পবিত্র কুরআন শরীফে বর্ণিত ‘লাইলাতুম মুবারকা’ই হচ্ছে পবিত্র শবে বরাত (২)
, ৭ই শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১০ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ২৪ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

পবিত্র সূরা দুখান শরীফে বর্ণিত লাইলাতুম মুবারকাই হচ্ছে পবিত্র শবে বরাত; যে রাত্রি মুবারকে সমস্ত প্রজ্ঞাময় বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
حٰم وَالْكِتٰبِ الْمُبِيْنِ اِنَّا اَنْزَلْنٰهُ فِىْ لَيْلَةٍ مُّبٰرَكَةٍ اِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ اَمْرٍ حَكِيْمٍ
অর্থ: “হা-মীম হুরূফে মুক্বত্বয়াত শরীফ। প্রকাশ্য কিতাব উনার ক্বসম। আমি যাকে এক বরকতময় রাতে নাযিল করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। উক্ত রাত মুবারকে প্রত্যেক প্রজ্ঞাময় বিষয়সমূহ ফায়ছালা করা হয়। ” সুবহানাল্লাহ!” (পবিত্র সূরা দুখান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১-৪)
এখানে মহান আল্লাহ পাক তিনি যে ইরশাদ মুবারক করেছেন, আমি এক বরকতময় রাতে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছি। মূলত এর হাক্বীক্বী অর্থ হবে, আমি এক বরকতময় রাতে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেটা পরবর্তী পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমেই স্পষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তী আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ اَمْرٍ حَكِيْمٍ
অর্থ: এই পবিত্র রাত মুবারকে প্রত্যেক প্রজ্ঞাময় বিষয়সমূহ ফায়ছালা করা হয়। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা দুখান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ উনাদের তাফসীর দেখলে বিষয়টা আরো স্পষ্ট হয়ে যাবে। বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে খাযিনে” উল্লেখ আছে-
وَقِيْلَ هِىَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ عَنْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى يَنْزِلُ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ اِلٰى سَمَاءِ الدُّنْيَا فَيَغْفِرُ لِاَكْثَرِ مِنْ عَدَدِ شَعْرِ غَنَمِ بَنِىْ كَلْبٍ.
অর্থ: “আরো বলা হয়, এটা হচ্ছে পবিত্র শা’বান শরীফ মাস উনার মধ্যরাত। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র শা’বান শরীফ মাস উনার মধ্যরাতে দুনিয়ার আসমানে নাযিল হন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর বনূ কালব গোত্রের মেষের শরীরের পশমের চেয়েও অধিক পরিমাণ বান্দা-বান্দীদেরকে ক্ষমা করে দেন। ” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে খাযিন ৪/১১৭)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-
وَاحْتَجَّ الْاٰخَرُوْنَ عَلٰى اَنَّهَا لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ بِاَنَّهَا لَهَا اَرْبَعَةُ اَسْمَاءٍ اَللَّيْلَةُ الْمُبَارَكَةُ وَلَيْلَةُ الْبَرَاءَةِ وَلَيْلَةُ الصَّكِّ وَلَيْلَةُ الرَّحْمَةِ وَلِاَنَّهَا مُخْتَصَّةٌ بِخَمْسِ خِصَالٍ اَلْاُوْلٰى قَالَ تَعَالٰى {فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ اَمْرٍ حَكِيْمٍ}
অর্থ: “আর অপর পক্ষের উলামায়ে কিরাম দলীল পেশ করেন যে, এটা হচ্ছে পবিত্র শা’বান শরীফ মাস উনার মধ্যরাত। কেননা এই সম্মানিত রাত মুবারক উনার ৪ খানা নাম রয়েছেন। (যেমন) ১. লাইলাতুম মুবারকাহ ২. লাইলাতুল বারায়াত ৩. লাইলাতুছ ছক ৪. লাইলাতুর রহমাত। এই সম্মানিত রাত মুবারক ৫টি বিষয়ের জন্য খাছ। তারমধ্যে প্রথম হচ্ছে- যেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এই পবিত্র রাত মুবারকে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়সমূহ ফায়ছালা করা হয়। ” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরুল লুবাব লি ইবনে আদিল পৃষ্ঠা নং ৪৫১১, আল লুবাব ফী উলূমিল কিতাব)
পবিত্র সূরা দুখান শরীফ উনার ৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে হযরত ইকরিমা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
فِىْ لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ يُبْرَمُ فِيْهِ اَمْرُ السَّنَةِ وَتُنْسَخُ الْاَحْيَاءُ مِنَ الْاَمْوَاتِ وَيُكْتَبُ الْحَاجُّ فَلَا يُزَادُ فِيْهِمْ اَحَدٌ وَلَا يُنْقَصُ مِنْهُمْ اَحَدٌ
অর্থ: “পবিত্র শা’বান শরীফ মাস উনার মধ্য রাতে (পবিত্র শবে বরাতে) আগামী এক বছরের সমস্ত বিষয় চূড়ান্ত করা হয়। এই বছরে কতজন জন্মগ্রহণ করবে, কতজন ইন্তেকাল করবে সেটাও লিপিবদ্ধ করা হয়। যারা পবিত্র হজ্জ করবেন উনাদের নামসমূহ লেখা হয়। যাদের নাম লেখা হয় উনাদের থেকে বাড়ানোও হয় না কমানোও হয় না। অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাতে যাদের নাম লেখা হয় উনারাই শুধু ঐ বছর পবিত্র হজ্জ পালন করতে পারেন। ” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে ত্ববারী ২১/৯, তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম ১০/৩২৮৭, তাফসীরে মাযহারী ৮/৩৬৮ ইত্যাদি)
রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-
اَنَّ اللهَ يَقْضِى الْاَقْضِيَةَ فِىْ لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ وَيُسَلِّمُهَا اِلٰى اَرْبَابِهَا فِىْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি যা কিছু ধার্য করার, (ফায়ছালা করার) সেটা পবিত্র শা’বান শরীফ মাস উনার মধ্য রাতে ফায়ছালা করেন। আর পবিত্র শবে ক্বদরে সেগুলো তার মালিকের নিকট অর্পন করেন। ” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কুরতুবী ২০/১৩০, তাফসীরে ছা’লাবী ১০/২৪৮, তাফসীরুল লুবাব লি ইবনে আদিল ৪৫১২ নং পৃষ্ঠা, তাফসীরে খাযিন ৪/১১৭, তাফসীরে বাগভী ৭/২২৮, তাফসীরে মাযহারী ১/৩৫২৬ ইত্যাদি)
উল্লেখিত বিষয়সমূহ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বিস্তারিত বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ اَلثَّالِثَةِ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ هَلْ تَدْرِيْنَ مَا هٰذِهِ اللَّيْلُ؟ يَعْنِىْ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ قَالَتْ مَا فِيْهَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ فِيْهَا اَنْ يُّكْتَبَ كُلُّ مَوْلُوْدٍ مِنْ بَنِىْ اٰدَمَ فِىْ هٰذِهِ السَّنَةِ وَفِيْهَا اَنْ يُّكْتَبَ كُلُّ هَالِكٍ مِنْ بَنِىْ اٰدَمَ فِىْ هٰذِهِ السَّنَةِ وَفِيْهَا تُرْفَعُ اَعْمَالُهُمْ وَفِيْهَا تَنْزِلُ اَرْزَاقُهُمْ
অর্থ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা মুবারক করলেন, আপনি কি জানেন এই রাত মুবারকে অর্থাৎ পবিত্র শা‘বান শরীফ মাস উনার মধ্যরাতে কি সংঘটিত হয়? তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই রাত মুবারকে কি সংঘটিত হয়? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, প্রত্যেক আদম সন্তান যারা এই বছর জন্মগ্রহণ করবে তাদের নামসমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়। যারা এ বছর ইন্তেকাল করবে তাদের নামও লেখা হয়। এ রাতে বান্দাদের আমলসমূহ উপরে উঠিয়ে নেয়া হয়। এ রাতে বান্দাদের রিযিক্ব নাযিল করা হয় অর্থাৎ রিযিক্বসহ সমস্ত বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়। সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ, হাদীছ শরীফ নং ১৩০৫, দা’ওয়াতুল কাবীর লিল বায়হাক্বী, ফাদ্বার্য়িলুল আওক্বাত লিল বায়হাক্বী ১/১২৬ ইত্যাদি)
উল্লেখিত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো, পবিত্র সূরা দুখান শরীফে বর্ণিত লাইলাতুম মুবারকাই হচ্ছে পবিত্র শবে বরাত। আর এই রাত মুবারকেই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ ফায়ছালা করা হয়। সেটা জারী করা হয় পবিত্র শবে ক্বদরে। আর পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করার বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটাতো বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৭)
২৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ‘পহেলা এপ্রিল’ বা ‘এপ্রিল ফুল’ হারাম। ‘এপ্রিল ফুল’ এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (২)
২৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র সূরা আল ক্বদর শরীফ উনার সহীহ তাফসীর
২৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৬)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা পালন করা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই শান্তি ও পবিত্রতা হাছিলের কারণ
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (২২)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ‘পহেলা এপ্রিল’ বা ‘এপ্রিল ফুল’ হারাম। ‘এপ্রিল ফুল’ এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (১)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৭৬)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৫)
২৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)