পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে গরুর গোস্ত শি‘আরুল ইসলাম (৩০)
, ২০ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৪ সাদিস, ১৩৯৩ শামসী সন , ১২ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৭ কার্তিক, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
গরুর গোস্ত খাওয়ার সাথে মুসলমানিত্বের সম্পৃক্ততা
প্রশ্ন: অনেকেই বলে থাকে, গরু যবেহ করা বা খাওয়া এটা কোনটাই তো ফরয না, ওয়াজিবও না বরং সুন্নত। এখন এটা আমি না করলে বা না খেলে তো সমস্যা নেই। নাঊযুবিল্লাহ!
এর জবাবে বলতে হয়, এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে, বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি ছিলেন ইহুদীদের মধ্যে অনেক বড় আলিম। তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার পর নিয়মিত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে থাকেন। একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারকে কিছু উটের গোস্ত হাদিয়া মুবারক আসলো।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত সুন্নত মুবারক বা উনার একখানা আদত্ মুবারক হচ্ছেন- যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কোনো কিছু হাদিয়া মুবারক আসে, তখন তিনি সেখান থেকে একটি অংশ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্য ভিতরে অর্থাৎ পবিত্র হুযরা শরীফে পাঠিয়ে দিতেন আর অবশিষ্ট অংশটুকু উপস্থিত সকলের মাঝে বন্টন করার জন্য দিতেন। সেদিনও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
বন্টনকৃত উটের গোস্তের এক ভাগ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে দেয়া হলো। ইহুদীদের জন্য উটের গোস্ত খাওয়া হারাম ছিলো। তিনি যেহেতু ইহুদীদের মধ্যে অনেক বড় আলিম ছিলেন, তাই তিনি জীবনে কোনো দিন উটের গোস্ত খান নি। আজকে নতুন করে উটের গোস্ত খেতে উনার নিকট কেমন যেন মনে হচ্ছে। সেজন্য তিনি উটের গোস্ত খাওয়া থেকে রুখ্ছত চেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারকে আরজী পেশ করলেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি যখন উটের গোস্ত খাওয়া থেকে রুখছত চাইলেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চুপ ছিলেন। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো ওহী মুবারক ব্যতীত কোনো কথা মুবারক বলেন না, কোনো কাজ মুবারক করেন না এবং কোনো সম্মতি মুবারকও প্রকাশ করেন না।
তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার উটের গোস্ত খাওয়া থেকে রুখছত চাওয়াকে কেন্দ্র করে পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করলেন-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পরিপূর্ণরূপে দাখিল হও। কখনও শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। ” (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ্ : আয়াত শরীফ ২০৮)
এই পবিত্র আয়াত শরীফখানা নাযিল হয়েছে হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উটের গোস্ত খাওয়া প্রসঙ্গে। উল্লেখ্য পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পর হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উটের গোস্ত খেলেন।
প্রকৃতপক্ষে উটের গোস্ত খাওয়া সুন্নত মুবারক। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু সম্মানিত আদেশ মুবারক করেছেন, তাই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার জন্য উটের গোস্ত খাওয়া ফরয হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ!
উক্ত ঘটনা থেকে আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি যে, প্রকৃত মুসলমান হতে হলে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মাঝে পরিপূর্ণ দাখিল হতে হবে। আর সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মাঝে পরিপূর্ণ দাখিল তখন-ই হওয়া সম্ভব হবে, যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পরিপূর্ণ অনুসরণ করা যাবে।
যদি তাই হয়, তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু গরুর গোস্ত খেয়েছেন সে হিসেবে পরিপূর্ণ মুসলমান হতে হলে গরুর গোস্ত খাওয়া সকলের জন্য আবশ্যক এবং সুন্নত মুবারক হিসেবে ফরয।
-মুহম্মদ মুস্তাজিবুর রহমান ওয়াক্বি।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যা খাওয়া হারাম করা হয়েছে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












