পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- পবিত্র খুতবা উনার হুকুম-আহকাম
, ২৩ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৮ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১০ পৌষ , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
(প্রথম পর্ব)
মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে খুতবা উনাকেذكر বলে উল্লেখ করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلٰوةِ مِنْ يَّوْمِ الْـجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلـٰى ذِكْرِ اللهِ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে যখন ছলাতুল জুমুয়া উনার জন্য ডাকা হয়, তখন তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির উনার দিকে ধাবিত হও অর্থাৎ খুতবা শুনার জন্য আসো। ” (পবিত্র সূরা জুমুয়াহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)
অধিকাংশ মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা একমত যে, উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ذِكْرِ ‘যিক্র’ শব্দ মুবারক দ্বারা খুতবা উনাকে বুঝানো হয়েছে। (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৯ম খ-, ৪৫৬ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ ১ম খ-, ১২৭ পৃষ্ঠা, মাবছুত লিস সারাখসী ২য় খ-, ২৬-৩১ পৃষ্ঠা, কবীরী, ৮৭ পৃষ্ঠা, হিদায়া শরীফ ১ম খ-, ১৩৯ পৃষ্ঠা)
এমনিভাবে সম্মানিত হযরত ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অনেকেই খুতবা উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার যিক্র ও ইবাদতের দিক দিয়ে পবিত্র নামায উনার ন্যায় বলেছেন। যেমন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন-
انـما قصرت الـجمعة لاجل الـخطبة
অর্থ: “পবিত্র ছলাতুল জুমুয়া উনাকে (চার রাকায়াতের স্থলে দুই রাকায়াতে) সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে একমাত্র খুতবা উনার কারণেই। ” (ইযালাতুল খফা)
কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-
وبعض مشايـخنا قالوا: الـخطبة تقوم مقام ركعتين
অর্থ: “কতক মাশায়িখে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন, খুতবা দু’রাকায়াত নামায উনার স্থলাভিষিক্ত। ” (আল ফতওয়া তাতারখানিয়াহ লিল আলায়িল আনছারী আনদারীতী হানাফী দিহলবী হিন্দী কিতাবুছ ছলাত আল ফছল ফী ছলাতিল জুমুয়া ২য় খ- ৫৯ পৃষ্ঠা)
খুলাছাতুল ফতওয়ায় উল্লেখ আছে-
كل عمل حرم فى الصلوة حرم فيها اى فى الـخطبة فيحرم اكل وشرب وكلام ولو تسبيحا او رد سلام.
অর্থ: “যে সকল কাজ-কর্ম পবিত্র নামায উনার মধ্যে হারাম সেগুলো খুতবা উনার মধ্যেও হারাম ও নিষিদ্ধ। সুতরাং খুতবা দানকারী ও শ্রবণকারীদের জন্য খাওয়া, পান করা, কথা-বার্তা বলা যদিও তা তাসবীহ হোক না কেন এবং সালাম উনার জবাব দেওয়াও জায়িয নয়। ”
পবিত্র নামায উনার মধ্যে ক্বিরাআত শুনা যেরূপ ওয়াজিব খুতবা শুনাও তদ্রƒপ ওয়াজিব। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
واذا قرء القران فاستمعوا له وانصتوا لعلكم ترحـمون.
অর্থ: “যখন পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা অতি মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ করো। অবশ্যই তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হবে। ” (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২০৪)
অনেক সম্মানিত মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন যে, উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ খুতবা উনাকে উদ্দেশ্য করে অবতীর্ণ হয়েছে।
আমাদের হানাফী মাযহাব উনার ইমাম, ইমামে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলেন, পবিত্র নামায উনার মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত শ্রবণ করা যেরূপ ওয়াজিব, তদ্রƒপ সর্বপ্রকার খুতবা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা ওয়াজিব। তাফসীরে কামালাইন উনার লেখক আল্লামা হযরত সালামুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট থেকেও উক্ত অভিমত নকল করেন। অনুরূপভাবে তাফসীরে মায়ারিফুল কুরআনেও উল্লেখ রয়েছে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ আছে-
وقد روى البيهقى بسند صحيح اذا خرج الامام فلا صلوة ولا كلام فتح الودود اى اذا خرج الامام فلا صلوة واذا صعد الـمنبر فلا كلام.
অর্থ: “হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছহীহ সনদে বর্ণনা করেন, ইমাম ছাহেব যখন খুতবা দেওয়ার জন্য হুজরা হতে বের হবেন, তখন সর্বপ্রকার নামায পড়া ও কথা-বার্তা বলা নিষিদ্ধ। ‘ফতহুল ওয়াদূদ’ কিতাবে বর্ণিত আছে, অর্থাৎ ইমাম ছাহেব যখন খুতবা উনার জন্য বের হবেন তখন সর্বপ্রকার নামায পড়া নিষিদ্ধ। আর যখন খুতবা দেওয়ার জন্য মিম্বরে উঠবেন তখন সর্বপ্রকার কথাও নিষিদ্ধ। ” (আবূ দাউদ শরীফ ১ম খ- ১৬৬ পৃষ্ঠা ৪ নম্বর হাশিয়া)
হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মুয়াত্তা শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন, হযরত ইবনে শিহাব জুহুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
خروج الامام يقطع الصلوة وخطبته يقطع الكلام
অর্থ: “ইমাম উনার আগমন পবিত্র নামায উনাকে বন্ধ করে দেয়, আর উনার খুতবা কথা-বার্তাকে বন্ধ করে দেয়। ”
অর্থাৎ ইমাম ছাহেব যখন খুতবা উনার জন্য হুজরা (রুম) থেকে বের হবেন, তখন নামায (সুন্নত বা নফল) পড়া নিষেধ। আর যখন খুতবা শুরু করে দিবেন, তখন নামায উনার সাথে সাথে কথা-বার্তা বলাও নিষেধ। (চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












