পড়েলও শেষ পর্যন্ত সেটি ভোক্তার ওপরই চাপিয়ে দেওয়া হবে, যাতে ভুগবে সাধারণ মানুষ।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন নতুন আরোপিত ট্যারিফ সকাল থেকে কার্যকর হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ৫২টি খাতে ট্যারিফ আদায় করা হয়। সেখান থেকে ২৩টি খাতে সরাসরি বর্ধিত হারে ট্যারিফ আদায় অনুমোদন হয়েছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুসারে, সবচেয়ে বেশি ট্যারিফ বেড়েছে কনটেইনার পরিবহন খাতে। প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারে ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা থেকে ৪ হাজার ৩৯৫ টাকা বেড়ে নতুন ট্যারিফ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা।
আবার কনটেইনারবাহী জাহাজের ক্ষেত্রে আমদানি কনটেইনারের জন্য ৫ হাজার ৭২০ টাকা ও রফতানি কনটেইনারের জন্য ৩ হাজার ৪৫ টাকা ট্যারিফ বেড়েছে। প্রতিটি কনটেইনার ওঠানামার ক্ষেত্রে ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে প্রায় তিন হাজার টাকা। কনটেইনারের প্রতি কেজি পণ্যের জন্য ট্যারিফ আগের ১ টাকা ২৮ পয়সার সঙ্গে আরও ৪৭ পয়সা বাড়ানো হয়েছে।
ব্যবহারকারীদের আশঙ্কা, এভাবে এক লাফে গড়ে ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ানো হলে হঠাৎ করে ভোক্তার ওপর চাপ বাড়বে। রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানও দুর্বল হয়ে পড়বে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের ক্ষেত্রে এর প্রভাব সরাসরি পড়বে।
জানা গেছে, 'বর্ধিত মাশুলের কারণে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়বে তৈরি পোশাক খাত। কারণ, কাঁচামাল আমদানির সময় এক দফা, আবার রপ্তানির সময় আরেক দফা মাশুল দিতে হবে। ফলে একই পণ্যে দুইবার বাড়তি মাশুল গুনতে হবে, যা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। '
নতুন হার অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতিটি ২০ ফুট কনটেইনারের জন্য মাশুল গড়ে ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কনটেইনারে গড়ে ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বন্দরের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী নতুন মাশুল হিসাব করা হয়েছে। এতে ডলারপ্রতি বিনিময় হার ধরা হয়েছে ১২২ টাকা। ডলারের হার বাড়লে মাশুলও বাড়বে, কারণ বন্দর কর্তৃপক্ষ ডলার ভিত্তিতে মাশুল আদায় করে।
আমদানি কনটেইনারে মাশুল বাড়ছে ৫ হাজার ৭২০ টাকা এবং রপ্তানি কনটেইনারে ৩ হাজার ৪৫ টাকা।
কনটেইনার ওঠানো-নামানোর মাশুলও ব্যাপক হারে বেড়েছে। আগে প্রতি কনটেইনারে এ খাতে মাশুল ছিল ৪৩ দশমিক ৪০ ডলার, এখন তা বাড়িয়ে ৬৮ ডলার করা হয়েছে। অর্থাৎ বাড়তি ২৪ দশমিক ৬০ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ হাজার।
প্রতি কেজি কনটেইনার পণ্যে আগে গড়ে ১ টাকা ২৮ পয়সা মাশুল দিতে হতো। এখন থেকে প্রতি কেজিতে গড়ে ৪৭ পয়সা বেশি দিতে হবে।
সমুদ্রপথে দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৯৯ শতাংশ কনটেইনার পরিবহন হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। ফলে মাশুল বৃদ্ধির প্রভাব শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ও তৈরি পণ্য রপ্তানিতে সবচেয়ে বেশি পড়বে।
বন্দর থেকে সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ খুব কম সুবিধা নিয়ে থাকে। মূলত এসব জাহাজ সাগরে নোঙর করে ছোট জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে। বন্দরের হিসাবে, সব ধরনের পণ্যে গড়ে কেজিপ্রতি মাশুল ৩৫ পয়সা থেকে বেড়ে হবে ৪৯ পয়সা। অর্থাৎ বৃদ্ধি গড়ে ৪১ শতাংশ।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট তাসকিন আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে গড়ে ৪১ শতাংশ মাশুল বৃদ্ধি, বিশেষ করে প্রতি ২০ ফুট কনটেইনারে অতিরিক্ত ট্যারিফ বৃদ্ধি ব্যবসার পরিবহন ব্যয় বাড়িয়ে আমদানি-রপ্তানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বাড়তি চাপ তৈরি করবে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তামূল্যে প্রভাব সৃষ্টি করবে।
ব্যবসায়ীরা সবসময় পূর্বানুমানযোগ্য নীতি ও স্থিতিশীলতা চান, যাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা সম্ভবপর হয়। ব্যবসায়ীরা শুরু থেকেই এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে এলেও তা উপেক্ষা করে এক লাফে ট্যারিফ বৃদ্ধির এমন সিদ্ধান্ত আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে।
ঢাকা চেম্বার মনে করে, বন্দর সেবার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য যৌক্তিক সমন্বয় জরুরি হলেও তা অবশ্যই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এবং ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা উচিত।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর তো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। তারপরও বিগত বছরগুলোতে বন্দর তো কখনই লোকসান দেয়নি। তারা ধারাবাহিক লাভ করেছে। তাতে এ মুহূর্তে গড়ে প্রায় ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। ’ এ জন্য বর্ধিত ট্যারিফ পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বিকেএমইএ সভাপতি বলেন, গত ২৫ আগস্ট বৈঠকে ব্যবসায়ীদের সামনে ট্যারিফ বাড়ানো নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো যুক্তি দিতে পারেননি।
‘আমরা ট্যারিফ বাড়ানো নিয়ে উপদেষ্টা মহোদয়ের সামনে বলেছি, যে হারে প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটি যুক্তিযুক্ত নয়। এখন এ ট্যারিফ বাড়ানোর কারণে তৈরি পোশাক খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। কারণ বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার তৈরি পোশাক খাত।
একদিকে আমাদের উৎপাদন খরচ বাড়ল, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমতে থাকবে। ’
বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ট্যারিফ বাড়ানোর ফলে সরাসরি অ্যাফেক্টেড হবে পোশাক খাত। আমাদের কাঁচামাল আমদানির জন্যও বাড়তি ট্যারিফ দিতে হবে। আবার সেই কাঁচামাল দিয়ে তেরি পোশাক রপ্তানিতেও বাড়তি ট্যারিফ দিতে হবে। এমনিতেই আমেরিকায় আমাদের যে মার্কেট, সেটি গত কয়েক মাস ধরে ডাউন হয়ে আছে। ইউরোপের মার্কেট দিয়ে আমরা মোটামুটি কারখানাগুলো বাঁচিয়ে রেখেছি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দরে কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিং, জাহাজের বিভিন্ন খাতে চার্জ বৃদ্ধির প্রভাব সরাসরি পড়বে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ৫২টি খাতে মাশুল আদায় করে। সেখান থেকে ২৩টি খাতে সরাসরি বর্ধিত হারে মাশুল আদায় কার্যকর হয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, এখন জাহাজের ভাড়া বাড়বে, কনটেইনারে ভাড়া বাড়বে, ডেমারেজ চার্জ বাড়বে।
কিন্তু মাদার ভ্যাসেলের যারা প্রিন্সিপাল তারা তো এই বাড়তি চার্জ দেবে না।
এই অতিরিক্ত চার্জের বোঝাটা যাবে ম্যাক্সিমাম আমদানি-রপ্তানিকারকদের ওপর। তারা হিমশিম খাবে। আবার তারাও সেটা চাপিয়ে দেবে ভোক্তার ওপর। শেষ পর্যন্ত বোঝাটা বহন করতে হবে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষকে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, বাড়তি ট্যারিফ সার্বিকভাবে আমদানি-রপ্তানিকারকদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ বাড়তি টাকাটা তো তাদেরই পরিশোধ করতে হবে। এটার অবশ্যই বিরূপ প্রভাব পড়বে।
সব মিলিয়ে বলতে গেলে চাপটা আসবে ভোক্তার ওপর। উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোর ওপর বাড়তি খরচের বোঝা চাপবে।
চট্টগ্রাম কাস্টম এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম সাইফুল আলম বলেন, এটা আমাদের জন্য মাথায় আকাশ রভঙে পড়ার অবস্থা। এভাবে ট্যারিফ আদায় করা হলে সার্বিকভাবে খরচের বোঝা বেড়ে যাবে। এটা তো সাধারণ ভোক্তাদের ওপর গিয়ে পড়বে। আমদানি পণ্যের অতিরিক্ত খরচ তো শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকেই বহন করতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে বন্দর কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গীকার হলো ন্যূনতম খরচে ও সবচেয়ে কম সময়ে বন্দর সেবা প্রদান করা।
সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরের মাশুল বাড়ানো যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ, বর্তমান মাশুল নিয়ে বন্দর লোকসানে নেই।
যেমন ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর ২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা খরচের বিপরীতে আয় করেছে ৫ হাজার ২২৭ কোটি টাকা অর্থাৎ মুনাফা ২ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। রাষ্ট্রের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করার পরও কেন এভাবে মাশুল বৃদ্ধি করবে!
বিতর্কিত সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের সঙ্গে বন্দরের চুক্তির মেয়াদ শেষে ৭ জুলাই থেকে ছয় মাসের জন্য এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে নৌবাহিনী পরিচালিত সংস্থা চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড। এতে বন্দরের কার্যক্রমে গতি আরও বেড়েছে, যা বন্দর ব্যবস্থাপনায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার সাক্ষ্য দেয়।
কাজেই চট্টগ্রাম বন্দরের কৌশলগত গুরুত্ব ও অর্থনৈতিক দিক ইত্যাদি বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত বন্দরের মাশুল বৃদ্ধি ও টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানির হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা।
ডিপি ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্দরের মাশুল ঘন ঘন বাড়ানোর বদনাম রয়েছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) একটি প্রতিবেদন অনুসারে, অস্ট্রেলিয়ায় ডিপি ওয়ার্ল্ড তার বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার করতে একতরফাভাবে অবকাঠামোগত সারচার্জ নাটকীয়ভাবে বাড়িয়ে দেয়-মেলবোর্ন বন্দরে ২০১৭ সালে কনটেইনার প্রতি সারচার্জ ৩ দশমিক ৪৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার থেকে ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫ দশমিক ৩০ ডলার, যা ২০০০ শতাংশের বেশি। ব্রিসবেন ও সিডনিতেও একই রকম বাড়তি চার্জ আরোপ করা হয়, যা অস্ট্রেলিয়ার প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। (রিভিউ অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট ২০১৯, আঙ্কটাড, ৩১ জানুয়ারি ২০২০, পৃষ্ঠা ৫২)
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা হলো এ বছরের নভেম্বরের মধ্যে দর-কষাকষি করে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ডিপি ওয়ার্ল্ডের যেন এ ধরনের বদনাম না হয়, সে জন্যই কি আগাম মাশুল বৃদ্ধি করা হলো?
চুক্তির পর টার্মিনালটি ডিপি ওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। তারাই মাশুল আদায় করবে, লোকবল নিয়োগ দেবে। বিনিময়ে বন্দরকে এককালীন, বার্ষিক ও কনটেইনারপ্রতি অর্থ দেবে। স্বাভাবিকভাবেই মাশুল বৃদ্ধির ফলে ডিপি ওয়ার্ল্ডের আয় এখনকার হারের চেয়ে বেশি হবে।
যেকোনো বিবেচনাতেই বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল বাড়ানো যৌক্তিক হবে না। চট্টগ্রাম বন্দর ও বেসরকারি কনটেইনার ডিপো উভয়ের মাশুল বাড়লে পণ্য আমদানি-রপ্তানির প্রতিটি ধাপেই খরচ বাড়বে।
রপ্তানি পণ্য কারখানা থেকে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে রাখার সময় একবার বাড়তি মাশুল দিতে হবে, আবার বন্দর হয়ে রপ্তানির জন্য দ্বিতীয়বার বাড়তি মাশুল গুনতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে এর সঙ্গে যোগ হতে পারে ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও প্রতিটি ধাপে বাড়তি মাশুল দিতে হবে।
কাজেই ইতিমধ্যে লাভজনকভাবে চলতে থাকা চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
সেই সঙ্গে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোর মালিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদের মাশুল বৃদ্ধির হারও যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানির হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্তও পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
বিতর্কিত সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের সঙ্গে বন্দরের চুক্তির মেয়াদ শেষে ৭ জুলাই থেকে ছয় মাসের জন্য এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে নৌবাহিনী পরিচালিত সংস্থা চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড।
এতে বন্দরের কার্যক্রমে গতি আরও বেড়েছে, যা বন্দর ব্যবস্থাপনায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার সাক্ষ্য দেয়।
কাজেই চট্টগ্রাম বন্দরের কৌশলগত গুরুত্ব ও অর্থনৈতিক দিক ইত্যাদি বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত বন্দরের মাশুল বৃদ্ধি ও টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানির হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা বরদাশত করবে না ইনশাআল্লাহ।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান আরিফ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সন্ত্রাসবাদ নয়; জিহাদী যোগ্যতা অর্জন করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী ফরয। ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সব নাগরিকের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। উন্নত প্রশিক্ষন, যুদ্ধকৌশল, সামরিক সক্ষমতা এবং আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন সাফল্যের শীর্ষে। সরকারের উচিত- দেশের মর্যাদা বুলন্দ ও দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ত্বকে সমুন্নত রাখতে সেনাবাহিনীর প্রতি সকল প্রকার পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করা।
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এর তথ্যানুযায়ী বেনিয়া বৃটিশগুলো মুসলিম ভারত থেকে লুট করেছে ১২ হাজার লক্ষ কোটি টাকা প্রকৃতপক্ষে তারা লুট করেছে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র এখনও বন্ধ করলে যা লাভ হবে চালু রাখলে তার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি হবে ৫৩টি পরিবেশবাদী সংগঠনের দাবী অবিলম্বে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হোক কিন্তু তাদের উপেক্ষা করে পরিবেশ উপদেষ্টা প্রমাণ করছে তার পরিবেশবাদী তৎপরতা অন্য পরিবেশবাদীদের সাথে সাংঘর্ষিক এবং তার পরিবেশবাদী প্রচারণা কার্যকলাপ আসলে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নয় বরং বিশেষ প্রভুর নির্দেশনায় (প্রথম পর্ব)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
জুয়ার নেশায় বুদ হচ্ছে শিশু-কিশোররা-শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সাইটই পরিচালিত হয় দেশের বাইরে থেকে অনলাইনে জুয়ায় ছোট ছোট বাজির টাকা দিন শেষে একটি বড় অঙ্কের অর্থ হয়ে দেশ থেকে ডলারের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে প্রতিদিন এসব খেলা স্বাভাবিক গেমের মতো হওয়ায় প্রকাশ্যে খেলা হলেও আশপাশের মানুষ তা বুঝতে পারেন না কেবলমাত্র ইসলামী মূল্যবোধের উজ্জীবনেই জুয়া বন্ধ সম্ভব ইনশাআল্লাহ
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
গার্মেন্টসের চেয়েও বড় অবস্থানে তথা বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানে অধিষ্ঠান হতে পারে বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা করলে শুধু মাত্র এ খাত থেকেই বছরে ১১ লাখ কোটি টাকা অর্জন সম্ভব ইনশাআল্লাহ। যা বর্তমান বাজেটের প্রায় দেড়গুণ আর শুধু অনিয়ম এবং সরকারের অবহেলা, অসহযোগীতা দূর করলে বর্তমানেই সম্ভব প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা অর্জন জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সমৃদ্ধি সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং সরকারের গাফলতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা জনগণের জন্যও জরুরী। (২য় পর্ব)
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার রোবে, দোয়ার বরকতে- কুদরতীভাবে কমে যাচ্ছে ডলারের আধিপত্য বাংলাদেশের রিজার্ভ ডলারে রাখা উচিৎ নয়- এতে লাভ আমেরিকার মুসলিম বিশ্বে অভিন্ন মুদ্রা ব্যবস্থা বিশেষত মূল্যহীন কাগজী মুদ্রা বাদ দিয়ে সুন্নতী দিনার-দিরহাম মুদ্রা চালু করা আবশ্যক ইনশাআল্লাহ (দ্বিতীয় পর্ব)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বিদেশি হাইব্রিড বীজের ফাঁদে দেশের কৃষি। হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় ফসলের জাত, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। ফুলে-ফেঁপে উঠছে বীজ কোম্পানিগুলো।
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুশরিক ভারতের প্রতি লা’নত ওদের জনসংখ্যা দিন দিন নিম্নমুখী পক্ষান্তরে ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে খোদায়ী রহমত। (সুবহানাল্লাহ) বাংলাদেশে জনসংখ্যার এখন ৬৫ ভাগই কর্মক্ষম এবং জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার উর্ধ্বগামী বাংলাদেশ ভোগ করছে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের নিয়ামত। সুবহানাল্লাহ!
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ: মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়াতে সতর্কতা তথা মধ্যম আয়ের স্থবিরতা তাওয়াক্কুল আর তাকওয়া অবলম্বনে সব সমস্যা দূর হয়ে অচিরেই বাংলাদেশ হতে পারবে শীর্ষ সমৃদ্ধশালী দেশ ইনশাআল্লাহ
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
রিজওয়ানার পরিবেশবাদী প্রচারণার বিপরীতে রবি ঠগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনে ইতিবাচক বার্তা এবং ইউনুসের পানি ও প্রকৃতি প্রেমের বানীর পরিবর্তে আপত্তি সত্ত্বেও একনেকে রবি ঠগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প অনুমোদনে জনগণ তথা নেটিজনের মূল্যায়নটা কী?
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যখন কোনো দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুদ্ধবিমান কিনে, তখন তা শুধু একটি বিমান কেনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এর সাথে যুক্ত হয় একাধিক শর্ত, নিষেধাজ্ঞা এবং জটিল টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
লাগামহীন ব্যর্থতার পর মাদক নিয়ন্ত্রণেও সরকার চরমভাবে ব্যর্থ। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিজস্ব দুর্বলতার কারণে মাদক নিয়ন্ত্রণে নজরই দিতে পারছে না। উল্টো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য নিজেরাও জড়িয়ে পড়ছে মাদক ব্যবসায়।
২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












