পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে বৈবাহিক জীবনের রূপরেখা
, ২২ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৩ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ১২ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ৩০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) মহিলাদের পাতা
যে সকল মেয়ে অনুগতা, মুহব্বতকারিণী, অধিক সন্তানদানে সক্ষম তাদেরকে বিবাহ করা সুন্নত। তাদের দ্বারা বৈবাহিক জীবন বরকতপূর্ণ ও সুখের হয়।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
تَـزَوَّجُوا الْوَدُوْدَ الْوَلُوْدَ فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمُ الْأُمَمْ
অর্থ: “তোমরা মুহব্বতকারিণী ও অধিক সন্তানদানে সক্ষম নারীকে বিবাহ করো। কারণ এতে আমার উম্মতের সংখ্যাধিক্য প্রাধান্য পাবে। (আবূ দাউদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ)
যে সকল মেয়ে অনুগতা, মুহব্বতকারিণী, অধিক সন্তানদানকারিণী পরহেযগার, আমানতদার, সুমিষ্টভাষিণী, অল্পে পরিতুষ্ট, দ্বীনের সাহায্যকারিনী তাদেরকে বিবাহ করা সুন্নত। তাদের দ্বারা বৈবাহিক জীবন বরকতপূর্ণ ও সুখের হয়।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ أُمَامَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهٗ يَقُوْلُ مَا اسْتَـفَادَ الْمُؤْمِنُ بَعْدَ تَـقْوَى اللهِ خَيْـرًا لَّهٗ مِنْ زَوْجَةٍ صَالِـحَةٍ إِنْ أَمَرَهَا أَطَاعَتْهُ وَإِنْ نَظَرَ إِلَيْـهَا سَرَّتْهُ وَإِنْ أَقْسَمَ عَلَيْهِ أَبَـرَّتْهُ وَإِنْ غَابَ عَنْـهَا نَصَحَتْهُ فِي نَـفْسِهَا وَمَالِهٖ
অর্থ: হযরত আবু উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিন বান্দা তাক্বওয়া বা পরহেযগারীতার পর নেককার-আহলিয়া (স্ত্রীর) দ্বারা সবচেয়ে বেশি ফায়দা লাভ করতে পারেন। কেননা, নেককার আহলিয়ার খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, আহাল যা আদেশ করেন তা পালন করেন। যখন আহাল তার দিকে তাকান তখন তাকে খুশি করেন, ইতমিনান দান করেন। আহাল কসম বা শপথ করলে আহলিয়া তার পূর্ণতা সাধন করেন। আর আহালের অনুপস্থিতিতে আহাল বা স্বামীর মাল সম্পদ ও নিজেকে হিফাযত বা সংরক্ষণ করেন। অর্থাৎ আমানতদার। (ইবনে মাজাহ শরীফ)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَرْبَعٌ مَنْ اُعْطِيَهُنَّ فَـقَدْ اُعْطِىَ خَيْـرُ الدُّنْـيَا وَالْاٰخِرَةِ قَلْبٌ شَاكِرٌ لِسَانٌ ذَاكِرٌ وَبَدَنٌ عَلَى الْبَلاءِ صَابِرٌ وزَوْجَةٌ لَا تُـبْغِيْهِ خَوْنًا فيْ نَـفْسِهَا وَلَا مَالِهٖ
অর্থ: রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-চারটি জিনিস যাকে দান করা হয়েছে তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের সকল কল্যাণ বা নিয়ামত দান করা হয়েছে। ১. শোকর গোজার অন্তর ২. মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরে রত যবান বা জিহ্বা। ৩. বিপদাপদে ধৈর্য্যধারণকারী শরীর। ৪. এমন আহলিয়া বা স্ত্রী, যে আপন ইজ্জত-আবরু এবং আহাল বা স্বামীর মাল-সম্পদের ক্ষেত্রে কখনো খিয়ানত করেন না। (বাইহাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قِيلَ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ النِّسَاءِ خَيْرٌ؟ قَالَ اَلَّتِيْ تَسُرُّهٗ إِذَا نَظَرَ وَتُطِيْعُهٗ إِذَا أَمَرَ وَلَا تُخَالِفُهٗ فِيْ نَفْسِهَا وَلَا مَالِـهَا بِمَا يَكْرَهُ
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রশ্ন করা হলো, কোন (স্বভাবের) মহিলা উত্তম? তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- যখন আহাল বা স্বামী তার দিকে তাকায় অর্থাৎ তার প্রয়োজন বোধ করে, তখন সে তাকে আনন্দ দান করে। যখন তাকে কোন কাজের নির্দেশ দেয় তখন সে উহা যথাযথভাবে পালন করে। আর সে নিজের ব্যাপারে এবং তার মাল-সম্পদের ক্ষেত্রে এমন কোন কাজ করেন না যা আহাল বা স্বামী অপছন্দ করে। সুবহানাল্লাহ! (নাসায়ী শরীফ, বায়হাক্বী শরীফ)
উল্লেখ্য যে, যে সকল গুণসম্পন্না বা বৈশিষ্ট্যের অধিকারিণী মেয়ে বিবাহ করা সুন্নত সেসকল গুণ সম্পন্ন বা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছেলের সাথে মেয়ে বিবাহ দেয়া সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। যে সকল ছেলে তাদের আহলিয়া বা স্ত্রীর হক্ব যথাযথভাবে পালনে তৎপর নয় বরং উদাসীন তাদেরকে মেয়ে বিবাহ দেয়াও সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِيْنَ إِيـْمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا وَخِيَارُكُمْ خِيَارُكُمْ لِنِسَائِهِمْ
অর্থ: সম্মানিত ঈমানদারগণের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা পরিপূর্ণ মু’মিন যিনি সর্বাপেক্ষা উত্তম চরিত্রের অধিকারী। আর তোমাদের মধ্যে সে সকল ব্যক্তিই ভাল যারা আপন আপন আহলিয়া বা স্ত্রীর নিকট ভাল। অর্থাৎ আহলিয়া বা স্ত্রী যাদেরকে ভালো বলে স্বীকৃতি দেন তারাই ভালো। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهٖ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِىْ
অর্থ: তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে ব্যক্তি তার আহলিয়া বা স্ত্রীর কাছে উত্তম। আমি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের নিকট উত্তম। (তিরমিযী শরীফ, দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السّلَامُ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ مِنْ أَكْمَلِ الْمُؤْمِنِيْنَ إِيْـمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا وَأَلْطَفُهُمْ بِأَهْلِهٖ
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিনগণের মধ্যে সেই অধিকতর পূর্ণ মু’মিন, উত্তম চরিত্রের অধিকারী, যে নিজের পরিবার-পরিজনদের প্রতি অত্যন্ত কোমল ও দয়ার্দ্র। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ) (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












