পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করার ফযীলত সম্পর্কে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ক্বওল শরীফ (১)
, ২৩ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৯ রবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০৩ আশ্বিন, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
(১)
শাইখ আহমদ ইবনে ছাবিত আল মাগরিবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘কিতাবুত তাফাক্কুর ওয়াল ইতিবার’ নামক কিতাবে লিখেন, ‘আমি পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠের মাধ্যমে যে সকল উপকার লাভ করেছি তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- আমি একবার স্বপ্নে দেখলাম যে, একজন লোক চিৎকার করে বলছেন, ‘যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে দেখা করতে চায় সে আমার সঙ্গে আসুক। ’ দেখলাম যে অনেক লোক এ কথা শুনে উনার দিকে দৌঁড়াতে আরম্ভ করলেন। উনাদের সকলের পোশাক সাদা রংয়ের ছিল। আমি উনাদের মধ্যে একজনকে বললাম ‘মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, আপনি আমাকে বলুন! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোথায় আছেন? তিনি আমাকে বললেন, ‘অমুক স্থানে। ’ আমি তখন পবিত্র দুরূদ শরীফ উনার উসীলা দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফে মুনাজাত করতে লাগলাম যেন তিনি আমাকে সবার আগে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছে দেন। এমন সময় দেখলাম যে; বিজলীর মত এক বস্তু এসে আমাকে দ্রুত উনার নিকট পৌঁছে দিলো। সুবহানাল্লাহ! আমি দেখলাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ক্বিবলা মুখী হয়ে বসে আছেন এবং উনার চেহারা মুবারক নূরুর রহমত মুবারক হতে নূর মুবারক বিচ্ছুরিত হচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ! আমি তখন বললাম, আসসালামু আলাইকুম ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি বলেন, মারহাবাম বিকা। আমি তখন উনার কোল মুবারকে নূরুল আযহার মুবারকে আমার মাথা রেখে গড়াগড়ি দিতে লাগলাম। অতঃপর বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে দয়া করে কিছু নছীহত মুবারক করুন যা দ্বারা আমি উপকৃত হতে পারি। তিনি বললেন, ‘আমার প্রতি বেশি বেশি পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করুন। ’ আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি জামিন হন যেন আমি মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হতে পারি। তিনি বলেন, ‘আমি জামিন হয়েছি যে আপনার মৃত্যু ঈমানের সাথে হবে। সুবহানাল্লাহ! আমি আবার বললাম ‘ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি জামিন হন যেন আমি মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হতে পারি। ’ তিনি বললেন, আপনার ঈমানের সাথে মৃত্যু হওয়ার আমি জামিন হলাম। ’ সুবহানাল্লাহ! তৃতীয়বার ঐরূপ জিজ্ঞাসা করায় তিনি বললেন, ‘মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণ ঈমানের সাথে মৃত্যু হওয়াই কামনা করে থাকেন। সেই জন্যই আমি আপনার ‘খাতিমা বিল খাইরের’ জন্য জামিন হলাম। ’ সুবহানাল্লাহ!
(২)
ইমাম আবু আব্দুল্লাহ ইবনু নোমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাব ‘মিছবাহুয যালাম’ উনার মধ্যে লিখেন, ‘স্বপ্নে আলিম উনাদের এক বৃহৎ জামায়াতকে দেখলাম। উনাদের অবস্থা অতি উত্তম দেখতে পেলাম। উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম, কিভাবে আপনারা এত উন্নত অবস্থা প্রাপ্ত হলেন? উনারা বললেন, অধিক হারে পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি এরূপ অবস্থা দান করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
(৩)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল হিকাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘আমি হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন? তিনি বললেন, আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং উচ্চ মর্যাদা প্রদান করেছেন। আমি বললাম কিসের বদৌলতে আপনার এই মর্যাদা লাভ হলো? তিনি বললেন, ‘কিতাবুর রিসালাহ’ উনার মধ্যে যে পবিত্র দুরূদ শরীফ লিখা আছে তা পাঠ করার উসীলায়। ’ আমি বললাম তা কিরূপ? তিনি বললেন, সেই পবিত্র দুরূদ শরীফ এই: “ছল্লাল্লাহু তা’আলা আলা মুহাম্মাদিন আদাদা মা যাকারাহুয যাকিরূনা ওয়া আদাদা মা গাফালা আন যিকরিহিল গাফিলূন। ” ভোর হলে ‘কিতাবুর রিসালাহ উনার মধ্যে দেখলাম, বাস্তবিকই ঐ পবিত্র দুরূদ শরীফ লিখিত আছে। ’ সুবহানাল্লাহ!
(৪)
হযরত আবুল হুসাইন শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কিতাবুর রিসালাহ উনার মধ্যে লিখেছেন, ‘ছল্লাল্লাহু তায়ালা আলা মুহাম্মাদিন কুল্লামা যাকারাহুয যাকিরূনা ওয়া গাফালা আন যিকরিহিল গাফিলূন। ’ উনার জন্য আপনার পক্ষ থেকে কি পুরস্কার রয়েছে? তিনি বললেন, তার পুরস্কার এই যে, তাকে কিয়ামত দিবসে হিসাব দেয়ার জন্য দাঁড়াতে হবে না। সুবহানাল্লাহ!
(৫)
হযরত রাশিদুল আক্তার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘মিশরে আবু সাইদুল খাইয়াত নামে আমাদের এক জাহিদ প্রতিবেশী ছিলেন। তিনি কারো সাথে মিশতেন না এবং কোন মজলিসেও উপস্থিত হতেন না, একমাত্র ইবনে রফিক্ব উনার মজলিস ব্যতীত। উনাকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বললেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বপ্নে দেখলাম। তিনি বললেন, ‘ইবনে রফিক্ব উনার মজলিসে যান। কারণ, তিনি অধিক পরিমানে উনার উপর পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করেন। সুবহানাল্লাহ!
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যা খাওয়া হারাম করা হয়েছে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












