নৌ-পথ পরিত্যাগে জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি
, ২৫ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ২৩ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) আপনাদের মতামত
![নৌ-পথ পরিত্যাগে জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি](https://www.al-ihsan.net/uploads/1712261727_-পথ.jpg)
একটা সময় নদীর পাড়গুলোকে কেন্দ্র করে সভ্যতা তৈরী হতো। নদীর পাড়ে বসতো হাট-বাজার, বন্দর। আর তার পাশেই তৈরী হতো জনবসতি। কিন্তু বর্তমানে আমরা নদীপথকে পরিত্যাগ করেছি। লঞ্চঘাটে লঞ্চ বসে আছে, যাত্রী নাই। নদীতে আগে যেমন নৌকা দেখা যেতো, এখন তেমন নৌকাও দেখা যায় না। নদীগুলো যেন জনবিচ্ছিন্ন, খা খা করছে। নদীর পাড়ে বাজার বা কলকারখানা থাকলে নদী দূষণ হবে, এই অজুহাতে নদী পাড় থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে অর্থনীতি। এতে নদীর স্থান হয়েছে ক্ষেতের পাড়ে, মাঠের কোনায়, যেখানে মানুষের যাতায়াত নেই বললেই চলে। অপরদিকে সড়ক-মহাসড়কে বাস-ট্রাক স্ট্যান্ডকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে হাট, বাজার, কলকারখানা ও জনবসতি। সেখানেই মানুষের সেখানে প্রচ- ভীড়।
এই যে আমাদের নদীগুলো জনশূণ্য হচ্ছে, এটাই একটা খারাপ বিষয়। দ্রব্যমূল্য যে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এর পেছনে আমাদের নদীত্যাগী নীতি দায়ী। আগে নদী পথে খাদ্যদ্রব্যসহ যাবতীয় পরিবহন ঘটতো। এখন সেটা সড়ক পথে যাচ্ছে। কৃষক কমমূল্য শস্য বিক্রি করছে, কিন্তু সড়ক পথে অতিরিক্ত বহন খরচে দাম বৃদ্ধি পেয়ে জনগণের কাছে পৌঁছাচ্ছে।
আসলে, যাতায়াতের মূল মাধ্যম হলো ৪টি। নৌ, রেল, সড়ক ও আকাশ। এর মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল হলো আকাশপথ। এরপর সড়ক, তারপর রেল এবং সবচেয়ে সস্তা হলো নৌপথ। নৌপথে পণ্য বা যাত্রী পরিবহন অনেক সস্তা। কারণ নৌপথ পানি দিয়ে তৈরী, অনেক বড় বিস্তৃত, তেল খরচও কম লাগে। অনেক বেশি পণ্য ও যাত্রী বহন করা যায়। ফলে গড় খরচ অনেক কম পরে।
কিন্তু সড়ক পথ ব্যয়বহুল জমিতে তৈরী করতে হয়, অতঃপর সেখানে পিচ ঢেলে রাস্তা বানাতে হয়। এক লেন, দুই লেন, ৪ লেন, ৮ লেন এভাবে খরচ বাড়তেই থাকে। এরপর সেখানে যে ট্রাক-বাস চলে তার দামও বেশি। তেল খরচও বেশি। কিন্তু সড়কপথে একটি বাহনে খুব বেশি পণ্য বা যাত্রী বহণ করা যায় না। ফলে খরচ অনেক বেড়ে যায়। তাছাড়া সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ মিলিয়ে বেশ খানিকটা পরে। এছাড়া সড়ককে নিরবিচ্ছিন্ন করতে সেতু বানাও, ব্রীজ বানাও, ফ্লাইওভার বানাও, টানেল বানাও, এক্সপ্রেসওয়ে বানাও। এরপর সেগুলোর টোল দাও। সব মিলিয়ে খরচ বেশ কয়েকগুন বেড়ে যায়।
আসলে নৌ-পথ মানেই হচ্ছে আন্তর্জাতিক পথ, নৌ-পথ নদী হয়ে সাগরে, সাগর থেকে এক দেশ থেকে অন্য দেশে সংযুক্ত। বড় বড় আন্তর্জাতিক পরিবহনগুলো নৌ পথেই ঘটে। কিন্তু আমরা সড়ক পথ যতই ব্যবহার করি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রূটে সংযুক্ত হতে আমাদের নৌরূটেই সংযুক্ত হতে হয়। এজন্য দেশ থেকে কোন পণ্য বিদেশে রফতানি করতে চাইলে দেশের ভেতর সড়ক পথ ব্যবহার যেমন তার খরচ বাড়িয়ে দেয়, তেমনি বিদেশ থেকে কোন পণ্য আমদানি করলে দেশের ভেতর সড়ক পথের ব্যবহার তার দাম বাড়িয়ে দেয়। এজন্য দেশের ভেতর অত্যধিক সড়ক নির্ভরতা আমাদের সবকিছুর দাম বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে তুলছে।
মূলতঃ বর্তমানে আমাদের দেশ যে পলিসিতে চলতেছে তাতে সরকারের সড়ক পথে রয়েছে শতভাগ দৃষ্টি। জনগণকে সড়ক পথ দিয়ে সংযুক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু নৌপথের প্রতি কোন দৃষ্টি নেই। অবহেলায় নদীগুলোর এখন বেহাল দশা। বরং যে নৌপথে যাতায়াত ছিলো সেখানেও সড়ক পথ তৈরী করে যাত্রীদের সড়কের নিয়ে আসা হয়েছে। আপনি যদি বাজেটের দিকে তাকান তবে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। প্রচুর অর্থ খরচ করে সড়ক, মহাসড়ক, ফ্লাইওভার, টানেল, এক্সপ্রেসওয়ে বানানো হচ্ছে, যা খুবই ভয়ঙ্কর একটা বিষয়।
দৃশ্যত্ব অনেকের কাছে মনে হতে পারে, সড়ক পথ বৃদ্ধিতে যাতায়াত সুবিধা হয়েছে, সময় বেঁচে গেছে। কিন্তু আসলে বিষয়টি এমন না। সড়কপথে যে পরিমাণ রাষ্ট্রীয় দৃষ্টি দেয়া হয়েছে তার বিন্দুমাত্র যদি নৌ পথে দেয়া হতো, তবে নৌপথকে আরো বেশি সমৃদ্ধশালী করা সম্ভব ছিলো। সেখানেও সুবিধা আসতো, সময় বাঁচতো। বিশেষ করে, সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে যদি প্রচুর পরিমাণে নৌ-বন্দর করা, ঘাট করা, নৌ বাহন যেমন- জাহাজ, লঞ্চ, স্টিমার, স্পিডবোড, ফেরী, নৌকা নামানো হলে অনেক কিছু সহজ হতো। নদীগুলোতে নিয়মিত ড্রেজিং করে চালু রাখা, বন্ধ নৌ পথগুলোকে সচল করা, বিভিন্ন নৌরূট তৈরী করার মাধ্যমে নৌপথকে যদি চালু করা যেতো, তবে শুধু পরিবহন খরচ বাঁচতো এমন নয়, বরং সময়ও বাঁচতো এবং যাতায়াতও আরামদায়ক হতো। বর্তমানে সড়ক পথে এক স্থান থেকে অন্যস্থান যেতে যে সময় লাগে যদি নদীপথ ঠিকমত ব্যবহার করে দ্রুতগামী নৌ-বাহন (যেমন স্পিডবোট) দিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো, তবে তার অর্ধেক সময় লাগতো।
একটা বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, অনেক বিদেশী কোম্পানি চাইবে আমরা যেন নদী পথের থেকে সড়ক পথের দিকে ঝুঁকে যাই। কারণ আমরা যত সড়ক পথের দিকে ঝুঁকবো তত তাদের লাভ। এজন্য বিদেশীরাই আমাদের সড়কপথের উন্নয়নে ঋণ সুবিধা দিবে। কারণ সড়ক পথ বাড়লে তাদের গাড়ি বা গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রি বাড়বে। আবার পশ্চিমা ফান্ডিং করা এনজিওগুলো পরিবেশের কথা বলে, নদীর পাড় থেকে সব কিছু সরিয়ে নিতে চায়, নদী থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। কারণ পরিবহন যত সড়ক নির্ভর হবে, তত বেশি জ্বালানি খরচ হবে। আর জ্বালানি যত খরচ হবে, জ্বালানি তত বেশি আমদানি করতে হবে। আর যত বেশি জ্বালানি আমদানি করা হবে, তত বেশি আমেরিকান ডলার কিনতে হবে। আর যত বেশি আমরা ডলার কিনবো, তত বেশি আমেরিকান সম্রাজ্যবাদ শক্তিশালী হবে।
এজন্য সড়ক পথে দৃশ্যত্ব আপনি যত লাভই দেখুন, বাস্তবতা হলো সড়ক পথ মানেই সবকিছুর খরচ বৃদ্ধি। সবকিছুর খরচ বৃদ্ধি মানে, আগে আপনি একজন ইনকাম করে সংসার চালাতে পারতেন, আরো দুটো সংসারের হাল ধরতে পারতেন। কিন্তু এখন আপনার সংসার চালাতে স্বামী-স্ত্রী দুইজনকেই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়।
-মুহম্মদ মুহিউদ্দিন রাহাত।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আধুনিকায়নের নামে আমরা গিনিপিক হতে চাই না
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অবশ্যই সে বিশ্বের সবচাইতে ঘৃণিতদের একজন!
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুসলমানতো সদা-সর্বদা দ্বীন ইসলাম পালন করবে
২৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
উত্তম চরিত্রের অনুপম আদর্শ-একজন বিধর্মীর দ্বীন ইসলাম গ্রহণ
১৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুহররমুল হারাম মাস উনার বরকতপূর্ণ আমল সম্পর্কে মুসলমানরা পুরোই বেখবর
১৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাবধান ! আপনার সন্তান কি শিখছে খবর রাখুন (২)
১৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাবধান ! আপনার সন্তান কি শিখছে খবর রাখুন (১)
১৪ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পিতা-মাতা উনাদের প্রতি সন্তানের কর্তব্য
১৩ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কোনটা করলে মুসলমান থাকে আর কোনটা করলে কাফির হয়- তা কি আজ মুসলমান জানে?
১২ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সন্ত্রাসীদের বইকে ‘জিহাদী বই’ না বলে ‘সন্ত্রাসী বই’ বলতে হবে
১১ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানদের জন্য পবিত্র ঈমান রক্ষার জন্য ফান্ড তৈরি করা উচিত
১০ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আপনার শিশুকে আজই চিনিয়ে দিন তার প্রধান শত্রু “কে”
০৯ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)