নছীহতে ক্বায়িম মাক্বামে উম্মাহাতুল মুমিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
, ২২ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৭ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২১ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মহিলাদের পাতা
পরকালের তুলনায় দুনিয়াবী সম্পদ সামান্য
১৪ই মুহররম, ১৪৪২ হিজরী (ইয়াওমুল খমীস)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
قُلْ مَتَاعُ الدُّنْـيَا قَلِيْلٌ وَالْاٰخِرَةُ خَيْـرٌ لِّمَنِ اتَّـقٰى وَلَا تُظْـلَمُوْنَ فَتِيْلًا ﴿৭৭﴾ سورة النساء
আপনি বলুন, দুনিয়াবী সম্পদ সামান্য। আর মুত্তাকীগণ উনাদের জন্য পরকালই উত্তম এবং তোমাদের প্রতি সামান্য অবিচারও করা হবে না। [সূরা নিসা শরীফ: ৭৭]
মহান আল্লাহ পাক তিনি দুনিয়াবী সম্পদকে সামান্য বলেছেন। আর এই সামান্য সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنِ الْمُسْتَـوْرِدِ بْنِ شَدَّادٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـقُوْلُ وَاللّٰهِ مَا الدُّنْـيَا فِـي الْاٰخِرَةِ إِلاَّ مِثْلُ مَا يَـجْعَلُ أَحَدُكُمْ إِصْبَعَهٗ فِي الْيَمِّ فَـلْيَـنْظُرْ بِـمَ يَـرْجِعُ. (رواه مسلم)
হযরত মুসতাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার উদাহরণ হলো, তোমাদের কেউ যদি মহাসাগরে তার একখানা আঙ্গুল ডুবিয়ে দেয়, সে যেন লক্ষ্য করে যে ঐ আঙ্গুলের মাথায় কি পরিমাণ পানি উঠে আসে।
[মুসলিম শরীফ]
এখানে তিনি আঙ্গুলের মাথায় উঠে আসা পানিকে দুনিয়ার সাথে আর সাগরকে পরকালের সাথে তুলনা করেছেন। তাই মানুষ যদি পুরো দুনিয়ার সম্পদের মালিকও হয় সে ততটুকুই হাছিল করতে পারবে, যতটুকু আঙ্গুলের মাথায় পানি উঠে আসে। এই দুনিয়ায় যা দেয়া হয়েছে তা পরকালের তুলনায় খুবই সামান্য। বর্ণিত আছে, সর্বনিম্ন জান্নাতী যারা হবেন উনাদের প্রতিদান হবে এই দুনিয়ার মতো দশ দুনিয়া। মানুষ দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকার পরও দুনিয়ার সম্পূর্ণ সম্পদ লাভ করতে পারে না। তারপরও মানুষ এই দুনিয়ার পিছনেই মহামূল্যবান সময় ব্যয় করে যাচ্ছে। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি উপরোক্ত আয়াত শরীফের পরবর্তী অংশে ইরশাদ মুবারক করেন,
وَالْاٰخِرَةُ خَيْـرٌ لِّمَنِ اتَّـقٰى
যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করেন, উনাদের জন্য পরকালই উত্তম।
তাক্বওয়া মানে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করা। আর এটা তখনই সম্ভব হবে যখন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারকের ইত্তেবা বা অনুসরণ করা হবে। কারণ তাক্বওয়া অবলম্বন করতে হলে চিন্তা-ফিকির করতে হয় কোন কাজটা করা যাবে আর কোন কাজটা করা যাবে না। কিন্তু আমরা যখন আচার-আচরণ, স্বভাব-চরিত্র, চলাফেরা, উঠাবসা, খাওয়া-দাওয়া, পোশাক পরিচ্ছদ সর্বক্ষেত্রেই সুন্নত মুবারকের অনুসরণ করবো তখন আর এই চিন্তা-ফিকির করতে হবে না। আপসেআপ তাক্বওয়া অর্জন হয়ে যাবে। শুধু কষ্ট করে সুন্নতী ত্বরীকা জানতে হবে এবং আমল করতে হবে। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারকের বিপরীত হলো বিদয়াত। তাই একটি বিষয় সবসময় স্মরণ রাখতে হবে, যে সুন্নত মুবারক পরিত্যাগ করলো সে বিদয়াত জারি করলো আর যে সুন্নত মুবারক জারি করলো সে বিদয়াত দূর করলো আর প্রত্যেক বিদয়াত-ই গোমরাহী।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ غُضَيْفِ بْنِ الْـحَارِثِ الثُّمَالِـىِّ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا اَحْدَثَ قَـوْمٌ بِدْعَةً اِلَّا رُفِعَ ﴿৭৭﴾ سورة النساء
مِثْـلُهَا مِنَ السُّنَّةِ فَـتَمَسُّكٌ بِسُنَّةٍ خَيْـرٌ مِنْ اِحْدَاثِ بِدْعَةٍ. (رواه احمد)
হযরত গুদ্বাইফ ইবনুল হারিছি ছুমালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে সম্প্রদায় একটি বিদয়াতের উদ্ভব ঘটিয়েছে বা শুরু করেছে, তার অনুরূপ একটি সুন্নত বিলুপ্ত হয়েছে। অতঃপর একটি সুন্নত আঁকড়িয়ে ধরা একটি বিদয়াত উদ্ভব করা হতে বা শুরু করা হতে উত্তম।
[আহমাদ শরীফ]
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اَحْدَثَ فِىْ اَمْرِنَا هٰذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَـهُوَ رَدٌّ. (بـخاری شريف، مسلم شريف)
উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কেউ এমন একটি বিষয় উদ্ভাবন করলো বা শুরু করলো যা আমাদের (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার) এই দ্বীনে নেই, তা পরিত্যাজ্য।
[বুখারী ও মুসলিম শরীফ]
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنِ العِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى سورة الحشراللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِىْ فَسَيَـرٰى اِخْتِلَافًا كَثِيْـرًا فَـعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَ سُنَّةِ الْـخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّـيْـنَ تَـمَسَّكُوْا بِـهَا وَ عَضُّوْا عَلَيْـهَا بِالنَّـوَاجِذِ وَ اِيَّاكُمْ وَ مُـحْدَثَاتِ الاُمُوْرِ فَاِنَّ كُلَّ مُـحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَ كُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ. (رواه احمد)
হযরত ইরবাদ্ব ইবনে সারিয়াহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার পরে তোমরা যারা বেঁচে থাকবে, শীঘ্রই তারা অনেক মতবিরোধ দেখবে, অতএব তোমাদের জন্য আবশ্যক হবে আমার সুন্নত মুবারক এবং হিদায়েতপ্রাপ্ত খলীফাগণ উনাদের সুন্নত মুবারক দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরা। তোমরা নতুন উৎপত্তি বা নতুন কাজ থেকে বেঁচে থাকো, নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন উৎপত্তি বা নতুন কাজই বিদয়াত আর প্রত্যেক বিদয়াতই গোমরাহী।
[আহমাদ শরীফ]
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ اَبِىْ هُرَيْـرَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَـمَسَّكَ بِسُنَّتِىْ عِنْدَ فَسَادِ اُمَّتِىْ فَـلَهٗ اَجْرُ مِائَةِ شَهِيْدٍ. (رواه البيهقى شريف)
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের ফিতনা-ফাসাদের যুগে আমার একটি সুন্নত মুবারক আঁকড়িয়ে ধরবে তার জন্য থাকবে একশত শহীদের সওয়াব। সুবহানাল্লাহ!
[বাইহাক্বী শরীফ]
কাজেই, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে সুন্নত মুতাবিক জীবন পরিচালনা করার তাওফীক্ব দান করেন। (আমীন)
ইনশাআল্লাহ চলবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৯)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৩)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












