দেশের প্রায় ৬০ ভাগ শিশুদের পুষ্টিহীনতা ও রক্তশূন্যতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অথচ পুষ্টির অধিকার সাংবিধানিকভাবে সংরক্ষিত। এ বিষয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্বিকার ভূমিকা অত্যন্ত নির্মম। শিশুদের পুষ্টি সুরক্ষায় সরকারকে সক্রিয় হতে হবে।
এডমিন, ০৬ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৩ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ২১ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ অগ্রহায়ণ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) সম্পাদকীয়

শিশুরা পবিত্রতার প্রতীক। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় দেশের শিশুদের সুরক্ষা চ্যালেঞ্জের মুখে। বিবিধ সংবাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, শিশুরা সহিংসতা, শিশুশ্রম, শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
অথচ জাতি গঠনের মূল ভিত্তি শিশু। যারা আজকে শিশু, ভবিষ্যৎ পৃথিবীর নেতৃত্ব দেবে তারা। আদর্শবান শিশুরাই সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠার মূল হাতিয়ার।
দেশে দুই দশকে পুষ্টির সর্বোচ্চ ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। প্রি-স্কুল বাচ্চাদের এক-তৃতীয়াংশ খর্বাকৃতির, এক-পঞ্চমাংশের বেশি কম ওজনের এবং দশভাগের এক ভাগ ক্ষীণকায়। ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সি শিশুদের ৪৩ শতাংশই রক্ত স্বল্পতায় ভুগছে। বিবাহিত নারীদের এক-তৃতীয়াংশের ওজন প্রত্যাশিত মাত্রার নিচে। ১৩ শতাংশ লম্বায় খাটো। যে কারণে শিশু জন্ম দেওয়ার সময় তারা নানা জটিলতায় ভোগে এবং কম ওজনের শিশুর জন্ম দেয়। আইসিডিডিআর'বি-এর এক সমীক্ষায় এসব তথ্য এসেছে।
পুষ্টিকর খাবার খেতে না পেয়ে এখনো ৩৩ শতাংশ শিশুর শারীরিক বিকাশ ঠিকমতো হচ্ছে না। ফলে উচ্চতার তুলনায় কম ওজন এবং ওজনের তুলনায় উচ্চতা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বাংলাদেশের শিশুদের পুষ্টি পরিস্থিতির এমন তথ্য বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) যৌথ সমীক্ষায় বলা হয়েছে।
সুষম পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় রয়েছে ভাত, রুটি, সবজি, মাছ, গোশত, দুধ, ডিম ও তেলজাতীয় খাবার। একটি পরিবারকে এই খাবার কিনে খেতে গেলে দিনে মাথাপিছু কমপক্ষে ১৭৪ টাকা খরচ করতে হবে। কিন্তু তাদের দৈনিক আয় এত কম যে, খাবার কেনার পেছনে এই টাকাটা খরচ করার সামর্থ্য নেই। তারা প্রতিদিন খাদ্যশক্তি পায় ভাত, আলু, রুটি ও সবজি থেকে। যার পেছনে দিনে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা ব্যয় করতে পারে।
২০২২ সালের গেস্নাবাল ফুড সিকিউরিটি ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০তম। কাজেই একদিকে যেমন খাদ্য নিরাপত্তার ওপর জোর দিতে হবে, তেমনি খাদ্যের মান উন্নত করার দিকেও নজর দিতে হবে। প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ আমিষের সম্মিলনে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
প্রোটিন ঘাটতির কারণে নানাবিধ রোগব্যাধিতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব প্রজননক্ষম মানুষের মধ্যে ইনফারলিটির সংখ্যা বাড়ছে।
একটা সময় ছিল যখন তিন বেলার খাবার কিভাবে জুটবে সে কথা ভাবতাম। সে চাহিদা পূরণ হওয়ার পর জোর দেওয়া হলো সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে- শুধু ভাত খেলে হবে না, পুষ্টিও নিশ্চিত করতে হবে। বাস্তবে পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি থেকে সব মানুষের প্রোটিনের অধিকারও নিশ্চিত করা সম্ভব।
পুষ্টি বিষয়টি অনেক জটিল কিছু না, খুবই সহজ বিষয়। পুষ্টি সম্পর্কিত জ্ঞান মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। যার গরুর গোশত খাওয়ার সক্ষমতা নেই, সে মুরগি খাবে, মুরগি খাওয়ার সক্ষমতা নেই ডিম খাবে, ডিম খাওয়ার সক্ষমতা নেই ডাল খাবে।
বাজারের সবজি কিনে খেতে না পারলে, সে থানকুনির পাতা তুলে খাবে, ফেলে দেওয়া কলার মোচা তুলে এনে খাবে, ধান ক্ষেতের পাশে থাকা শাক খাবে, রাস্তার পাশের কচু শাক খাবে। মূলত মানুষের জানতে হবে যে, দামি খাবার না খেয়েও সুস্থ থাকা যায়। এই বিষয়টি শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে জানাতে হবে। এ জন্য সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।
স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, স্থানীয় সরকার, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারের সব দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে মানুষকে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মতো মানুষের পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিতের জন্য আলাদা বিভাগ গড়ে তুলতে হবে। যারা বিশেষভাবে মানুষকে পুষ্টি সম্পর্কে জানাবেন। সাধারণ মানুষ যদি পুষ্টি বিষয়ে জানতে পারে, তাহলে হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে পুষ্টিহীনতা কমবে।
দু:খজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের ইউনিয়ন বা থানাপর্যায়ে পুষ্টিবিদের পদ নেই। পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো জরিপও নেই। সাধারণ মানুষের পুষ্টি নিশ্চিতের জন্য স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক জরিপ একান্ত দরকার।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮(১) ধারায় বলা হয়েছে, জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবে।’ কিন্তু সাংবিধানিক এ দায়িত্ব পালনে সরকারের সাথে সফলতা যে নেই শুধু বিষয়টি তাই নয় বরং সরকারের নামমাত্র সদিচ্ছার প্রতিফলনও দেখা যায় না।
প্রসঙ্গত, যে শিশুটি অপুষ্টির কারণে ধুঁকে ধুঁকে মরে গেল তার জন্য দুঃখ ও কষ্টবোধ কেবল আপনজনের। সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্র হয়তো এ ক্ষতিকে তেমন আমল দেয় না। কিন্তু যে শিশুটি অপুষ্টিকে জীবনসাথী করে বড় হচ্ছে, তার বিষয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্র না ভেবে পারে না। এমনকি অপুষ্টির শিকার হয়ে ঝরে পড়াদের ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রযন্ত্র ও সমাজের দৃষ্টি ঘুরিয়ে রাখা সাজে না। কারণ আজ যে শিশু সেই তো আগামী দিনের শ্রমজীবী, কর্মজীবী, পেশাজীবী। অর্থাৎ দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দায়িত্ব তাদের উপরই বর্তাবে। আর তাদেরই একটি অংশ যদি অপুষ্টির মধ্যে বড় হয় তাহলে তাদের মেধার উপযুক্ত বিকাশ হয় না এবং কায়িক শ্রম করার যথেষ্ট শক্তিও তাদের থাকে না। মেধার উপযুক্ত বিকাশ না হলে তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় তেমন সাফল্য পায় না। ফলে তাদের ভাগ্যে ভালো কর্মসংস্থানও জুটে না। এ কারণে তাদের অধিকাংশের পারিবারিক জীবন হয় একেবারেই আটপৌরে তথা অসচ্ছলতার মধ্য দিয়েই চলে তাদের। অথচ শিশু বয়স থেকে উপযুক্ত পুষ্টি পেলে তারা যেমন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারত, তেমনি তারা শিক্ষা-দীক্ষায় নিজের, পরিবারের ও জাতির জন্য অনেক সাফল্য বয়ে আনতে সক্ষম হতো।
মূলত, এসব বিষয় বাস্তবায়নের অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। এই অনুভূতি ও প্রজ্ঞা আসে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ অনন্তকালব্যাপী পালন করার ইলম ও জজবা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত মুবারক তথা মুবারক ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ।
ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্র্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)