নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে অবমাননাকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (২)
, ১৭ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৭ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ১৬ মে, ২০২৫ খ্রি:, ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

কাফিল পাদ্রীর ভয়াবহ পরিণতি:
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে- হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রধান কাতিব ছিলো কাফিল পাদ্রী। সে পবিত্র তাওরাত শরীফ লিপিবদ্ধ করতো। একদিন সে লক্ষ্য করলো- সম্পূর্ণ পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মধ্যে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক থেকে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় নাম মুবারক অনেক বেশি আলোচিত হয়েছেন, অনেক বেশি উল্লেখ রয়েছেন। তখন তার অন্তরে হিংসা পয়দা হলো এবং সে মনে মনে চিন্তা করলো- হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি হলেন আমাদের সম্মানিত নবী-রসূল, যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা বলেন। উনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নবী আর কে হতে পারেন? না‘ঊযুবিল্লাহ! আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় নাম মুবারক হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক থেকে অনেক বেশি আলোচিত হবে, অনেক বেশি উল্লেখ থাকবে এটা কেমন কথা? এটা চিন্তা করে কাফিল পাদ্রী সম্পূর্ণ পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মধ্য থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় নাম মুবারক কেটে দিলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! সাথে সাথেই তার উপর কঠিন লা’নত বর্ষিত হলো। সে একটি বড় গুঁই সাপে পরিণত হয়ে গেলো। তখন সে চিন্তা করলো- এই অবস্থায় যদি কেউ তাকে দেখে ফেলে, তাহলে গুঁই সাপ মনে করে মেরে ফেলবে। তাই সে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে পালিয়ে ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গলে যেয়ে আশ্রয় নিলো। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি কাফিল পাদ্রীকে দেখতে না পেয়ে তার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করা হলো; কিন্তু পাওয়া গেলো না। অতঃপর হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত তুর পাহাড়ে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা মুবারক বলতে যাবেন, এমন সময় হঠাৎ তিনি দেখলেন সামনে একটা বড় গুঁই সাপ। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে দেখে সে সালাম দিলো। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘কে তুমি?’ তখন সে তার পরিচয় দিয়ে বললো- সে হচ্ছে কাফিল পাদ্রী। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘তোমার এই অবস্থা হলো কেনো’ সে বললো- ‘আমি চরম বেয়াদবী করেছি।’ তারপর হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট সে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বললো এবং তওবা-ইস্তিগফার করতে থাকলো। সে বার বার বলতে থাকলো- ‘আমি বুঝতে পারিনি। আমি চরম বেয়াদবী করেছি। আমি খালিছভাবে তওবা-ইস্তিগফার করতেছি। আপনি দয়া করে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আমার জন্য একটু সুপারিশ করুন। মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন।’ তখন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন- ‘তুমি সর্বনাশ করেছো, চরম বেয়াদবী হয়েছে। তোমার জন্য সুপারিশ করাও অত্যন্ত কঠিন। ঠিক আছে; তুমি যেহেতু বার বার তওবা-ইস্তিগফার করতেছো, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট তোমার জন্য সুপারিশ করবো।’ অতঃপর হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে জরুরী কথা মুবারক বলা শেষ করে কাফিল পাদ্রীর চরম বেয়াদবীর কথা এবং সে লা’নতগ্রস্ত হয়ে গুঁই সাপে পরিণত হওয়ার বিষয় পেশ করে বললেন- ‘আয় বারে ইলাহী! কাফিল পাদ্রী চরম বেয়াদবী করেছে। সে বুঝতে পারেনি। এখন সে খালিছভাবে তওবা-ইস্তিগফার করতেছে। আপনি দয়া করে তার ক্ষমার একটা ব্যবস্থা করে দিন।’ মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন- ‘সে চরম বেয়াদবী করেছে। সে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নয়। তবে আপনি যেহেতু তার জন্য সুপারিশ করছেন, তাই আমি তাকে একটা সুযোগ দিচ্ছি। সরাসরি আমার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তিনি যদি দয়া করে তাকে ক্ষমা করে দেন, তাহলেই শুধু সে ক্ষমা লাভ করবে; অন্যথায় তার ক্ষমা লাভের কোনো ব্যবস্থা নেই।’ তখন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন- ‘বারে ইলাহী! আপনার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো এখনো যমীনে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেননি। উনার সম্মানিত ছোহবত মুবারক সে পাবে কিভাবে? আপনি দয়া করে তার হায়াত বৃদ্ধি করে দিন। যাতে উনার নিকট সে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারে।’ মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, ‘ঠিক আছে; আমি তার হায়াত বৃদ্ধি করে দিলাম।’ অতঃপর গুঁই সাপ রূপী কাফিল পাদ্রী মিশর থেকে হেঁটে হেঁটে মহাসম্মানিত মক্কা শরীফ উনার আবূ কুবায়েছ পাহাড়ে এসে আশ্রয় নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক উনার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো। তিনি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলে উনার সম্মানিত ছোহবত মুবারক লাভ করবে এবং উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, সেজন্য সে অপেক্ষা করছিলো। যথাসময়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। (চলবে)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬৫)
২৫ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দ্বীন ইসলাম ব্যতিত অন্য কোন তন্ত্র-মন্ত্র নিয়মনীতি শরীয়তসম্মত নয়
২৫ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মু’মিনদের আত্মশুদ্ধির এক বিরাট পাথেয় সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনার প্রতি ইমামুল আউওয়াল, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার অসীয়ত মুবারক
২৫ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে গরুর গোস্ত শি‘আরুল ইসলাম (১২)
২৫ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা সর্বপ্রকার বিপদ-আপদ থেকে হিফাজত হওয়ার মাধ্যম
২৫ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উম্মাহর মাঝে শ্রেষ্ঠতম মর্যাদায় আসীন
২৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
উম্মতকে তা’লীম দানের উদ্দেশ্যে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সুওয়াল মুবারক এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনার জবাব মুবারক
২৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইনশাল্লাহ মুসলমানগণই স্বাবলম্বী হবেন
২৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বেপর্দা হওয়া লা’নত ও হালাকীর কারণ
২৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ভোট, নির্বাচন, পদপ্রার্থী হওয়া ইত্যাদি কোনটিই জায়িয নেই
২৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)