পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে রোযা অবস্থায়- ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন ও টিকা নেয়া অবশ্যই রোযা ভঙ্গের কারণ (৮)
, ১২ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৪ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ১৩ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ২৬ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মলমের বর্ণনা:
এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ফার্মাসিউটিক্যাল সেমিসলিড (semisolid) প্রিপারেশন্সসমূহের মধ্যে রয়েছে, মলম (ointments), পেষ্ট (paste), ক্রীম (cream), ইমালশন (emulsion), জেল (gel) ইত্যাদি। এ সবগুলো মাধ্যমই ত্বকে ওষুধ প্রয়োগের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে খুব অল্পসংখ্যক মাধ্যম দ্বারা মিউকাস মেমব্রেনে, যেমন রেকটাল টিস্যূ (recral tissue), বাক্কাল টিস্যূ (buccal tissue), ইউরিথ্রাল মেমব্রেন (urethral membrane), কানের বাইরের ত্বকে, নাকের মিউকোসাতে এবং চোখের কর্ণিয়াতে ওষুধ দেয়া হয়। মিউকাস মেমব্রেনে ওষুধ প্রবেশ করলে, তা রক্তে ছড়িয়ে যায় কিন্তু শরীরের সাধারণ ত্বক তুলনামূলকভাবে মিউকাস মেমব্রেনের চেয়ে কম ওষুধ প্রবেশের যোগ্যতা রাখে।
ত্বকের মধ্য দিয়ে ওষুধের প্রবেশ পথটি বর্ণনার পূর্বে আমরা একটু ত্বক নিয়ে আলোচনা করবো। এনাটমী অনুযায়ী ত্বকের অনেক স্তর রয়েছে, তবে প্রধাণতঃ তিনটি।
১. এপিডার্মিস স্তর (The Epidermis)
২. ডার্মিস স্তর (The Dermis)
৩. ত্বকের চর্বির স্তর (Subcutaneous fat layer)
এদের মধ্যে সবচেয়ে বাইরের অংশটিকে বলা হয় ষ্ট্রেটাম করনিয়াম অথবা হর্নি স্তর (Stratum corneum or horny layer)। ষ্ট্রেটাম কর্নিয়ামের নীচে রয়েছে, এপিডার্মিস এবং এপিডার্মিসের নীচে রয়েছে ডার্মিস অথবা কোরিয়াম (Dermis or Corium)।
জানা গেছে- “Once a substance passes through the statum corneum, there is appraently no significant further hindrance to penetration of the remaining epidermal layers and corium, there is then readz entry into the circulation via the capillaries.”অর্থাৎ যদি ত্বকে ওষুধ প্রয়োগ করা হয় এবং তা কোনভাবে ষ্ট্রেটাম করনিয়াম ভেদ করে, তবে পরবর্তীতে এপিডার্মাল এবং কোরিয়াম স্তর ভেদ করে যেতে উল্লেখযোগ্য কোন বাধা নেই এবং সহজেই কৈশিক নালীর মাধ্যমে রক্ত স্রোতে মিশে।
ত্বকের মধ্য দিয়ে ওষুধ প্রবেশের ব্যাপারে Biopharmaceutics -এ বলা হয়েছে- “In general, drug absorption from dermal vaginal, rectal, perenteral or gastrointestinal absorption sites into systemic circulation occurs by a passive diffusion across biologic membrane. These membranes from lipoidal barriers that seperate the bodz’s interior from its exterior environment.”
অর্থাৎ “ত্বকের মধ্য দিয়ে এবং আরো কয়েকটি মাধ্যম দিয়ে (উল্লেখ্য) রক্তে ওষুধের শোষণ ঘটে জৈবিক ঝিল্লির মধ্য দিয়ে পরোক্ষ ব্যাপনের দ্বারা এবং এ সকল ঝিল্লিসমূহ তৈলাক্ত প্রতিবন্ধকতা (অর্থাৎ চর্বি জাতীয় স্তর) তৈরী করে, যা শরীরের ভেতরের অংশ থেকে বাইরের অংশকে আলাদা করে। ”
জৈবিক ঝিল্লি (biologic membrane) সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে- “Biologic membranes, being lipoidal in nature, are usually more permeable to lipid soluble substances. Transport across these membranes therefore depends, in part, on the lipid solubility of the diffusing species. Lipid solubility of a drug is determined by the presence of non polar groups in the structure of the drug molecule as well as ionizable groups that are affected by local pH.”
অর্থাৎ জৈবিক ঝিল্লি হচ্ছে চর্বি জাতীয় ঝিল্লি এবং যার মধ্য দিয়ে চর্বিতে দ্রবীভূত হওয়ার গুণসম্পন্ন ওষুধ প্রবাহিত করা যায় এবং এ সকল ঝিল্লির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার যোগ্যতার উপর নির্ভর করে এবং একটি ওষুধের চর্বি দ্রাব্যতা নির্ধারিত হয় সাধারণত ওষুধের অণুর মধ্যে নন-পোলার গ্রুপের উপস্থিতির ওপর এবং পাশাপাশি যেগুলো আয়নিক অবস্থায় ভেঙ্গে যায় এবং pH দ্বারা প্রভাবিত হয় তার উপর।
তাহলে এ পর্যন্ত আমরা যে ধারণা পেলাম, তা হচ্ছে-
১. সেমিসলিড (semisolid) প্রিপারেশন্সসমূহের মধ্যে যেমন, মলম (ointments), ক্রীম (cream), জেল (gel) ইত্যাদি শরীরে প্রয়োগ করলেই তা শরীরের শোষিত হবে না। কেননা কোল্ড ক্রীম, ভেনিশিং ক্রীম এগুলোও স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত হয় এবং সেমিসলিড (semisolid) প্রিপারেশন।
২. রক্তে শোষনের জন্য প্রয়োজন জায়গা নির্বাচন করা যেমন রেকটাল টিস্যূ (recral tissue), বাক্কাল টিস্যূ (buccal tissue) ইত্যাদি।
৩. ওষুধের গুণাগুণের উপর। অর্থাৎ ত্বকে তৈলাসক্ত (lipophilic) ওষুধ প্রয়োগ করলে বেশী মাত্রায় শোষিত হয়। কেননা জৈবিক ঝিল্লি দিয়ে সহজেই প্রবেশ করে। সাধারণ ত্বকের মধ্য দিয়েও প্রবেশ করতে পারে, তবে সে সম্পর্কে বলা হয়েছে-
“Since skin on various portions of the bodz has been shown to have different permeability characteristics for a given drug, selection of a site of application is important. The rate of penetration depends on diffusion of drug in the vehicle to the skin surface, surface pH considerations and diffusion through the stratum corneum and supportive tissues, sweat glands, sebaceous glands or aqueous channels.”
অর্থাৎ যেহেতু একটি প্রয়োগকৃত ওষুধের শরীরের ত্বকের বিভিন্ন স্থানে অনুপ্রবেশের যোগ্যতা রাখে, সেহেতু ওষুধ প্রয়োগের জায়গা নির্বাচন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কি মাত্রায় ত্বকে প্রবেশ করবে, তা নির্ভর করে ত্বকে ওষুধের প্রবেশের যোগ্যতার উপর, ত্বকের pH -এর উপর এবং ষ্ট্রেটাম করনিয়াম এবং সহায়ক কলা (supportive tissue)-এর উপর। ওষুধ লোমকুপ দ্বারা, ঘামের রন্ধ্র দ্বারা, সিবসিয়াস গ্রন্থি দ্বারা প্রবেশ করতে পারে।
সবশেষে আমরা বলতে পারি- Untill recently, dermal application of drugs was intended for local effects only. As transport of substances through skin is better understood, however lipophillic drugs that are reasonably potent are being incorporated into transdermal dosage forms with the intent of establishing therapentic blood levels of drug.
অর্থাৎ এখন পর্যন্ত ত্বকের উপর ওষুধ প্রয়োগ করা হয় স্থানিক প্রভাব পাওয়ার জন্য। যেহেতু ত্বকের মধ্য দিয়ে ওষুধের প্রবেশের ঘটনা ভালভাবে জানা হয়েছে, সেহেতু তৈলাসক্ত এবং উপযুক্তভাবে সক্রিয় ওষুধসমূহ ত্বকের উপর এ কারণেই প্রয়োগ করা হয়, যাতে রক্তে ওষুধের প্রয়োজনীয় মাত্রা পাওয়া যায়।
আমরা জানি রোযা রেখে গোসল করলে অথবা শরীরে তেল মালিশ করলে রোযা ভাঙ্গেনা। সুতরাং শরীরে প্রবেশ করতে পারে এমন কোন তৈলাক্ত উপাদান যেমন পেট্রোলিয়াম জেলি, কোল্ড ক্রীম, ভেনিশিং ক্রীম ইত্যাদি ব্যবহারেও রোযা ভাঙ্গবে না। যেহেতু এগুলোর সঙ্গে কোন ওষুধ মিশ্রিত থাকেনা। কিন্তু যদি উপরোক্ত তৈলাক্ত উপাদানসমূহে (ক্রীম বা অয়েন্টমেন্ট নির্ভর) ওষুধ থাকে, বিশেষতঃ যেগুলো তৈলাসক্ত এবং যা ষ্ট্রেটাম করনিয়াম ভেদ করবে জানা যায়, তবে রোযা ভঙ্গ হবে।
উপরোক্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের বক্তব্য দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, ওষুধ ইত্যাদি (যেমন মলম, মালিশ ইত্যাদি) লোমকুপ দ্বারা ঘামের রন্ধ্র দ্বারা বা অন্যান্য যখম দ্বারা ভিতরে প্রবেশ করে থাকে। সুতরাং মলম ইত্যাদি লাগালে যদি জানা যায়, তা রক্তে শোষণ ঘটেছে এবং মগজে বা পেটে পৌঁছেছে, তবে রোযা ভঙ্গ হবে।
সুতরাং যেকোন স্থান দিয়েই প্রবেশ করুক না কেন যদি তা মগজ অথবা পেটে পৌঁছে, তবে সকলের মতেই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তাছাড়া এ মতের স্বপক্ষে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনারও সমর্থন পাওয়া যায়।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمـُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ دَخَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا عَائِشَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ هَلْ مِنْ كِسْرَةٍ؟ فَأَتَيْتُهٗ بِقُرْصٍ فَوَضَعَهٗ عَلٰى فِيْهِ قَالَ يَا عَائِشَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ هَلْ دَخَلَ بَطْنِيْ مِنْهُ شَيْءٌ؟ كَذٰلِكَ قُبْلَةُ الصَّائِمِ اِنَّـمَا الْاِفْطَارُ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার নিকট আসলেন এবং বললেন, আপনার নিকট কোন কাঠের টুকরা তথা মিসওয়াক আছে। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি একটি ছোট মিসওয়াক নিয়ে আসলেন এবং তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুখ মুবারক-এ দিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! এর কোন অংশ আমার জিসিম মুবারক-এ প্রবেশ করেছে কী? এটা তো রোযাদারের জন্য বুছা দেয়ার মতো। নিশ্চয়ই রোযা ভঙ্গ হবে শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে, বের হলে নয়। ” (আহমদ ইবনে মানী, আবূ ইয়ালা শরীফ)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মাহে যিলক্বদ শরীফ উনার আইয়্যামুল্লাহ শরীফসমূহ (১)
৩০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে গরুর গোস্ত শি‘আরুল ইসলাম (৭)
৩০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
৩০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
৩০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, হিন্দুদের পূজায় গিয়েছে, তাদেরকে পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে, সমর্থন করেছে, সম্মতি প্রকাশ করেছে, তাদের সাথে মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করেছে, তাদেরকে সম্মান করেছে, তা’যীম করেছে, তাদের সম্পর্কে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করেছে এবং সম্মানসূচক শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছে, বাহ বাহ দিয়েছে এবং বেশি বেশি মূর্তি তৈরী করতে বলেছে এবং বেশি বেশি পূঁজা করতে বলেছে তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (২)
৩০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সারাবিশ্বে এক দিনে ঈদ পালন সম্ভব কি? একটি দলীলভিত্তিক বিশ্লেষণ.... (১০) সউদী ওহাবী ইহুদী সরকার কর্তৃক নাসী করা বা তারিখ আগ-পিছ করা
৩০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পুরুষের জন্য কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয
৩০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১৫)
৩০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
খালি চোখে চাঁদ দেখে মাস শুরু করা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার নির্দেশ মুবারক
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পূর্ব গণনাকৃত বর্ষপঞ্জী দিয়ে মাস শুরু করা শরীয়তসম্মত নয়
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে গরুর গোস্ত শি‘আরুল ইসলাম (৬)
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)