পবিত্র ক্বলবী যিকির উনার ফাযায়িল-ফযীলত
, ১৪ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৪ হাদি আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রি:, ৩০ চৈত্র, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা সকলেই আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী হয়ে যায়ও। ” প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী হওয়া ফরয। আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী হওয়ার জন্য ইলম অর্জন করতে হয়। ইলম হচ্ছে দু’প্রকার (১) ইলমে ফিক্বাহ (২) ইলমে তাসাউফ। ইলমে ফিক্বাহ মাদ্রাসায় পড়ে বা হক্কানী-রব্বানী আলিম উনাদের কাছে গিয়ে শিক্ষা করা যায়। কিন্তু ইলমে তাসাউফ বা অন্তর পরিশুদ্ধ করার ইলম একা একা শিক্ষা করা যায় না। এই ইলম শিক্ষা করতে হলে হক্কানী-রব্বানী আলিম বা ওলীআল্লাহ উনাদের কাছে বাইয়াত হয়ে যিকির-ফিকির করতে হয়। এই যিকির করার মাধ্যম দিয়ে অন্তর পরিশুদ্ধ করা সহজ এবং সম্ভব হবে। এই যিকির হচ্ছে ক্বলবী যিকির। এই যিকির করতে হবে ওলীআল্লাহ উনাদের নির্দেশ মুতাবিক। এই যিকির উনার অনেক ফযীলত এবং ফায়দা রয়েছে।
এই ক্বালবী যিকির উনার ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে, হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যখন তোমরা জান্নাতের বাগানে পৌঁছবে, তার ফল খেয়ে নিও। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জান্নাতের বাগান কি? তিনি বললেন, যিকির উনার মজলিস হচ্ছে জান্নাতের বাগান। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে, হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন কিছু লোক একত্রিত হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করতে থাকে তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তাদেরকে ঘিরে নেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত তাদেরকে আচ্ছাদিত করেন, তাদের উপর সাকিনা (শান্তি) বর্ষিত হতে থাকে এবং স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সামনে তাদের ছানা-ছিফত করতে থাকেন। ” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে, হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট বান্দাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ ও অধিক মর্যাদাসম্পন্ন হবেন? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরকারী পুরুষ ও যিকিরকারী নারী। ” উনাকে আবার জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদকারী অপেক্ষাও কি? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন হ্যাঁ, যদি তার তরবারী ভেঙ্গে যায়। আর সে নিজে রক্তাক্ত হয় তা হতেও মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরকারী শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান। সুবহানাল্লাহ! (আহমদ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আবূ মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে আপন রবের যিকির করে এবং যে যিকির করে না, তাদের উদাহরণ যথাক্রমে জীবিত ও মৃতের ন্যায়। ” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অর্থাৎ যারা যিকির করে তাদের ক্বলবে সবসময় যিকির জারী থাকে। কাজেই তারা জীবিত। আর যারা যিকির করে না তাদের ক্বলবে যিকির জারী নেই। ফলে তারা মৃত। তাদের ক্বলব মুর্দা।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। একবার এক ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! শরীয়ত উনার বিষয়গুলো আমার কাছে অত্যাধিক কঠিন মনে হচ্ছে। কাজেই আমাকে এমন একটি উপায় অবহিত করুন, যাতে আমি ইস্তিকামত (অবিচল) থাকতে পারি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমার জিহ্বাকে সবসময় মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির দ্বারা সতেজ রাখবে। ” (আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)
অর্থাৎ সবসময় যিকির করলে হক্বমত ও পথে ইস্তিকামত থাকা সহজ ও সম্ভব হবে। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কোন আদেশ নিষেধই কঠিন কষ্টকর মনে হবে না। বরং অতি সহজ ও শান্তিদায়ক হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ!
একবার একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আরজু করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা যদি জানতে পারতাম কোন সম্পদ উত্তম, তবে তা সঞ্চয় করে রাখতাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ‘তোমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো, মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরকারী জিহ্বা, শোকরগুজার অন্তর এবং ঈমানদার আহলিয়া, যে তার ঈমানের (দ্বীনের) ব্যাপারে তাকে সাহায্য করে। সুবহানাল্লাহ! (আহমদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ মিশকাত শরীফ)
পবিত্র যিকির উনার ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে, হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিন বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলে দিবো না যে, “কোন আমল সর্বোত্তম? তোমাদের মালিক মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক পবিত্রতা লাভের কারণ এবং মর্যাদা-মর্তবা বৃদ্ধির ব্যাপারে অধিক কার্যকর? সর্বোপরি তোমাদের পক্ষে সোনা-রূপা দান করা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং শত্রুর মোকাবিলা করা বা জিহাদ করা তথা শত্রুরা তোমাদের গর্দান কাটবে আর তোমরাও তাদের গর্দান কাটবে তা হতেও উত্তম? উনারা বললেন, জি হ্যাঁ! বলুন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তখন তিনি বললেন, সে আমল হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির। ” সুবহানাল্লাহ! (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাযাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করা সবচেয়ে বেশী ফযীলতপূর্ণ আমল। এই যিকিরই হচ্ছেন ক্বলবী যিকির। ক্বলবী যিকির করার মাধ্যমে অন্তরের বদখাছলত দূর হয়। নেক খাছলত পয়দা হয়। অন্তরে শান্তি লাভ হয়, শয়তানের ওয়াসওয়াসা দূর হয়, দুনিয়াতে-আখিরাতে কামিয়াবী হাছিল করা সম্ভব হয়। হক্কানী-রব্বানী শায়েখ বা মুর্শিদ যাঁরা রয়েছেন, উনাদের হাত মুবারকে বাইয়াত গ্রহণ করে উনাদের থেকে এই ক্বলবী যিকিরের সবক নিতে হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে সবসময় যিকির করার তাওফীক দান করেন। আমীন!
-আহমদ উম্মু হাসান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












