নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে অবমাননাকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩)
, ২৪ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৪ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ২৩ মে, ২০২৫ খ্রি:, ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কাফিল পাদ্রীর ভয়াবহ পরিণতি:
অতঃপর আনুষ্ঠানিকভাবে রিসালাত মুবারক প্রকাশের পর একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফ করছিলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য গুঁই সাপ রূপী কাফিল পাদ্রী আবূ কুবায়েছ পাহাড় থেকে নেমে কাট্টা কাফির আবূ জাহিলের বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো। পথিমধ্যে হঠাৎ আবূ জাহিল ঘর থেকে বের হয়ে দেখলো একটি বড় গুঁই সাপ। সে একটি লাঠি নিয়ে গুঁই সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেললো।
অতঃপর তাকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে ঐ ছাইগুলি একটি কাপড়ের মধ্যে পোটলা করলো। তারপর সে এই পোটলা নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গিয়ে বললো, ‘বলুন তো এই কাপড়ের পোটলার ভিতরে কি রয়েছে? যদি আপনি বলতে পারেন, তাহলে আমি ঈমান আনবো।’
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ‘আমি না বলে ঐ কাপড়ের পোটলার ভিতরে যে আছে, সে যদি বলে, তাহলে কি তুমি ঈমান আনবে?’ আবূ জাহিল বললো, ‘হ্যাঁ; তাহলে আমি ঈমান আনবো।’ তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
قُمْ بِاِذْنِ اللهِ يَا كَافِلُ
‘হে কাফিল পাদ্রী! তুমি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে জিন্দা হয়ে যাও।’ সুবহানাল্লাহ!
সাথে সাথে কাফিল পাদ্রী একটা যিন্দা মানুষের ছূরত ধারণ করে কাপড়ের পোটলা থেকে লাফ দিয়ে নেমে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ পাঠ করলো এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক-এ (ক্বদম মুবারক-এ) লুটিয়ে পড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকলো। সুবহানাল্লাহ!
এদিকে আবূ জাহিল স্বচক্ষে এই দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে এক দৌড়ে অনেক দূরে গিয়ে বলতে লাগলো, ‘আমি অনেক বড় বড় জাদুকর দেখেছি; কিন্তু আপনার মতো এতো বড় জাদুকর আর দেখিনি। আপনার মতো জাদুকর আর একজনও নেই।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! আর কাফিল পাদ্রী যে চরম বেয়াদবী করেছে, সেটা সে স্বীকার করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে তিনি কাফিল পাদ্রীকে ক্ষমা করে দেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর কাফিল পাদ্রী ছাহাবীয়তের মর্যাদা লাভ করে সম্মানিত ঈমানের সাথে ইন্তিকাল করেন। সুবহানাল্লাহ!
এখানে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে বেয়াদবী করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটা কখনোই বরদাশ্ত করেন না। তবে সে যদি সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ক্ষমা চাইতে পারে তাহলে সে ক্ষমা পেতে পারে। অন্যথায় কস্মিনকালেও সে ক্ষমা পাবে না, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে কখনো ক্ষমা করবেন না।
আবূ লাহাবের ভয়াবহ পরিণতি:
আবূ লাহাব তার উপনাম। প্রকৃত নাম আব্দুল উয্যা বা উয্যার দাস। সে ছিলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আপন চাচা। শুধু চাচাই ছিলো না; নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটতম প্রতিবেশীও ছিলো সে। কিন্তু এই চির মালঊন লোকটা ছিলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চরম শত্রু। এমন কোনো দিক নেই, যে দিক থেকে সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়ার চেষ্টা করেনি। তার শত্রুতা শুরু হয় যেভাবে; মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِيْنَ
অর্থ: অতএব আপনি আদিষ্ট বিষয়সমূহ প্রকাশ্যে প্রচার করুন এবং মুশরিকদেরকে কোনো পরওয়া করবেন না। (পবিত্র সূরা হিজর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯৪)
এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
وَأَنذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْأَقْرَبِيْنَ
অর্থ: আপনি নিকটতম আত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন। (পবিত্র সূরা শুআরা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৪)
মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিন সকালবেলা ছাফা পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ মুবারক করেন। এবং প্রত্যেক গোত্রের নাম ধরে ধরে আহবান মুবারক করতে থাকেন। যেটা পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে- হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই পবিত্র আয়াত শরীফ (وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الأَقْرَبِينَ) নাযিল হলেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ছাফা (পর্বতে) আরোহণ মুবারক করলেন এবং এই বলে আহবান করতে লাগলেন-
يَا بَنِيْ فِهْرٍ يَا بَنِيْ عَدِيٍّ
‘হে বনী ফিহর! হে বনী আদী! এভাবে কুরাইশদের বিভিন্ন গোত্রকে ডাকতে থাকলেন। অবশেষে তারা একত্রিত হলো। যে নিজে আসতে পারল না, সে তার প্রতিনিধি পাঠালো, যাতে দেখতে পায়, ব্যাপার কি? সেখানে আবূ লাহাব ও কুরাইশগণও আসলো। (চলবে)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












