পবিত্র ‘ছলাতুল জুমুয়াহ’ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত সুন্নত নামায অর্থাৎ পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ নামায নিয়ে বাতিলপন্থিদের বিভ্রান্ত্রিকর ও মিথ্যা বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জাওয়াব (৮)
, ২৯ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২২ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০৬ পৌষ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পূর্বের পর্বগুলোতে সুস্পষ্ট দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণ করা হয়েছে যে, পবিত্র ক্বাবলাল জুমুয়াহ নামায ৪ রাকায়াত। কোনো হক্ব তালাশী ব্যক্তির বুঝার জন্য যেটা যথেষ্ট। এ পর্বে পবিত্র ক্বাবলাল জুমুয়াহ নামায উনার হুকুম নিয়ে আলোচনা করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
৪ রাকায়াত পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ নামায উনার হুকুম:
পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ নামায ৪ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। যেমন এ বিষয়ে বুখারী শরীফের বিখ্যাত শরাহগ্রন্থ ‘ফাতহুল বারীতে’ উল্লেখ রয়েছে-
وأكثر العلماء على أنها سنة راتبة منهم الأوزاعي والثوري وأبو حنيفة رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وأصحابه وهو ظاهر كلام أحمد رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وقد ذكره القاضي أبو يعلى رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ في شرح المذهب وابن عقيل رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وهو الصحيح عند أصحاب الشافعي
অর্থ: “আর অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এর উপর ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, ক্বাবলাল জুমুয়াহ নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। যেমন- ইমাম আওযায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং উনার আছহাবগণ উনারা। আর এটাই হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্পষ্ট অভিমত, যেটা হযরত ইমাম কাযী আবূ ই‘য়ালা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘শরহুল মাযহাব’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন। ইবনে আক্বীল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অভিমতও এটাই। আর শাফেয়ী মাযহাব উনার অনুসারীদের নিকট এটাই বিশুদ্ধ ফতওয়া।” সুবহানাল্লাহ! (ফাতহুল বারী ৫/৫৪৩)
এখান থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো অধিকাংশ/প্রায় সকল ইমামগণ উনাদের ফতওয়া মতে ৪ রাকায়াত পবিত্র ক্বাবলাল জুমুয়াহ নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। আর ফিক্বহের কিতাবসমূহে সেটাই উল্লেখ রয়েছে যে, ৪ রাকায়াত পবিত্র ক্বাবলাল জুমুয়াহ নামায উনার হুকুম হচ্ছে- পবিত্র যোহরের নামাযের পূর্বের ৪ রাকায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ উনার অনুরুপ। যেমন ‘বাহরুর রায়েক্ব’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
وَحُكْمُ الْأَرْبَعِ قَبْلَ الْجُمُعَةِ كَالْأَرْبَعِ قَبْلَ الظُّهْرِ
অর্থ: “আর ৪ রাকায়াত পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ নামায উনার হুকুম হচ্ছে, পবিত্র যোহর নামায উনার পূর্বের ৪ রাকায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ উনার অনুরুপ।” (বাহরুর রায়েক্ব ৪/৩৫০)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-
وَقَالَ صَاحِبُ الْبَحْرِ وَحُكْمُ الْأَرْبَعِ قَبْلَ الْجُمُعَةِ كَاَلَّتِي قَبْلَ الظُّهْرِ
অর্থ: “আর ‘বাহরুর রায়েক্ব’ গ্রন্থকার হযরত ইবনে নাজীম মিশরী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৯৭০ হিজরী) তিনি বলেন, ৪ রাকায়াত পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ নামায উনার হুকুম, পবিত্র যোহর নামায উনার পূর্বের ৪ রাকায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামায উনার অনুরুপ।” সুবহানাল্লাহ! (দুরারুল হুককাম শরহে গুরারিল আহকাম ২/৫৭)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-
وحكم الأربع قبل الجمعة كالتي قبل الظهر
অর্থ: “আর ৪ রাকায়াত পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ নামায উনার হুকুম, পবিত্র যোহর নামায উনার পূর্বের ৪ রাকায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ উনার অনুরুপ।” (মারাকিউল ফালাহ পৃষ্ঠা নং ১৯৫)
আরো বর্ণিত রয়েছে-
الأربع قبل الجمعة كالأربع قبل الظهر
অর্থ: “৪ রাকায়াত পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ নামায, পবিত্র যোহর নামায উনার পূর্বের ৪ রাকায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ উনার অনুরুপ।” (বিনায়াহ শরহুল হিদায়াহ্ ২/৫০৭)
‘দুররুল মুখতার’ কিতাব প্রণেতা হযরত আলাউদ্দীন হাছকাফী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ১০৮৮ হিজরী) তিনি ৪ রাকায়াত পবিত্র সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামাযের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন-
(وَسُنَّ) مُؤَكَّدًا (أَرْبَعٌ قَبْلَ الظُّهْرِ وَ) أَرْبَعٌ قَبْلَ (الْجُمُعَةِ وَ) أَرْبَعٌ (بَعْدَهَا بِتَسْلِيمَةٍ)
অর্থ: “আর সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামায হচ্ছে- পবিত্র যোহরের নামাযের পূর্বে ৪ রাকায়াত, পবিত্র জুমুয়ার নামাযের পূর্বে ৪ রাকায়াত এবং পবিত্র জুমুয়ার নামাযের পরে এক সালামে ৪ রাকায়াত।” (রদ্দুল মুহতার ৫/১৩৮, দুররুল মুখতার ২/১২)
আর কেউ যদি সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করে তাহলে সে ওয়াজিব তরকের গুনাহে গুনাহগার হবে। এমনকি সে গোমরাহী ও ভৎসনার উপযুক্ত হয়ে যাবে। যেমন কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
كَانَتْ السُّنَّةُ الْمُؤَكَّدَةُ قَرِيبَةً مِن الْوَاجِبِ فِي لُحُوقِ الْإِثْمِ كَمَا فِي الْبَحْرِ، وَيَسْتَوْجِبُ تَارِكُهَا التَّضْلِيلَ وَاللَّوْمَ
অর্থ: “গুনাহের ক্ষেত্রে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ ওয়াজিবের নিকটবর্তী। যেমনটা বাহরুর রায়েক্ব কিতাবে বর্ণিত রয়েছে। আর সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরককারী গোমরাহী ও ভৎসনার উপযুক্ত।” (রদ্দুল মুহতার ৫/১৩৯, দুররুল মুখতার ২/১২)
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো পবিত্র জুমুয়ার নামাযের পূর্বে নির্দিষ্টভাবে ৪ রাকায়াত নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অর্থাৎ আবশ্যকীয়ভাবেই এই ৪ রাকায়াত নামায আদায় করতে হবে। আর কেউ যদি এই নামায ছেড়ে দেয় তাহলে সে ওয়াজিব তরকের গুনাহে গুনাহগার হবে এবং গোমরাহী ও ভৎসনার উপযুক্ত হয়ে যাবে। নাঊযুবিল্লাহ! অর্থাৎ কেউ যদি স্বেচ্ছায় সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ ছেড়ে দেয় তাহলে সে গোমরাহ, পথভ্রষ্ট হবে এবং কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।
কাজেই যারা বলে, পবিত্র জুমুয়ার নামাযের পূর্বে নির্দিষ্ট কোনো সুন্নত নামায নেই তারা যে আশাদ্দুদ দরজার জাহিল, দাজ্জালে কাযযাব এবং চরম পর্যায়ের গোমরাহ সেটা এখান থেকে আবারও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো।
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












