পতিতালয়, নারী পাচার ও অপহরণের নেপথ্যের কারণ উদঘাটন ও বিশ্লেষণ এবং তা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে: পর্ব-৩
, ২৭ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২০ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ২০ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ০৬ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) মহিলাদের পাতা
(গত ২০ শা’বান শরীফের পর)
এছাড়াও বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮ (২) এ বলা হয়েছে- গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
অন্যদিকে, জবরদস্তি-শ্রমও নিষিদ্ধ করা হয়েছে সংবিধানে। সংবিধানের তৃতীয় ভাগের ‘মৌলিক অধিকার’ অধ্যায়ে বর্ণিত ৩৪ (১) এ বলা হয়েছে- সকল প্রকার জবরদস্তি-শ্রম নিষিদ্ধ; এবং এই বিধান কোনোভাবে লংঘিত হইলে আইনত দ-নীয় অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে।”
উপরে উল্লেখিত পত্রপত্রিকার বিবরণ, তথ্য-উপাত্ত এবং বিভিন্ন পত্রিকার সাক্ষাতকারে যৌনকর্মীদের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে স্পষ্টই প্রমাণ হয়েছে যে- কোনো যৌনকর্মী-ই স্বেচ্ছায় এই পেশায় আসেনি, বরং তাকে এই পেশায় জবরদস্তি করে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ পতিতালয় এবং পতিতাবৃত্তি সংবিধানের ৩৪ (১) এ বর্ণিত মৌলিক অধিকার লংঘন।
এখন বলার বিষয় হচ্ছে- যেখানে আমাদের সংবিধান রাষ্ট্রকে পতিতাবৃত্তি নিরোধ করতে বলেছে, সকল প্রকার জবরদস্তি-শ্রম নিষিদ্ধ করেছে এবং হাইকোর্টের নির্দেশনা পযন্ত রয়েছে সেখানে পতিতাবৃত্তি কেন এখনও বন্ধ হয় না?
তাছাড়া দেশে সম্ভ্রমহানীর কোনো ঘটনা ঘটলে একটা শ্রেণী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পতিতাবৃত্তি বাড়াতে হবে ইত্যাদি কথা বলে থাকে। ঐ শ্রেণীটি হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে প্রকাশ্যে পতিতাবৃত্তির মত জবরদস্তিমূলক ও অমানবিক পেশাটিকে টিকিয়ে রাখা ও এটা বৃদ্ধির কথা কীভাবে বলে? এসব লোকদের কেন চিহ্নিত করা হচ্ছে না কেন? কারণ পতিতাবৃত্তি বৃদ্ধির কথা যারা বলে তারা একদিকে যেমন বদচরিত্রের, অন্যদিকে তারা নারী পাচার ও অপহরণের সাথেও জড়িত থাকার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
একটু গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, পতিতালয় থাকা মানে নারী পাচারকে টিকিয়ে রাখা, কারণ প্রত্যেক পতিতালয়ের সর্দারনীর সাথে নারী পাচারকারীদের যোগসাজস ও চুক্তি থাকে। পতিতালয়ের উপস্তিতির অর্থই হচ্ছে নারী পাচারকারী কর্তৃক নারীদের সাথে প্রতারনাকে টিকিয়ে রাখা, কারণ যৌন পল্লীতে অবস্থানরত প্রায় প্রত্যেক নারী-ই কোনো না কোনো দালালের প্রতারনার শিকার হয়ে অন্ধকার জগতের দেহ ব্যবসায়ী হতে বাধ্য হয়েছে। পতিতালয় থাকার অর্থই হচ্ছে নারীর উপর জবরদস্তি শ্রমকে টিকিয়ে রাখা, কারণ যৌন ব্যবসায় কোনো নারীই স্বেচ্ছায় আসেনি, বরং তাকে জোর করে বাধ্য করা হয়েছে এই পেশায় আসতে।
এখন কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, পতিতাবৃত্তি যদি জবরদস্তি শ্রম হয় তাহলে পতিতারা নিজেরাই কেন পতিতালয় ও পতিতাবৃত্তি টিকিয়ে রাখতে চাচ্ছে?
এর কারণ দুইটা। প্রথমত: দেশী-বিদেশী কিছু এনজিও যারা মূলত নারী স্বাধীনতা ও অধিকারের নামে সমাজে অশ্লীলতা ও নারীকে পণ্যের মত ব্যবহার করে থাকে তারা পতিতাবৃত্তি পেশাটিকে টিকিয়ে রাখবার জন্য পতিতালয়ের মাসি-পিসিদের ভুল বুঝিয়ে অর্থ ও কু-প্ররোচনা দিয়ে পতিতালয় রক্ষা করবার আন্দোলনে মাঠে নামায়। দ্বিতীয়ত: ঘৃণ্য এই পেশাটা প্রথমত শুরু হয় নারী পাচার ও পতিতালয়ে বিক্রি হওয়ার মাধ্যমে। পাচার হওয়া মেয়েটি যখন বছরের পর বছর চেষ্টা করেও পতিতালয় থেকে বের হওয়ার সুযোগ না পায়, এবং পালিয়ে আসতে ব্যর্থ হয় তখন তাদের কিছুই করার থাকে না। পাচারকারী ও পতিতালয়ের সর্দারনী কর্তৃক যুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়ে নিজেদের অনিচ্ছায় তারা একসময় ওখানে থেকে যেতে বাধ্য হয়। কয়েক বছর থাকার পর তার মাথায় যখন কাজ করা শুরু করে যে- আমাকে আমার সমাজ ও পরিবার আর গ্রহণ করবে না, সমাজে আর মুখ দেখানো যাবে না, ঠিক তখনই অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে এই অন্ধকার জগতের অভিশপ্ত জীবনের সাথে বেঁধে যায়। আজ যে সর্দারনী বিক্রি হওয়া তরুণীদের জোর করে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করছে এক সময় ঐ সর্দারনীও এমন ভয়াবহ অবস্থার শিকার হয়েছিল, অর্থাৎ পাচার হয়ে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পতিতালয়ে এসেছিল।
সুতরাং পতিতালয়কে টিকিয়ে রাখার মানে অপ্রত্যক্ষভাবে জবরদস্তি-শ্রম, নারী পাচার ও অপহরণ, দালালদের প্রতারণা এবং নারী নিপীড়নকেই জিইয়ে রাখা। সুতরাং পতিতাবৃত্তি সম্পূর্ণ মানবিকতা ও মানবতাবিরোধী একটি কর্ম যা কোনো সভ্য সমাজে থাকতে পারে না।
আসলে পৃথিবীর কোনো দেশের কোনো সমাজেই পতিতাবৃত্তিকে ভাল চোখে দেখা হয় না। ঠিক বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বরং বাংলাদেশের শতকরা ৯৮ ভাগই মুসলমান জনগোষ্ঠী। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের অনুভূতি দ্বীন ইসলাম নির্ভর হওয়ায় বাংলাদেশ সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রদ্বীন করা হয়েছে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে।
প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম হওয়ায় রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রেই ইসলামী অনুভূতি কাজ করবে এবং ইসলামী অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। অথচ পতিতাবৃত্তি দ্বীন ইসলামে শক্তভাবে নিষিদ্ধ।
সব শেষে বলতে চাই, কোনো মেয়েই যৌনকর্মী হতে চায় না, নারী পাচারকারীচক্র ও পতিতালয়ের সর্দারনীরা মেয়েদের যৌনকর্মী হতে বাধ্য করে। পতিতাবৃত্তি একটি জবরদস্ত-শ্রম, যা নারীর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন। নারী পাচার ও অপহরণের প্রধান কারণ এই পতিতালয় ও পতিতাবৃত্তি; সুতরাং পতিতালয় ও পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ করা রাষ্ট্রের মানবিক কর্তব্য।
সুতরাং সরকারের উচিত- হাইকোর্টের নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়ন করা অর্থাৎ বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তি ও সকল পতিতালয় নিষিদ্ধ করে পতিতালয়ে অবস্থানরত মেয়েদের পুনর্বাসিত করার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফিরিয়ে আনা, এবং তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা করে দেয়া। যারা সম্ভ্রমহানী বন্ধের অজুহাতে পতিতালয় বৃদ্ধির কথা বলে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি ভারতের পতিতালয়গুলোকে বন্ধ করার জন্য ভারত সরকারকে চাপ প্রয়োগ করা। কারণ বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া নারীদের বড় একটা অংশই ভারতের পতিতালয়গুলোতে বিক্রি হয়। এটা করলে নারী পাচার ও অপহরণসহ দেশের অনেক বড় বড় অপরাধ বন্ধ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
মুহম্মদ জিয়াউল হক্ব আকন্দ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












