পবিত্র মসজিদ ও পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলম
পবিত্র মসজিদ ভাঙ্গার অপচেষ্টা করা হলে বা পবিত্র মসজিদের ইজ্জত-হুরমত বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করা হলে এলাকাবাসী বা মুছল্লীদের দায়িত্ব-কর্তব্য কি?
, ১৯ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৭ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২২ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
عن حضرت ابى سعيدن الخدرى رضى الله تعالى قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من را منكم منكرا فليغيره بيده فان لـم يستطع فبلسانه فان لـم يستطع فبقلبه وذلك اضعف الايمان. وفى رواية ليس وراء ذلك من الايمان حبة خردل.
অর্থ: হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় বা হারাম কাজ সংঘটিত হতে দেখে সে যেনো তা হাত দ্বারা বাধা দেয়। যদি সে তা হাত দ্বারা বাধা দিতে না পারে তাহলে সে যেনো যবান দ্বারা বাধা দেয়। যদি যবানের দ্বারাও বাধা দিতে না পারে তাহলে যেনো অন্তরে ঘৃণা করে উক্ত অন্যায় বা হারাম কাজ থেকে দূরে সরে থাকে। আর এটা সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচয়।” অন্য বর্ণনায় এসেছে, এরপর ঈমানের আর সরিষা পরিমাণ অংশও অবশিষ্ট নেই।”
অর্থাৎ প্রথমতঃ হাতে বাধা দেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা হাতে বাধা দিবে না। দ্বিতীয়তঃ মুখে বাধা দেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা মুখে বাধা দিবে না। তৃতীয়তঃ অন্তরে খারাপ জেনে যারা দূরে সরেও থাকবে না। তাদের মূলত ঈমানই নেই।
আর দূরে সরে যাওয়ার যেহেতু কোন জায়গা নেই সেহেতু ঈমান-আমল বাঁচাতে সম্মিলিতভাবে কঠোর প্রতিবাদ করতে হবে। এটা ফরজ। আর প্রতিবাদের বিভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে। সংবাদ সম্মেলন করা, হাইকোর্টে রিট করা, সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করা ইত্যাদি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ওযূ ব্যতীত আযান দেয়া মাকরূহ তানযীহী। এ মাকরূহ তানযীহী কাজটা অহরহ করলে পুরো মহল্লাবাসীর উপর গযব নাযিল হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। অনুরূপ প্রত্যেক জামে মসজিদে কমপক্ষে একজন রোযাদারকে রমাদ্বান শরীফের শেষ ১০ দিন সুন্নতময় ই’তিকাফ করা কর্তব্য। অন্যথায় মহল্লাবাসী সকলেই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরকের কারণে কবীরা গুনাহে গুনাহগার হবে।
এখন মুয়াযযিনের মাকারূহে তানযীহী আমলের কারণে মহল্লাবাসী সকলেই যদি গযবের সম্মুখীন হয় এবং একজন রোযাদার ই’তিকাফ না করলে পুরো মহল্লাবাসী সকলেই যদি কবীরা গুনাহের উপযুক্ত হয়, তাহলে কোন এলাকায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ঘর মসজিদ ভাঙ্গলে সে এলাকাবাসী যে কত কঠিন আযাব-গযবের উপযুক্ত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قَالَ النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَكَلَّمَ بِكَلَامِ الدُّنْيَا فِىْ خَـمْسَةِ مَوَاضِعٍ اَحْبَطَ اللهُ تَعَالـٰى مِنْهُ عِبَادَةَ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً اَلْاَوَّلِ فِـى الْـمَسْجِدِ وَالثَّانِـىْ فِى تِلَاوَةِ الْقُرْاٰنِ وَالثَّالِثِ فِـىْ وَقْتِ الْاَذَانِ وَالرَّابِـــعِ فِـىْ مَـجْلِسِ الْعُلَمَاءِ وَالْـخَامِسِ فِـىْ زِيَارَةِ الْقُبُوْرِ
অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি পাঁচ স্থানে দুনিয়াবী কথা বলবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার ৪০ বছরের ইবাদাত নষ্ট করে দিবেন। অর্থাৎ তার উক্ত অপরাধের কারণে ৪০ বৎসরের আমল নষ্ট হয়ে যায়। ১. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার মধ্যে, ২. পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার সময়, ৩. সম্মানিত আযান উনার সময়, ৪. আলিম-উলামাগণ উনাদের মজলিসে এবং ৫. ক্ববর যিয়ারতের সময়।” (তাফসীরে আহ্মদী ৭১০ পৃষ্ঠা, লুবাবুল হাদীছ লিলইমাম জালালুদ্দীন আস সুয়ূত্বী ১/১৩)
এখন বলার বিষয় হচ্ছে, পবিত্র মসজিদ উনার মধ্যে সাধারণ দুনিয়াবী কথা বলার অপরাধে যদি ৪০ বছরের ইবাদত বা আমল নষ্ট হয়ে যায় তাহলে মহাপবিত্র মসজিদ যদি ভেঙ্গে ফেলা হয় তাহলে তার অপরাধ কত বেশি বা কত কঠোর হবে সেটাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। আর মসজিদ ভাঙ্গার পর রাস্তা বা অন্য কোন কিছু নির্মাণ করা হলে, সেখানে হারাম, নাজায়িয, কুফরী, শেরেকী করা হলে, গান-বাজনা করা হলে, শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ করা হলে, যানবাহন চলাচল করলে অথবা বেদ্বীন-বদদ্বীন অপবিত্র মানুষ যাতায়াত করলে, কত কঠিন কবীরাহ গুনাহ এবং কত আযাব-গজব পতিত হবে সেটা মানুষের কল্পনার বাইরে। সেটাই বলা হয়েছে যে, মসজিদ ভাঙ্গার অপরাধ হচ্ছে কুফরী। আর কেউ কুফরী করলে তার যিন্দেগীর সমস্ত নেক আমল নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে তার ঈমানও নষ্ট হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ! অর্থাৎ সে মু’মিন মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে কাট্টা কাফির, মুনাফিক ও মুরতাদে পরিণত হয়ে যায়। যদিও সে মুলমান দাবি করুক না কেন, তার মুসলমানী নাম হোক না কেন, তার পিতা-মাতা, ভাই-বোন মুসলমান হোক না কেন। নাউযুবিল্লাহ!
অতএব, পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয হচ্ছে, পবিত্র মসজিদ বিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধে সর্বোচ্চ প্রতিবাদ ও আন্দোলন করা।
দলীলসমূহ: আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে কুরতুবী, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ফতওয়ায়ে শামী, দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার ইত্যাদি।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












