নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে অবমাননাকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৫)
, ০৯ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৭ আউওয়াল, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৬ জুন, ২০২৫ খ্রি:, ২৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

আবূ লাহাবের ভয়াবহ পরিণতি:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চরম দুশমন, আবূ লাহাব কতটা নিকৃষ্ট ছিলো তা নিচের একটি ঘটনা দ্বারা কিছুটা অনুমান করা যায়।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যারা মহাসম্মানিত আবনা অর্থাৎ ছেলে আওলাদ আলাইহিমুস সালাম ছিলেন উনারা প্রত্যেকে দুনিয়াবী অল্প হায়াত মুবারকেই বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। উনাদের এই অল্প হায়াত মুবারকে বিছাল শরীফ গ্রহণ করার কারণে কাট্টা কাফির আবূ লাহাব সেতো কোনো দুঃখ প্রকাশ করেইনি; বরং সে খুশি হয়ে কুরাইশদেরকে একত্রিত করে বলতে লাগলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নির্বংশ হয়ে গেছেন। নাঊযুবিল্লাহ! পৃথিবীতে উনার নাম মুবারক নেয়ার মতো কেউ নেই। এসব বলে সে আনন্দ-ফুর্তি করতে লাগলো। তার এই কটুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ নাযিল হন। মহান আল্লাহ পাক তিনি এই পবিত্র সূরা শরীফ উনার শেষে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন-
إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْـتَـرُ
অর্থ: (আমার মহাসম্মানিত হাবীব মাহবূব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রকৃতপক্ষে) আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক বিরোধীরাই নির্বংশ তথা লাঞ্চিত ও অপমানিত। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)
বাস্তবে সেটাই ঘটেছিলো। যারাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দিয়েছে, উনার শান মুবারকের খিলাফ করেছে তারাই নির্বংশ হয়ে গেছে, ধ্বংস হয়ে গেছে।
দ্বিতীয় হিজরীতে অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র বদর জিহাদ। কুরাইশদের সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো, প্রত্যেক পরিবারের দুজন কুরাইশের মধ্যে অন্তত একজনকে যুদ্ধে যেতেই হবে। তাদের নেতৃস্থানীয় অনেকেই যুদ্ধে যোগদান করতে ইতস্ততবোধ করছিলো। কিন্তু চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত যেতে হলো সবাইকে। একমাত্র আবূ লাহাব গেলো না। তার অন্তরে বদ্ধমূল বিশ্বাস জন্মে গিয়েছিলো যে, যুদ্ধে গেলে তার মৃত্যু অনিবার্য! তাই হাড়কিপ্টে এই লোকটি বহু অর্থ খরচ করার বিনিময়ে আছ ইবনে হিশামকে যুদ্ধে প্রেরণ করলো।
আছ ইবনে হিশাম একবার আবূ লাহাবের নিকট থেকে চার হাজার দিরহাম ঋণ গ্রহণ করে। এরপর সে দেউলিয়া হয়ে যায়। ঋণ পরিশোধের মতো কোনোকিছুই আর অবশিষ্ট ছিলো না তার। পবিত্র বদর যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলে পলায়নপর সুযোগসন্ধানী আবূ লাহাব তাকে বললো, আমার হয়ে যুদ্ধে গেলে তোমার চার হাজার দিরহাম ঋণ আমি মওকুফ করে দিবো। তার কথামত আছ ইবনে হিশাম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঋণ শোধ করতে সম্মত হয়ে কাপুরুষ আবূ লাহাবের পক্ষে পবিত্র বদর যুদ্ধে যোগদান করলো।
কিন্তু ঘরের নিরাপদ আশ্রয়ে বন্দি হয়ে থাকলেই কি মহান বিচারকের বিচার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? পবিত্র বদর যুদ্ধের সমাপ্তির পর পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে আবূ লাহাবকে পরাজিত কুরাইশদের দুরাবস্থার বর্ণনা দিচ্ছিলেন হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। (তিনি তখনো সম্মানিত ঈমান গ্রহণ করেননি। ) সেখানে উপস্থিত ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত চাচা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আহলিয়া হযরত উম্মুল ফযল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি এবং উনাদের গোলাম হযরত আবূ রাফে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। (উনারা তখন গোপনে সম্মানিত ঈমান গ্রহণ করেছিলেন। ) স্বল্প সংখ্যক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিকট বিশাল কুরাইশ বাহিনীর পরাজয় বর্ণনার এই অংশটি শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে হযরত আবূ রাফে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলে উঠলেন উনারা ফেরেশতা ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এ মন্তব্যে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি সমর্থনের গন্ধ পেয়ে ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠে আবূ লাহাব। সজোরে এক থাপ্পর মারে সে হযরত আবূ রাফে’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে। হযরত আবূ রাফে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মাটিতে পড়ে যান। তিনি কোনরকম উঠে আবূ লাহাবের সাথে কুস্তি ধরেন। কিন্তু আবূ লাহাব উনাকে উঠিয়ে যমীনের মধ্যে সজোরে আছাড় মারে এবং উনার বুকের উপর উঠে বসে। হযরত উম্মুল ফযল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি এই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে একটি কাঠের টুকরো এনে সজোরে আঘাত করলেন আবূ লাহাবের মাথায়। আঘাতের তীব্রতায় তার মাথা ফেটে এক বীভৎস আকার ধারণ করলো। তাকে কঠিনভাবে তিরস্কার করতে করতে হযরত উম্মুল ফযল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন, ‘উনার মুনীবের অনুপস্থিতি দেখলেই তুই উনাকে দুর্বল মনে করিস!’ এরপর লাঞ্চনা, অপমান আর গ্লানি নিয়ে সেখান থেকে জাহান্নামের কীট আবূ লাহাব চলে যায়।
এভাবেই কেটে গেল বেশ কয়েকদিন। কিন্তু সে জানতো না, এখানেই তার শেষ নয়; নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেওয়ার, উনার শান মুবারকে বেয়াদবী করার, উনার অবমাননা করার মূল পাওনা তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে চলছে। যা অত্যন্ত ভয়ংকর! খুবই লাঞ্চনাকর! (চলবে)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
উলামায়ে সূ’ ধর্ম ব্যবসায়ীদের পরিচিতি ও হাক্বীক্বত (৮)
১৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
১৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, হিন্দুদের পূজায় গিয়েছে, তাদেরকে পূজা করতে সাহায্য-সহযোগীতা করেছে, সমর্থন করেছে, সম্মতি প্রকাশ করেছে, তাদের সাথে মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করেছে, তাদেরকে সম্মান করেছে, তা’যীম করেছে, তাদের সম্পর্কে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করেছে এবং সম্মানসূচক শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছে, বাহ বাহ দিয়েছে এবং বেশী বেশী মূর্তি তৈরি করতে বলেছে এবং বেশী বেশী পূজা করতে বলেছে তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (২৯)
১৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামীন, রঊফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ শান মুবারক ‘আছবারুছ ছবিরীন’ (২)
১৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাদীছ শরীফে আরব দেশ থেকে ইহুদী-নাছারা তথা সমস্ত কাফির-মুশরিকদেরকে বের করে দেয়ার ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী রয়েছে
১২ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নামাযে মহান আল্লাহ পাক ও বান্দার মাঝে কথোপকথন
১২ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
১২ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)