পবিত্র আশুরা শরীফ উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন: ‘খ্রিস্টান ব্যক্তির পবিত্র ঈমান ও জান্নাত লাভ’
, ২৭ জুন, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মহিলাদের পাতা
পবিত্র আশুরা শরীফ উনাকে সম্মান করলে যে কি ফযীলত হয় তার একটা ওয়াকিয়া বর্ণনা করা হয়- এক ব্যক্তি ছিলেন গরীব, দিনমজুর। একবার অসুস্থতার কারণে তিনি তিন দিন যাবত কাজ করতে পারলেন না। চতুর্থ দিন ছিল আশুরার দিন। তিনি আশুরার দিনে ভাল খাওয়ার ফযীলত সম্পর্কে জানতেন।
তখন ছিল কাজীদের (বিচারকদের) যুগ। কাজী সাহেব ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তার কাছে পবিত্র আশুরা শরীফ উনার ফজিলতের কথা বলে এবং নিজের অসুস্থতা ও পরিবারের তিনদিন যাবত অভুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করে ১০ সের আটা, ১০ সের গোশত ও দুই দিরহাম চাইলেন। কাজী সাহেব তাকে যোহরের সময় আসতে বললেন। যোহরের সময় কাজী সাহেব বললেন আছরের সময় আসতে। কিন্তু এর পরে আছরের সময় মাগরিব এবং মাগরিবের সময় ইশা এবং ইশার সময় সরাসরি না করে দিলেন। দুঃখে অধীর হয়ে লোকটি তখন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ীর দিকে রওয়ানা হল। পথে ছিল এক খ্রিস্টানের বাড়ী। লোকটিকে কাঁদতে দেখে উক্ত খ্রিস্টান উনাকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করল। কিন্তু সে বিধর্মী বিধায় খ্রিস্টানকে তিনি প্রথমে কিছু বলতে চাইলেন না।
অতঃপর খ্রিস্টানের অধীর আগ্রহের কারণে তিনি পবিত্র আশুরা শরীফ উনার ফযীলত ও উনার বর্তমান দুরাবস্থার কথা ব্যক্ত করলেন। খ্রিস্টান ব্যক্তি তখন উৎসাহী হয়ে উনাকে পবিত্র আশুরা শরীফ উনার সম্মানার্থে ১০ সের আটা, ১০ সের গোশত, ২ দিরহাম এবং অতিরিক্ত আরও ২০ দিরহাম দিল এবং বললো যে, আপনাকে আমি পবিত্র আশুরা শরীফ উনার সম্মানার্থে প্রতিমাসে এই পরিমাণ হাদিয়া দিব। ঐ গরীব ব্যক্তি তখন তা নিয়ে বাড়ীতে গেলেন এবং খাবার তৈরী করে ছেলে-মেয়েসহ আহার করলেন। অতঃপর দোয়া করলেন, “আয় মহান আল্লাহ পাক! যে ব্যক্তি আমাকে সন্তুষ্ট করলো আমার ছেলে-মেয়েদের মুখে হাসি ফোটালো, মহান আল্লাহ পাক আপনি তার দিল খুশি করে দিন, তাকে সন্তুষ্ট করে দিন”।
ওই রাত্রে কাজী সাহেবকে স্বপ্নে দেখানো হলো যে, কাজী সাহেবকে বলা হচ্ছে, হে কাজী, তুমি মাথা উত্তোলন করো। মাথা তুলে কাজী সাহেব দেখতে পেলো যে তার সামনে দুটি বেহেশতের বালাখানা একটি স্বর্ণের আরেকটি রৌপ্যের। কাজী সাহেব বললো, আয় মহান আল্লাহ পাক! এটা কি? গায়েবী আওয়াজ হলো এ বালাখানা দুটি তোমার ছিল। কিন্তু এখন আর তোমার নেই। কারণ তোমার কাছে যে গরীব লোকটা এসেছিল তাকে তুমি সাহায্য করার ওয়াদা করে ওয়াদা ভঙ্গ করেছো। এজন্য এ বালাখানা দুটি এখন অমুক খ্রিস্টান ব্যক্তির।
অতঃপর কাজী সাহেব ঘুম থেকে উঠে ওযূ ও নামাজ আদায় করে সেই স্বপ্নের মাধ্যমে পরিচয় পাওয়া খ্রিস্টানের বাড়ীতে গেল। খ্রিস্টান কাজী সাহেবকে দেখে বিস্ময়াভুত হলো। কাজী সাহেবকে খ্রিস্টান বললো, আপনি এত সকালে কি জন্য এলেন? কাজী সাহেব বললো- হে খ্রীষ্টান ব্যক্তি তুমি গতরাত্রে কি কোন নেককাজ করেছো? খ্রিস্টান ব্যক্তি বলতে নারাজ। তিনি বললেন কি ব্যাপার হয়েছে আগে বলেন তারপর বলবো। তখন কাজী সাহেব বললো যে, এই ঘটনা ঘটেছে এবং তুমি নিশ্চয়ই গরীব লোকটাকে সাহায্য করেছো। তখন খ্রিস্টান ব্যক্তি তা স্বীকার করল। কাজী সাহেব বললো যে তুমি তো খ্রীষ্টান তুমি মরলে জাহান্নামে যাবে। তুমি তো এই বালাখানা পাবেনা। তোমার এটা নিয়ে কি ফায়দা হবে? তুমি তোমার এই নেক কাজ এক লক্ষ দেরহামের বিনিময়ে আমার নিকট বিক্রি করে দাও এবং তুমি তার কাছে প্রত্যেক মাসে যে ওয়াদা করেছ আমি তাকে তা দিয়ে দিব।
খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, এটা কখনও সম্ভব নয়। হে কাজী সাহেব আপনি সাক্ষী থাকুন আমি পবিত্র কালিমা শরীফ পড়ে মুসলমান হয়ে গেলাম। অতএব এটা ফিকির করার বিষয় যে, পবিত্র আশুরা শরীফ উনাকে সম্মান করার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত খ্রিস্টানকে ঈমান দিয়ে দিলেন এমনকি সম্মানিত জান্নাত নছিব করলেন।
নছীহত মুবারক:
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন- “যে ব্যক্তি পবিত্র আশুরা শরীফ উনাকে সম্মান করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে সম্মানিত জান্নাত দ্বারা সম্মানিত করবেন। ” আলোচ্য খ্রিস্টান ব্যক্তি পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী সম্মানিত ঈমান লাভ করেছেন এবং সম্মানিত জান্নাত লাভ করেছেন।
-উম্মু মুদ্দাসসির।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












