পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- পবিত্র খুতবা উনার হুকুম-আহকাম
, ২৬ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০১ ছামিন, ১৩৯২ শামসী সন , ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৩ পৌষ , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
(তৃতীয় পর্ব)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-
عن حضرت الـحكم بن حزن الكلفى رضى الله تعالى عنه قال اياما شهدنا فيها الـجمعة مع رسول الله صلى الله عليه وسلم متوكئا على عصا او قوس فحمد الله واثنى عليه.
অর্থ: “হযরত হাকাম বিন হাযান কুলাফী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখনই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিছনে পবিত্র জুমুয়াবার ছলাতুল জুমুয়া আদায় করতাম। আমরা দেখতাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (খুতবার সময়) লাঠি মুবারক অথবা ধনুক মুবারক উনার উপর ভর করে দাঁড়াতেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক উনার হামদ শরীফ ও ছানা শরীফ পড়ে খুতবা পড়তেন। ” (আবূ দাউদ শরীফ ১ম খ- ১৬৩ পৃষ্ঠা)
সম্মানিত ফিক্বাহ উনার নির্ভরযোগ্য ও বিশ্ববিখ্যাত কিতাব ‘গায়াতুল আওতার’ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-
جیسے کھڑا ہونا خطبہ میں سنت ہے اسی طرح عصاء کا لینا بھی مسنون ہے .
অর্থ: “খুতবা উনার মধ্যে দাঁড়ানো যেরূপ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত তদ্রƒপ খুতবা উনার সময় লাঠি মুবারক ব্যবহার করাও খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। ” (গায়াতুল আওতার; ১ম খ-, ৩৮১ পৃষ্ঠা, রদ্দুল মুহতার; ১ম খ-, ৮৬২ পৃষ্ঠা, শামী, মুহীত্ব, ইমদাদুল ফতওয়া ইত্যাদি)
আরো অনেক সম্মানিত ফিক্বাহ উনার কিতাবসমূহে খুতবার সময় লাঠি ব্যবহার করা খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং এটাকে বিদয়াত বলা গুমরাহী ও কুফরী ছাড়া কিছুই নয়।
(১৬) নামায বড় করা ও উভয় খুতবা নামায উনার তুলনায় ছোট করা। কেননা খুতবা নামায উনার চেয়ে দীর্ঘ করা সুন্নত উনার খিলাফ বা মাকরূহ।
অথচ আজকাল আমাদের দেশের প্রায় স্থানেই খতীব ছাহেবদেরকে দেখা যায় যে, তারা পবিত্র ছলাতুল জুমুয়া উনার খুতবা নামায অপেক্ষা বহু বড় করে থাকে, যা সম্পূর্ণ সুন্নত পরিপন্থী কাজ।
কাজেই প্রত্যেকের উচিত হবে, উভয় খুতবা নামায উনার ক্বিরাআত উনার চেয়ে ছোট করা এবং উভয় খুতবা সূরায়ে তিওয়ালে মুফাছ্ছাল উনার সমপরিমাণ অথবা উনার চেয়ে ছোট করা। উনার চেয়ে বড় করা মাকরূহে তাহরীমী।
سنت ہے کہ خطبہ مختصر پڑھا جائے زیادہ طویل نہ ہو. اور حد اسکی یہ ہے کہ طوال مفصل کی سوروں میں سے کسی سورة کے برابر ہو اس سے زیادہ طویل پڑھنا مکروہ ہے.
অর্থ: “খুতবা অতিরিক্ত বড় না করে ছোট করা সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত, আর এটার পরিমাপ হলো তিওয়ালে মুফাছ্ছাল সূরা উনার সমপরিমাণ, এর থেকে বড় করা মাকরূহে তাহরীমী। ” (গায়াতুল আওতার; ১ম খ-, ৩৭৩ পৃষ্ঠা, শামী, বাহরুর রায়িক, ফতওয়ায়ে আলমগীরী)
(১৭) খুতবার পূর্বে ওয়াজ করা সুন্নত। মুছল্লীদেরকে খুতবার বিষয়বস্তু বুঝাতে হবে প্রথম আযান উনার পূর্বে বা পরে। সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী ছানী আযান উনার পূর্বে ওয়াজ নছীহত করা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। (তবে ওয়াজের পর এবং খুতবার আযানের পূর্বে অবশ্যই মুছল্লীদেরকে ক্বাবলাল জুমুয়া পড়ার সময় দিতে হবে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র জুমুয়াবার সম্মানিত খুতবা প্রদানের পূর্বে মিম্বর শরীফ উনার সম্মুখে দাঁড়িয়ে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করতেন। অতঃপর হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি খুতবা মুবারক প্রদান করতেন। (মুস্তাদরিকে হাকিম শরীফ ১ম খ- পৃষ্ঠা ১০৮)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুছর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র জুমুয়াবার লোকদিগকে ওয়াজ-নছীহত করতেন এবং খতীব ছাহেব খুতবা প্রদান করার জন্য আগমন করলে তিনি উনার ওয়াজ-নছীহত বন্ধ করে দিতেন। (মুস্তাদরিকে হাকিম শরীফ)
আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম ও হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাদের খিলাফতকালে বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত তামীমদারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খুতবা প্রদানের পূর্বে ওয়াজ নছীহত করতেন। (মুসনাদে আহমদ শরীফ ৩য় খ- পৃষ্ঠা ৪৪৯)
এছাড়াও অনুরূপ বর্ণনা মওজুয়াতে কবীর, ইক্বামাতুল হুজ্জাহ, ইছাবাহ, ফতওয়ায়ে রহীমিয়া ইত্যাদি আরো অনেক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। (কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় ইবারত দেয়া হলো না)
(১৮) একমাত্র আরবী ভাষায়ই খুতবা দেয়া।
স্মর্তব্য যে, হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা আমভাবে আরবী ভাষায় খুতবা দেওয়াকে সুন্নত বলার কারণ হলো, যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরবী ভাষায় খুতবা মুবারক দিয়েছেন। তাই আম ফতওয়া মতে আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া খাছ সুন্নত। তবে খাছ ফতওয়া মতে বা আহকাম মুতাবিক আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া ওয়াজিব। যেহেতু আরবী ভাষা ব্যতীত অন্য ভাষায় খুতবা দিলে ফতওয়াগ্রাহ্য মতে নামায শুদ্ধ হবে না এবং তা বিদয়াত ও মাকরূহ তাহরীমী হবে। তাই আরবী ভাষাতেই খুতবা দেয়া ওয়াজিব। যেমন আমভাবে সকলেই জানে যে, দাড়ি রাখা সুন্নত। যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দাড়ি মুবারক রেখেছেন। তবে খাছভাবে অর্থাৎ আহকাম উনার দিক দিয়ে দাড়ি রাখা হচ্ছে ফরয-ওয়াজিব। যেহেতু সকলের মতেই এক মুষ্টির কমে দাড়ি কাটা-ছাঁটা হারাম। আর এর থেকে বেঁচে থাকা সর্বসম্মতিক্রমেই ফরয। অনুরূপভাবে আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় খুতবা দেয়া যেহেতু সকলের মতেই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও মাকরূহ তাহরীমী। আর বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ বা মাকরূহ তাহরীমী থেকে বেঁচে থাকা যেহেতু ওয়াজিব। তাই আরবী ভাষায় খুতবা দেওয়াও ওয়াজিব। এটাই সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত মুতাবিক ছহীহ ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত।
আর যেহেতু আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। সেহেতু উক্ত সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ অন্য ভাষায় খুতবা দেয়া বিদয়াত ও মাকরূহ তাহরীমী। (সমাপ্ত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












