পবিত্র ‘ছলাতুল জুমুয়াহ’ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত সুন্নত নামায অর্থাৎ পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ নামায নিয়ে বাতিলপন্থিদের বিভ্রান্ত্রিকর ও মিথ্যা বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জাওয়াব (৩)
, ২৫ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৯ সাদিস, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
একাধিক হাদীছ শরীফ বিশারদগণ উনারা ‘আল ফাওয়াইদ’ কিতাবের উদ্ধৃতিতে এই হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন এবং সনদ নির্ভরযোগ্য বলেছেন। যেমন- হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘আশ শামায়িলুশ শরীফাহ’ কিতাবে উল্লেখ করেন-
وَاقْتصر عَلَيْهِ مَعَ وُرُوده من طَرِيق مَقْبُول فقد رَوَاهُ الخلعي رحمة الله عليه فِي فَوَائده من حَدِيث سيدنا حضرت كرم الله وَجهه عليه السلام قَالَ الْحَافِظ الزين الْعِرَاقِيّ رحمة الله عليه وَإِسْنَاده جيد
অর্থ: “এ কথার উপরই সন্তুষ্ট থাকা উচিত যখন এই হাদীছ শরীফখানা আরেকটি গ্রহণযোগ্য সনদে বর্ণিত হয়েছে। যেটা ইমাম খিলা‘য়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘আল ফাওয়াইদ’ কিতাবে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সূত্রে হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম যাইনুদ্দীন ইরাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সনদ জায়্যিদ বা উত্তম। ” (আশ শামায়িলুশ শরীফাহ ৩০৭ পৃষ্ঠা, ফাইযুল কাদীর ৫/২৭৫, আত তানবীর শরহে জামিউছ ছগীর ৮/৫৬৬ ইত্যাদি)
ইমাম শিহাবুদ্দীন বুছীরি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
رواه أبو الحسن الخلعي رحمة الله عليه في فوائده بإسناد جيد من طريق أبي إسحاق عن عاصم بن ضمرة عن سيدنا حضرت كرم الله وَجهه عليه السلام عن النبي صلى الله عليه وسلم
অর্থ: “আবুল হাসান খিলা‘য়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘ফাওয়াইদ’ গ্রন্থে উত্তম সনদে হযরত আবূ ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে হযরত আছিম ইবনে দ্বমরাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে, তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন। ” (মিছবাহুয যুজাজাহ ফী যাওয়ায়িদে ইবনে মাজাহ ১/১৩৬)
যারা চার রাকায়াত ক্বাবলাল জুমুয়া নামাযকে বিদয়াত বলতে চায় তাদের উদ্দেশ্য করে হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
كَيْفَ وَقَدْ جَاءَ بِإِسْنَادٍ جَيِّدٍ كَمَا قَالَ الْحَافِظُ الْعِرَاقِيُّ رحمة الله عليه أَنَّهُ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُصَلِّي قَبْلَهَا أَرْبَعًا
অর্থ: “উত্তম সনদে বর্ণিত হওয়া সত্ত্বেও এটা অর্থাৎ পবিত্র জুমুয়ার নামাযের পূর্বে চার রাকায়াত ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ কিভাবে বিদয়াত হতে পারে? যেমন- ইমাম যাইনুদ্দীন ইরাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ছলাতুল জুমুয়াহ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত নামায মুবারক পড়েছেন। ” সুবহানাল্লাহ! (মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ ৩/৮৯৩)
বিগত পর্বসমূহের বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, একাধিক হাদীছ শরীফ বিশারদগণ এই সম্মানিত হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন এবং সনদ নির্ভরযোগ্য বলেছেন।
উনারা হচ্ছেন-
(১) ইমাম ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। (বিছাল শরীফ ২৬০ হিজরী),
(২) ইমাম আবুল হাসান খিলায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৪৯২ হিজরী),
(৩) হাফিয যাইনুদ্দীন ইরাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৮০৬ হিজরী),
(৪) হাফিয আবু যুরআ ইরাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৮২৬ হিজরী),
(৫) হাফিয শিহাবুদ্দীন বুছীরি রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৮৪০ হিজরী),
(৬) হযরত ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৮৫২ হিজরী)
(৭) ইমাম জালালুদ্দী সূয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৯১১ হিজরী),
(৮) মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ১০১৬ হিজরী),
এই পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনাকে গ্রহণযোগ্য বলা এবং উনাদের কর্তৃক বর্ণনা করার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, প্রথম হাদীছ শরীফখানা ছহীহ এবং নির্ভরযোগ্য।
আর উছূলে হাদীছ শরীফ সম্পর্কে যাদের প্রাথমিক ধারণা আছে তারাও জানে যে, কোনো দুর্বল হাদীছ শরীফ উনার সমর্থনে যদি ছহীহ হাদীছ শরীফ পাওয়া যায়, তাহলে সেই হাদীছ শরীফও ছহীহর আওতাভুক্ত হয়ে যায়, আর দুর্বল থাকে না। সেই হিসেবেও উপরে উল্লেখিত সমস্ত পবিত্র হাদীছ শরীফই ছহীহ।
একই সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ বা পবিত্র জুমুয়াহর নামাযের পূর্বের ৪ রাকায়াত নামায এটা মারফু’ হাদীছ শরীফ দ্বারাই সাব্যস্ত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ছলাতুল জুমুয়াহ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত ছলাত মুবারক আদায় করতেন। সুবহানাল্লাহ! আর এই নামাযই ক্বাবলাল জুমুয়াহ্ নামে পরিচিত।
সুতরাং যারা বলে ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ বলতে কোনো নামায নেই, এর কোনো দলীল নেই। নাঊযুবিল্লাহ! তারা একদিকে চরম জাহিল অন্যদিকে কাট্টা মিথ্যাবাদী। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ
অর্থ: “মিথ্যাবাদীদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত। ” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬১) (চলবে... ইনশাআল্লাহ!)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যা খাওয়া হারাম করা হয়েছে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












