পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাই শবে বরাত প্রমাণিত (৪)
, ১২ শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৫ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ২৯ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র হাদীছ শরীফ নং (৫)
حدثنا عبد الله حدثني أبي ثنا حسن ثنا بن لهيعة ثنا حيي بن عبد الله عن أبي عبد الرحمن الحبلي عَنْ حضرت عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رضى الله تعالى عنه أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَطَّلِعُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَى خَلْقِهِ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِعِبَادِهِ إِلاَّ لاِثْنَيْنِ مُشَاحِنٍ وَقَاتِلِ نَفْسٍ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি মধ্য শা’বানের রাতে অর্থাৎ শবে বরাতে উনার সৃষ্টির প্রতি আতœপ্রকাশ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর হিংসুক এবং অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যাকারী ব্যতীত উনার সমস্ত বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ ২/১৭৬, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৭/৩৮০, আত তারগীব ওয়াত তারহীব ২/৭৩ ইত্যাদি)
হযরত আবুল হাসান নূরুদ্দীন হায়ছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৮০৭ হিজরী) তিনি এই হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করার পর বলেন-
رواه أحمد وفيه ابن لهيعة وهو لين الحديث، وبقية رجاله وثقوا
এটা হযরত আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন। এই সনদে ইবনে লাহিআহ নামক একজন রাবী রয়েছেন, যিনি লীনুল হাদীছ অর্থাৎ তিনি হাদীছ শরীফ বর্ণনার ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা প্রদর্শন করতেন। এছাড়া অন্য সমস্ত রাবী ছিক্বাহ বা বিশ্বস্ত।
হযরত আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত রাবী সম্পর্কে বলেন-
مَنْ كَانَ مِثْلَ ابْنِ لَهِيْعَةَ بِمِصْرَ فِي كَثْرَةِ حَدِيْثِهِ، وَضَبطِهِ، وَإِتْقَانِهِ؟
অর্থ: মিশরে অধিক হাদীছ শরীফ বর্ণনার ক্ষেত্রে, অধিক দ্ববত্ব বা স্মরণশক্তির ক্ষেত্রে ও দৃঢ়তার ক্ষেত্রে হযরত ইবনে লাহিআহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতো কে রয়েছে? (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১৫/১০, তাযকিরাতুল হুফফায ১/১৭৫)
হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
عند ابن لهيعة الأصول وعندنا الفروع
অর্থ: হযরত ইবনে লাহিআহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের মৌলিক ইলিম রয়েছে। আর আমাদের নিকট শাখা-প্রশাখার ইলিম রয়েছে। (তাযকিরাতুল হুফফায ১/১৭৫)
সমকালীন হাদীছ শরীফ বিশারদ মুহম্মদ আহমদ শাকের তিনি উক্ত সনদ সম্পর্কে বলেন-
إسناده صحيح، وهو في مجمع الزوائد
অর্থ: এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সনদ ছহীহ। এটা ‘মাজমাউয যাওয়ায়িদ’ কিতাবেও বর্ণিত রয়েছে। (মুসনাদে আহমদ তা’লীক আহমদ শাকের ৬/১৯৭)
শুআইব আরনাউত বলেন-
صحيح بشواهده
অর্থাৎ এই বর্ণনার পক্ষে আরো শাহেদ হাদীছ শরীফ থাকার কারণে এই পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ। (মুসনাদে আহমদ ২/১৭৬(
আলবানীও এই পবিত্র হাদীছ শরীফখানাকে হাসান (উত্তম সনদ) বলে স্বীকার করেছে। সে তার সিলসিলাতুছ ছহীহার মধ্যে বলেছে-
قلت : و هذا إسناد لا بأس به في المتابعات و الشواهد .....فالحديث حسن
অর্থাৎ আমি বলি এই সনদে কোনো সমস্যা নেই। কেননা এই হাদীছ শরীফ উনার পক্ষে মুতাবাআত ও শাওয়াহেদ বর্ণনা রয়ে গেছে। ....... শেষে সে বলেছে, মূল কথা হলো এই পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হাসান। (আস সিলসিলাতুছ ছহীহাহ ৩/২১৮)
কাজেই, পবিত্র লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত সম্পর্কে এরূপ আরো অনেক ছহীহ বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে। তাই কোনোভাবেই পবিত্র শবে বরাতকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে সে পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ অস্বীকার করার কারণে কাফির হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র শবে বরাত সম্পর্কে বলে গেছেন, এই রাত্রি মুবারকে বিশেষভাবে ছলাত আদায় করেছেন, দোয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! এখন কেউ যদি বলে, শবে বরাত বলতে ইসলামী শরীয়তে কিছু নেই তাহলে সেতো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যারোপ করলো। নাঊযুবিল্লাহ! আর যে ব্যক্তি উনার প্রতি মিথ্যারোপ করবে তার সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
অর্থ: যে ব্যক্তি সেচ্ছায় আমার প্রতি মিথ্যারোপ করলো, সে যেন তার যায় ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নিলো। নাউযুবিল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
সুতরাং, যারা পবিত্র শবে বরাতকে অস্বীকার করবে তারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যারোপ করার কারণে এবং উনার পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ অস্বীকার করার কারণে কাট্টা কাফির হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি এদের গোমরাহী থেকে মুসলিম উম্মাহকে হিফাযত করুন এবং পবিত্র শবে বরাতে আমাদেরকে যথাসাধ্য ইবাদত-বন্দেগী ও দোয়া-মুনাজাতের মাধ্যমে উনাদের রেযামন্দি সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












