দেশে ও জনগণের টাকা প্রকল্পের নামে হয় চুরি। পুকুর চুরি নয়; সাগর চুরি। কিন্তু জনগণ থাকে অন্ধকারে।
, ০৭ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ৩০ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ২৮শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ১৪ই ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) আপনাদের মতামত
বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি কোনো পর্যায়েই দুর্নীতি বন্ধ নেই। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা সবক্ষেত্রেই শুধু দুর্নীতি আর দুর্নীতি। দেশ ও জনগণের সচেতনতার জন্য ধারাবাহিকভাবে এখানে উল্লেখ করা হলো:
চুরি সিস্টেম লসে বিদ্যুতে সর্বনাশ
অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশেই লুট
চুরির ক্ষতি দেখানো হচ্ছে সিস্টেম লস হিসেবে
বছরে নেই সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা
মেলে না কাঙ্খিত সেবা, আছে গ্রাহক হয়রানি
সিস্টেম লসের নামে বিদ্যুৎ চুরি থামছেই না। দিনের পর দিন প্রকাশ্যে অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ চুরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। চুরির বিদ্যুৎ সিস্টেম লস হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চুরির মহোৎসব চললেও এ বিষয়ে কাউকে কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। বরং চুরির কারণে যে লোকসান হয়, তা পুষিয়ে নিতে গ্রাহকপর্যায়ে চরম হয়রানি করা হয়। ভুতুড়ে বিল ও ঘুষ-দুর্নীতিও চলে সমানে। আবার অনেক ক্ষেত্রে বছর শেষে বিদ্যুৎতের দাম বাড়িয়ে তা পুষিয়ে নেওয়া হয়। সময়ের সঙ্গে ঢাকায় পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা গঠিত হলেও বন্ধ হয়নি সিস্টেম লস।
এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) থেকে প্রথমে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় গঠিত হয় ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই অথরিটি (ডেসা)। পরে অনিয়মের মুখে পড়ে বিলুপ্ত হয় ডেসা। গঠিত হয় ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। বিদ্যুৎতের গ্রাহকদের অভিযোগ, দুটি বিতরণ কোম্পানি থেকে তারা আশানুরূপ সেবা পাচ্ছেন না। পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। নতুন সংযোগ পেতে অসৎ কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের তরফে বিভিন্ন সময় সিস্টেম লস কম করে দেখানো হলেও তা আসলে কমে না, উল্টো সিস্টেম লসের নামে গোঁজামিল দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, এ খাতে সিস্টেম লসের কারণে অপচয় হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ২০১০-১১ সালে বিদ্যুৎ খাতে সামগ্রিকভাবে বছরে গড় সিস্টেম লস ছিল ১৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে এটি কমে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ হয়েছে। এর মধ্যে সঞ্চালন লাইনে ক্ষতি হয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। আগের বছরের চেয়ে এটি বেড়েছে। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকার উত্তরার সোনারগাঁও জনপথ রোডের দুই পাশে অবৈধভাবে তৈরি কাঁচা তরকারি, মাছ ও ফলের দোকান, লেপ-তোশকের দোকান, ভাঙারি দোকান, মোটর গ্যারেজ, খাবার হোটেলসহ অর্ধশতাধিক দোকানে লাইট, ফ্যান ও বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চালাতে দেখা যায়। দোকানদাররা জানান, বিদ্যুৎ অফিসের লোকেরাই সংযোগের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
দেশ স্বাধীনের পর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবি সরাসরি বিদ্যুৎ উৎপাদনে করত। ’৯০-এর দশকের পর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পিডিবি ধীরে ধীরে বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। পরে সিস্টেম লস কমাতে ঢাকার বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার জন্য ১৯৯১ সালের ১ অক্টোবর ডেসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। যাত্রার এক যুগ অব্যাহত লোকসানের পর অবশেষে ২০০৮ সালে ডেসা বিলুপ্ত হয়ে যায়। পিডিবির বাইরে যে উদ্দেশ্য নিয়ে ডেসা গঠিত হয়েছিল তা সফল হয়নি। ডেসার চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটি সমালোচনার মুখে পড়ে। এরপর ১৯৯৮ সালে ডেসার একটি অংশ বনানী, গুলশান, মিরপুর ও উত্তরা নিয়ে ডেসকো নামে নতুন কোম্পানি গঠিত হয়। আর ডেসার বিশাল টাকার দায় অমীমাংসিত রেখেই ২০০৮ সালে গঠিত হয় ডিপিডিসি। বর্তমানে ঢাকায় ডেসকো ও ডিপিডিসি এ দুটি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ বিতরণ কাজে নিয়োজিত। এর পরও সিস্টেম লস কমানো যাচ্ছে না, বরং অনিয়ম-দুর্নীতি বেড়েছে এ দুই প্রতিষ্ঠানে। বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানে ফাইল আটকে ঘুষ দাবি ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ উঠেছে ডেসকোর মিরপুর-ইব্রাহিমপুরের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের কর্মকর্তা ও নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আরেক প্রতিষ্ঠান ডিপিডিসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির মিটার রিডিং ও লাইন মেরামতের কাজে জড়িত বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মে জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
সব মিলিয়ে সেবা খাত দুটির বিশৃঙ্খলা নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে অসন্তুষ্টি। তথ্য বলছে, ১ হাজার ৫২৯ বর্গ কিলোমিটারের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় ১৬৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে ফুটপাত। এসব ফুটপাতের সাড়ে ৩ লাখ দোকানে প্রায় ৫ লাখ অবৈধ বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে। বাতিপ্রতি গড়ে ৩০ টাকা হিসেবে দিনে ব্যয় হয় দেড় কোটি টাকা। সে হিসেবে মাসে ৪৫ কোটি আর বছর শেষে অঙ্ক দাঁড়ায় ৫৪০ কোটিতে। রাজধানীর ফুটপাত ও রাস্তার এ টাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির অসৎ কর্মচারীদের পকেটেই যাচ্ছে। তবে ফুটপাতের দোকানে বিদ্যুৎ খরচের বেশির ভাগ হিসাব নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে। এ বিষয়ে তথ্য নেই ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) কর্তৃপক্ষের কাছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডিপিডিসির দৈনিক প্রায় ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চুরি হয়। ডিপিডিসির সিস্টেম লস ৭ শতাংশ আর ডেসকোর ৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। বিদ্যুৎতে ১ শতাংশ সিস্টেম লস হলে ক্ষতি হয় ৭০০ কোটি টাকা। আর এ সিস্টেম লসের হার আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্য বিবেচনার চেয়ে বেশি।
বিদ্যুৎতের গ্রাহকরা বলছেন, ডিপিডিসি ও ডেসকোর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদ্যুৎ চুরির বিষয়গুলো বেশ কয়েক বছর ধরেই ওপেন সিক্রেট। দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এলাকার চিহ্নিত দালাল চক্র ইচ্ছামতো আবাসিক ও বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎতের লাইনে অবৈধ সংযোগ লাগিয়ে টাকা আয় করছে। এজন্য দালালরা নিজেরাই মই বানিয়ে নিয়েছে। তারা তাদের ইচ্ছামতো যখন যেখানে লাইন দেওয়া দরকার, সেভাবেই দিয়ে দিচ্ছে। তারা বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের যখন যা দিয়ে ‘খুশি’ করা দরকার, সেভাবেই খুশি করছে বলে ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগ। অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে শত শত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চুরি হলেও তা রোধে এখনো নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে কর্তৃপক্ষ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
খ্রিস্টানদের অনুষ্ঠানকে ‘বড়দিন’ বলা যাবে না
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বাধীন আরাকান চাই!
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দেশের সার্বভৌমত্বের সংকটে- দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে এগিয়ে আসতেই হবে
১৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পৃথিবীর সবচাইতে কুখ্যাত কিছু নৌদস্যুর অপকীর্তি
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ফসলের একটি অংশ যায় রাজাকার ত্রিদিবের সন্তান দেবাশীষের ঘরে! -এদেশে উপজাতি চৌকিদারকে কেন ‘রাজা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে?
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
উলামায়ে ছু’দের বদ আমলই কি এর জন্য দায়ী নয়?
২২ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বাংলাদেশে জিএম ফুড প্রচলনের সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে
১৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
জান্নাতী এবং জাহান্নামী ব্যক্তিদের কিছু আলামত
১৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ঔ পনিবেশিক-ব্রাক্ষণ্যবাদী আগ্রাসন ও ষড়যন্ত্র পরিভাষা, শব্দ ও বানান আগ্রাসন (১)
১৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সমস্ত প্রকার অশ্লীলতাই হারাম
১২ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ইলিশ ধরায় বাংলাদেশ-ভারতের নিষেধাজ্ঞার সময়ে বড় পার্থক্য নিষেধাজ্ঞার নামে ভিনদেশী জেলেদের জামাই আদরে সাগর থেকে ইলিশ নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয় আর দেশীয় জেলেদের জেলে পুরা হয় জেলেদের প্রতি এ নির্মম জুলুম আর কতকাল?
১১ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আধুনিকতা নাম দিয়ে হারাম ‘ছবি’ তোলা থেকে বিরত থাকুন
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












