আকরামুল আউওয়ালীন ওয়াল আখিরীন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র রওযা শরীফ যিয়ারত করার ফযীলত, তারতীব ও আদব (১)
, ০৭ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৬ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ১৪ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ৩১ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
যারা পবিত্র হজ্জ করতে যাবে তাদেরকে প্রথমে পবিত্র মদীনা শরীফে গিয়ে সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা শরীফে গিয়ে পবিত্র সালাম মুবারক পেশ করাটা আদব। এটা পবিত্র হজ্জের গুরুত্বপূর্ণ আহকাম এবং আদবের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, হাজী ছাহেবদেরকে প্রথমে পবিত্র মক্কা শরীফে যাওয়ার ব্যাপারে বাধ্য করা হয়। আবার বর্তমানে এ নিয়ম জারী করা হয়েছে যে, কোন হাজী ছাহেব ৮ দিনের বেশী সময় পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থান করতে পারবে না। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ একজন মু’মিন-মুসলমানের জন্য আত্মার খোরাক, ঈমানের খোরাক হচ্ছেন পবিত্র মদীনা শরীফ। কারণ মু’মিনের নাজাত, শাফায়াত, দীদারে রসূল, দীদারে ইলাহী, রিদ্বায়ে রসূল, রিদ্বায়ে ইলাহী এক কথায় দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণের যিনি কেন্দ্রবিন্দু তিনিই অবস্থান করছেন পবিত্র মদীনা শরীফে। উনার পবিত্র রওযা মুবারকের প্রতি দৃষ্টি করা মাত্র মু’মিনের জন্য শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যায় এবং যতক্ষণ দৃষ্টি রত থাকে ততক্ষণ তার গুনাহখতা ঝরতে থাকে। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, যারা পবিত্র রওযা শরীফ যিয়ারত করতে যাবেন তাদেরকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যেনো কোন অবস্থাতেই পবিত্র রওযা শরীফ পিছনে না পড়ে। এটা চরম আদবের খিলাফ। আর বেয়াদব রহমত থেকে বঞ্চিত।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়া থেকে পর্দা করে যেখানে মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক দীদারে মশগুল আছেন সেই মহান স্থান মুবারক উনাকে মহাপবিত্র রওযা শরীফ বলে। যা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থিত। সম্মানিত রওযা শরীফ পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থিত থাকার কারণে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মর্যাদা-মর্তবা মুবারক লক্ষ কোটি গুণ বেশী। একই কারণে যমীনের মর্যাদা মুবারক আসমানের থেকে লক্ষ কোটি গুণ বেশি।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اُمِرْتُ بِقَرْيَةٍ تَأْكُلُ الْقُرَى يَقُوْلُوْنَ اليَثْرِبُ. وَهِىَ الْمَدِيْنَةُ تَنْفِي النَّاسَ كَمَا يَنْفِي الْكِيْرُ خَبَثَ الْـحَدِيْدِ.
অর্থ: “আমি এমন একটি শহরে হিজরত করার জন্য আদেশ মুবারক প্রাপ্ত হয়েছি যেই শহরটি অন্যান্য সমস্ত শহরকে সমস্ত দেশকে গ্রাস করে ফেলবে। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ এই পবিত্র মদীনা শরীফ থেকেই পৃথিবীতে হিদায়েতের কাজ হবে। লোকেরা এই শহরকে ইয়াছরিব বলে থাকে। এটি হচ্ছে পবিত্র মদীনা শরীফ। তা অবাঞ্ছিত লোকদেরকে এমনভাবে বহিষ্কার করে দেয়, যেমনভাবে কামারের হাঁপর লোহার মরিচা দূর করে দেয়। অর্থাৎ এই পবিত্র মদীনা শরীফ মানুষদেরকে এত পূতঃপবিত্র করবে একজন শিশু ভূমিষ্ট হলে যেমন নিষ্পাপ থাকে অনুরূপ নিষ্পাপে পরিণত করবে। সুবহানাল্লাহ!” (বুখারী শরীফ: ১৮৭১)
আর তাই পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পবিত্রতা সম্পর্কে ইজমা হয়েছে, সমস্ত ইমামগণ একমত পোষণ করেছেন যা বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব ‘রদ্দুল মুহতার (শামী)’ কিতাবে ৩য় খ-ে বাবুয্ যিয়ারাহ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-
اِنَّ التُّرْبَةَ الَّتِىْ اِتَّصَلَتْ اِلٰى اَعْظُمِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَفْضَلُ مِنَ الْاَرْضِ وَالسَّمَاءِ حَتَّى الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই যে মাটি মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জিসিম মুবারক উনার সাথে লেগে রয়েছেন, তা যমীন ও আসমানের সমস্ত কিছু থেকে ফযীলতপূর্ণ। এমনকি সুমহান আরশে আযীম উনার থেকেও ফযীলতপূর্ণ। ” সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত রওযা শরীফ যিয়ারত এবং উনার থেকে রূহানী ফুয়ূজাত, বারাকাত, নিয়ামত মুবারক লাভ করতে হলে কতগুলো বিষয়ে ইলিম অর্জন করা অবশ্যই জরুরী। সর্বপ্রথম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাক্বামাত মুবারক, দারাজাত মুবারক, ফযীলত মুবারক, নৈকট্য মুবারক ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কিত ইলিম অর্জন করা। অতঃপর হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা পর্যন্ত উনার উম্মত হতে চেয়েছেন সে বিষয় সম্পর্কে ইলিম অর্জন করা।
আর পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও অন্যান্য আসমানী কিতাবসমূহে উনার গুণাবলী, বৈশিষ্ট্য, মর্যাদা ও উচ্চতর দারাজাত মুবারক এবং খলক্বিল্লাহ ও উম্মতের প্রতি দয়া মুবারক, ইহসান মুবারক ইত্যাদি বিষয়ে ইলিম হাছিল করা দরকার।
এছাড়া নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ, সীরাতগ্রন্থ পাঠ, মদীনা শরীফ, মসজিদে নববী শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত উনার পবিত্র রওযা শরীফ যিয়ারত করার ফযীলত সম্পর্কিত পবিত্র আয়াত শরীফ-হাদীছ শরীফগুলো সম্পর্কে ব্যাপক ইলিম থাকা দরকার। কেননা, যে বিষয়টি সম্পর্কে আমল করবে সর্বপ্রথম সে বিষয়টি সম্পর্কে ইলিম অর্জন করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য হাছিলের ইলিমটি থাকলে আত্মায় জযবা, হাল পয়দা হয়। আর জযবা বা আকর্ষণ থাকলেই উদ্দিষ্ট বস্তুটি লাভ করা সহজতর হয়। সুবহানাল্লাহ! (চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত আব্বাদ ইবনে বিশর ইবনে ওয়াকাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৩)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা কবীরা গুনাহ ও অসন্তুষ্টির কারণ
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বক্ষেত্রে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে নেয়াই ঈমানদারের পরিচয়
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কদমবুছী করা খাছ সুন্নত মুবারক
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত আব্বাদ ইবনে বিশর ইবনে ওয়াকাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (১)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর (২)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বেপর্দা সর্বপ্রকার অনিষ্ট ও ফিতনা-ফাসাদের মূল
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে মুসলমান যে বিজাতীয় সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখবে, তাদের সাথেই তার হাশর নশর হবে
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












