পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাই শবে বরাত প্রমাণিত (২)
, ১১ ই শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৪ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ২৮ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

পবিত্র হাদীছ শরীফ নং (২)
حَدَّثَنَا رَاشِدُ بْنُ سَعِيدِ بْنِ رَاشِدٍ الرَّمْلِيُّ ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ ، عَنِ ابْنِ لَهِيعَةَ ، عَنِ الضَّحَّاكِ بْنِ أَيْمَنَ ، عَنِ الضَّحَّاكِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَرْزَبٍ ، عَنْ حضرت أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ رضى الله تعالى عنه عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ لَيَطَّلِعُ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلاَّ لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ.
অর্থ: হযরত আবূ মূসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি মধ্য শা’বানের রাত অর্থাৎ শবে বরাতে আতœপ্রকাশ করেন (রহমতে খাছ নাযিল করেন) এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত উনার সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনে মাজাহ শরীফ : পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ১৩৯০, আল জামিউছ ছহীহ লিস সুনান ওয়াল মাসানীদ ৬/২১০, ৯/৩৪২, মিছবাহুয যুজাজাহ ফী যাওয়ায়িদে ইবনে মাজাহ ২/১০, ফাদ্বায়িলুল আওক্বাত লিল বায়হাক্বী ১/১২০)
এই হাদীছ শরীফখানার একজন রাবী ‘দাহহাক বিন আয়মান’ তিনি ব্যতীত সমস্ত রাবী ছিক্বাহ বা বিশ্বস্ত। তাছাড়া এই হাদীছ শরীফখানা অন্য আরেকটি সনদেও বর্ণিত রয়েছে। যার কারণে আলবানীও এই হাদীছ শরীফখানাকে (صحيح لغيره) ছহীহ লিগইরিহী বলে স্বীকার করেছে। (ছহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ৩/৩৩)
পবিত্র হাদীছ শরীফ নং (৩)
وَقَدْ رَوَى مُصْعَبُ بْنُ أَبِي ذِئْبٍ ، عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ مُحَمَّدٍ ، عَنْ أَبِيهِ ، أَوْ عَمِّهِ ، عَنْ حضرت أَبِي بَكْرٍ عليه السلام قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ يَنْزِلُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا فَيَغْفِرُ لِعِبَادِهِ إِلاَّ مَا كَانَ مِنْ مُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ لأَخِيهِ.
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি মধ্য শাবানের রাতে অর্থাৎ শবে বরাতে দুনিয়ার আসমানে নাযিল হন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন এবং মুশরিক ও মুসলিম ভাইয়ের সাথে হিংসাকারী ব্যতীত সমস্ত বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদুল বায্যার ১/১৫৭, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৭/৩৭৯)
হযরত ইমাম হাফিয যকীউদ্দীন মুনযিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মুআয বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে পবিত্র শবে বরাত সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ বর্ণনা করার পর বলেন-
من حديث حضرت أبي بكر الصديق عليه السلام بنحوه بإسناد لا بأس به
অর্র্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার থেকেও অনুরূপ বর্ণিত রয়েছে। যার সনদে কোনো সমস্যা নেই। (আত তারগীব ওয়াত তারহীব ৩/৩০৭)
মুহাদ্দিছগণ যখন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোনো সনদ সম্পর্কে (لا بأس به) বলেন, তখন সেটা উক্ত সনদের সবলতা বা মজবুতী বুঝায়।
হযরত হাফিয আবুল হাসান নূরুদ্দীন আলী ইবনে আবী বকর হায়ছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করার পর বলেন-
رواه البزار وفيه عبد الملك بن عبد الملك، ذكره ابن أبي حاتم في الجرح والتعديل ولم يضعفه، وبقية رجاله ثقات.
অর্র্থ: হযরত বাযযার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন। এই সনদে ‘আব্দুল মালিক বিন আব্দিল মালিক’ নামক একজন রাবী রয়েছেন। যার সম্পর্কে হযরত ইবনে আবী হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘আল জারাহ ওয়াত তা’দীল’ কিতাবে আলোচনা করেছেন। কিন্তু উনাকে দুর্বল বলেননি। উনি ব্যতীত অন্য সকল রাবী ছিক্বাহ বা বিশ্বস্ত। (মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৭/৩৭৯)
আর হযরত আবূ হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কোনো রাবীর বিষয়ে বিশ্লেষণ করার পর নিরবতা পালন করলে সেই রাবীকে ছিক্বাহ বা বিশ্বস্ত বুঝায়। যেমন কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
وهذا يدلُّ على أن سكوت ابن أبي حاتم ليس جرحاً ولا جهالة عند الحافظ الهيمثي فلذا قال في هذا الحديث (ورجاله ثقات) فمن سكت عليه ابنُ أبي حاتم - ومثله البخاري ... يعدُّ ثقةً عند الحافظ الهيثمي رحمة الله عليه
অর্র্থ: হযরত ইমাম হায়ছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট হযরত আবূ হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কোনো রাবীর ব্যাপারে চুপ থাকার দ্বারা ঐ রাবীর জারাহ ও জিহালত মুক্ত বুঝায়। আর এ কারণেই তিনি এই হাদীছ শরীফ সম্পর্কে বলেছেন, উনার রাবীগণ বিশ্বস্ত। হযরত ইবনে আবী হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যেই রাবীর ব্যাপারে নিরবতা পালন করেছেন ঐ রাবী ইমাম হায়ছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট ছিক্বাহ বা বিশ্বস্ত। (হাফিয ইবনে হাজার ওয়া মানহাজুহূ ফী তাক্বরীবিত তাহযীব ১/৬৭)
লা-মাযহাবীদের গুরু আলবানীও এই হাদীছ শরীফখানাকে ছহীহ লিগইরিহী বলে স্বীকার করেছে। সে তার ‘ছহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব’ কিতাবে বলেছে-
والبزار والبيهقي من حديث حضرت أبي بكر الصديق عليه السلام بنحوه بإسناد لا بأس به
অর্থ: হযরত ইমাম বাযযার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনারাও সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। যেই সনদে কোনো সমস্যা নেই। (ছহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ৩/৩৪)
কাজেই এই পবিত্র হাদীছ শরীফখানাও ছহীহ প্রমাণিত হলো।
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র ছলাত বা দরূদ শরীফ পাঠ করার বেমেছাল ফযীলত
১৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র ই’তিকাফ এর হুকুম-আহকাম
১৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫৪)
১৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে রোযা অবস্থায়- ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন ও টিকা নেয়া অবশ্যই রোযা ভঙ্গের কারণ (১৪)
১৮ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৮ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার কতিপয় কারামত মুবারক
১৮ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ফাতহে মক্কা অর্থাৎ পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় দিবস
১৮ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে রোযা অবস্থায়- ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন ও টিকা নেয়া অবশ্যই রোযা ভঙ্গের কারণ (১৩)
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)