পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে রোযা অবস্থায়- ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন ও টিকা নেয়া অবশ্যই রোযা ভঙ্গের কারণ (১১)
, ১৫ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৭ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ১৬ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ২৯ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়ের ফায়ছালা:
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
চেতনানাশক (Anesthesia):
চেতনানাশক সাধারণতঃ গ্রহণ করা হয় শ্বাসের মাধ্যমে, শিরার মধ্য দিয়ে বা কখনও পেশীর মধ্য দিয়ে। যেগুলো শ্বাসের মাধ্যমে নেয়া হয় তাতে রয়েছে- ক্লোরফরম, সাইক্লোপ্রোপেন, এনফ্লুরেন, ইথার, নাইট্রাসঅক্সাইড ইত্যাদি। ক্লোরফরমের কথাই ধরা যাক। ক্লোরফরম খুব সহজেই শোষিত হয়। রক্তে এবং মস্তিষ্কে ওষুধের মাত্রা খুব অল্প সময়েই পৌঁছে যায়।
রাসায়নিকভাবে স্থানিক চেতনানাশক আবার দুই প্রকার।
১. পুরনো উপাদানসমূহ, যেমন এষ্টার।
২. সাম্প্রতিক উপাদানসমূহ, যেমন এমাইডস।
এছাড়াও রয়েছে বেনজাইল এলকোহল, মেনথল, ফেনল, এরোসল, প্রপিলেন্ট ইত্যাদি। উদাহরণ হিসেবে লিগনোকেইনের কথাই ধরা যাক। বেশীরভাগ স্থানিক চেতনানাশক খুব দ্রুত ত্বকের মাধ্যমে, মিউকাস মেমব্রেনের স্তর এবং ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের মাধ্যমে শোষিত হয়। ইনজেকশনের মাধ্যমে লিগনোকেইন খুব দ্রুত হৃৎপিন্ড, মস্তিষ্ক, কিডনী এবং অন্যান্য টিস্যূতে ছড়িয়ে যায়। সুতরাং সহজেই সিদ্ধান্তে আসা যায় রোযা রেখে চেতনানাশক দিলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
ধীরে অবমুক্তকৃত ওষুধ (Sustained release drug):
কিছু কিছু ওষুধ রয়েছে, যা একবার সেবন করলে তা শরীরে থেকে ধীরে ধীরে রক্তে প্রয়োজনীয় মাত্রা যুক্ত করে। ফলে বার বার ওষুধ সেবনের প্রয়োজন পড়ে না। এর মধ্যে কিছু ইন্জেকশন রয়েছে, যা সাতদিনে একটি নিলেই হয়। কিছু ট্যাবলেট রয়েছে, যা ২৪ ঘন্টায় ১ টি সেবনই যথেষ্ট। এ সকল ওষুধ রোযা রাখার পূর্বেই গ্রহণ করলে রোযা অবস্থায় এর কার্যকারিতা শরীরে থাকলেও তাতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না।
টিকা (Vaccine):
সম্প্রতি চালু হয়েছে হজ্জ্বে যাওয়ার পূর্বে মেনিনজাইটিস টিকা নেয়ার ব্যাপারটি। এ টিকার মাধ্যমে শরীরে এন্টিজেন প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়, যা কিনা শরীরে এন্টিবডি তৈরী করে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে। রোযা রেখে যে কোন টিকা গ্রহণেই রোযা ভেঙ্গে যাবে।
এক্স-রে (X-ray):
রোগ নির্ণয়ের জন্য এক্সরে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। রোযা রেখে এক্সরে করালে রোযা ভাঙ্গবে কিনা, সে ব্যাপারে আলোচনার পূর্বে এক্সরে নিয়ে একটু আলোচনা করা প্রয়োজন।
সাধারণতঃ সাধারণ অবস্থায় ইলেকট্রোডের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় না। কিন্তু যখন চাপ ০.০১ থেকে ০.০০১ মি. মি. পর্যন্ত কমিয়ে আনা হয় তখন সরাসরি সোজাভাবে কিছু রশ্মি নির্গত হয়, এদের বলা হয় ক্যাথোড রশ্মি। এই ক্যাথোড রশ্মি প্রবাহের সময় সামনে ধাতব পদার্থ ধরা হয় তখন খুব ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় রশ্মি নির্গত হয়, যার কিনা শরীরে ভেদ করে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, একেই বলা হয় এক্সরে।
দেখা গেছে, সূর্যরশ্মি যদি গ্লাস প্রিজমের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করানো যায় তবে যে রকম বর্ণালী দেখা দেয়, তেমনি পটাশিয়াম ফেরোসায়ানাইডের স্ফটিক লবণের মধ্য দিয়ে এক্সরে পরিচালনা করলে একই রকমের বর্ণালী দেখা দেয়। মূলতঃ সূর্য রশ্মির মতই এক্সরে এক ধরণের রশ্মি। রোযা রেখে এক্সরে করালে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। তেমনি ত্বকের অসুখের ক্ষেত্রে অনেক সময় UV-Expomre দেয়া হয় এতেও রোযার কোন ক্ষতি হবে না।
রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া (Blood Transfusion):
রোযা রেখে রক্ত গ্রহণ করলে অবশ্যই রোযা ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু রোযা রেখে কেউ রক্তদান করলে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। কেননা প্রথম অবস্থায় রক্ত শরীরে প্রবেশ করানো হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় অবস্থায় রক্ত বের হয়েছে। সাধারণভাবে সম্মানিত শরীয়ত উনার বিধান মুতাবিক উল্লেখিত বিষয়গুলো ছাড়া শরীর থেকে কিছু বের হলে রোযা ভঙ্গ হয় না।
আকুপাংচার (Acupuncture):
বলা হয়ে থাকে এ পদ্ধতিটি প্রথমে চীনে প্রচলন ঘটে। শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশেষত সেই সকল অংশে যেখানে শরীরের স্নায়ু রয়েছে, সেখানে এক ধরণের সূচ ফোটানো হয়, যাতে শরীরে এক ধরণের নিঃসরণ ঘটে। কিন্তু সূচের মধ্য দিয়ে শরীরে কিছু প্রবেশ করানো হয় না, সে কারণে আকুপাংচারে রোযা ভাঙ্গার কোন সম্ভাবনা নেই।
আল্ট্রাসনোগ্রাফী (Ultrasonography):
আল্ট্রাসনোগ্রাম পদ্ধতিতে শরীরে এক ধরণের শব্দ তরঙ্গ (sound wave) পাঠানো হয় এবং তা পুণরায় ধারণ করে, তার প্রতিক্রিয়া পর্দায় দেখা হয়। সুতরাং এতে রোযা নষ্ট হবে না এবং আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পূর্বে যে জেলটি শরীরে লাগানো হয়, তা পানিদ্রব্য (water soluble) এবং তা মস্তিষ্কে বা পেটে পৌঁছায় না। সুতরাং সে জেলেও রোযা ভাঙ্গার কোন সম্ভাবনা নেই।
এন্ডোসকপি (Endoscopy):
এন্ডোসকপিতে একটি পাইপ পেটের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে ভিতরের অবস্থা দেখা হয়। সুতরাং নলটি যদি পাকস্থলী স্পর্শ করে, তবে রোযা ভঙ্গ হবে কিন্তু যদি পাকস্থলী স্পর্শ করার পূর্বেই বের করে আনা হয়, তবে রোযা ভঙ্গ হবে না।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












