সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র নছীহত মুবারক:
পরকালে নেককার ও বদকারদের অবস্থা কিরূপ হবে
, ১৯ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৬ ছানী, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৫ জুলাই, ২০২৫ খ্রি:, ৩১ আষাঢ়, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মহিলাদের পাতা
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন- তোমরা তোমাদের কথাগুলো গোপন রাখো বা প্রকাশ করো, নিশ্চয়ই তিনি অন্তরের অন্তঃস্থলের খবর জানেন। তিনি কি জানবেন না, যিনি সৃষ্টি করেছেন! তিনি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ের খবর রাখেন। তিনি যমীনকে তোমাদের বশীভূত করেছেন বা অধীন করেছেন। তোমরা এর উপর (ভূ-পৃষ্ঠে) চলো এবং তা থেকে উৎপন্ন রিযিক খাও আর যমীন থেকেই তোমাদের পুনরুত্থান। যিনি আসমানে আছেন, তোমরা কি উনার থেকে নিরাপদ? তিনি তোমাদেরসহ যমীনকে দাবিয়ে দিবেন, তখন যমীন কাঁপতে থাকবে। [ পবিত্র সূরা মুলক : আয়াত শরীফ ১৩-১৬]
আমরা আমাদের কথা-বার্তা, কাজ-কর্ম যা কিছু আছে, তা প্রকাশ করি বা গোপন রাখি যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তিনি অবশ্যই সে বিষয়ের খবর রাখেন। তিনি অন্তরের অন্তঃস্থলের খবর রাখেন। তিনি যমীনকে আমাদের অধীন করে দিয়েছেন, তাতে কাজ-কর্ম চলা-ফেরা করার জন্য এবং খাদ্য উৎপাদন করে খাওয়ার জন্য। যাতে উনার নিয়ামত ভোগ করে, মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য করার মাধ্যমে শোকরগুজারী করতে পারি। আর এ বিষয়েই আমাদেরকে পরীক্ষা করা হবে।
যমীন থেকেই আমাদের পুনরুত্থান হবে। যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি যমীনকে দাবিয়ে দিবেন বা ধ্বংস করে দিবেন, তখন তারা নিরাপত্তা পাবে কোথায় যারা মহান আল্লাহ পাক উনার কথা মুবারক বিশ্বাস করে উনার আনুগত্য করে না? একমাত্র কাফিররাই পুনরুত্থান দিবসকে অস্বীকার করে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
زَعَمَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا أَنْ لَّنْ يُبْعَثُوا قُلْ بَلَى وَرَبِّي لَتُبْعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلْتُمْ ، وَذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ ﴿۷﴾ سورة التغابن
কাফিররা ধারণা করে যে, তারা কখনোই পুনরুত্থিত হবে না। আপনি বলুন, হ্যাঁ, আমার রব মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! অবশ্যই তোমাদেরকে কবর থেকে উঠানো হবে। অতঃপর তোমরা যা আমল করেছো সে বিষয়ে তোমাদেরকে অবহিত করা হবে। আর এটা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য সহজ। [ পবিত্র সূরা তাগাবুন : আয়াত শরীফ ৭]
পুনরুত্থানের বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য কোনো কঠিন বিষয় নয়। কারণ যিনি এককভাবে অস্তিত্বহীন সবকিছুকে অস্তিত্ব দান করেছেন তিনিই তো সেই অস্তিত্বকে মৃত্যু দিয়ে পুনরায় জীবিত করবেন। কাজেই সকলেরই পুনরুত্থান হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করবে না এবং আয়াত শরীফকে মিথ্যারোপ করবে তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ الخَالِدِينَ فِيهَا . وَبِئْسَ الْمَصِيرُ (۱۰) سورة التغابن
আর যারা কুফরী করবে এবং আমার আয়াত শরীফকে মিথ্যারোপ করবে তারাই জাহান্নামী হবে। তারা অনন্তকাল সেখানে থাকবে। আর এটা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল! [ পবিত্র সূরা তাগাবুন : আয়াত শরীফ ১০]
জাহান্নামের ভয়াবহতা সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে উল্লেখ আছে-
إِذَا الْقُوْا فِيْهَا سَمِعُوْا لَهَا شَهِيفًا وَهِيَ تَفُورُ (٧) تَكَادُ تَرَمَيَّزُ مِنْ الْغَيْظِ كُلَّمَا أُلْقِيَ فِيهَا فَوْجٌ سَأَلَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَذِيرٌ (۸) سورة الملك
যখন তাদেরকে সেই জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তারা (আগুনের) গর্জন শুনতে পাবে এবং তা টগবগ করতে থাকবে। আগুন গোম্বায় ফেটে পড়ার উপক্রম হবে। যখনই কাউকে তাতে (জাহান্নামে) নিক্ষেপ করা হবে, তখন জাহান্নামের দায়িত্বে নিয়োজিত হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করবেন, তোমাদের কাছে কি কোনো সতর্ককারী আসেননি? অর্থাৎ এই বিষয়ে কেউ কি তোমাদেরকে সতর্ক করেননি? [ পবিত্র সূরা মুলক : আয়াত শরীফ ৭-৮]
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে-
قَالُوا بَلَى قَدْ جَاءَنَا نَذِيرٌ فَكَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ اللَّهُ مِنْ شَيْءٍ إِنْ أَنْتُمْ إِلَّا فِي ضَلالٍ كبيرٍ (۹) وَقَالُوْا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ (١٠) فَاعْتَرَفُوا بِذَنْبِهِمْ فَسُحْقًا لِأَصْحَابِ الشعير (۱۱) إِنَّ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كبير (۱۲) سورة الملك
তখন অপরাধীরা বলবে, অবশ্যই আমাদের কাছে সতর্ককারী এসেছিলেন। অতঃপর আমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছি এবং আমরা বলেছি, মহান আল্লাহ পাক তিনি কিছুই নাযিল করেননি। (তখন সেই হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি বলবেন) তোমরা তো ভীষণ বিভ্রান্তির মধ্যে ছিলে! (অপরাধীরা আফসোস করে বলবে) যদি আমরা (সতর্ককারী) উনাদের কথা শুনতাম অথবা বুঝতাম অর্থাৎ বুঝার চেষ্টা করতাম, তাহলে তো আমরা জাহান্নামী হতাম না! তারা তাদের গুনাহর কথা স্বীকার করবে। তখন (হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম বলবেন) জাহান্নামীদেরকে, দূর হয়ে যা (হতভাগা জাহান্নামীর দল)! নিশ্চয়ই যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে না দেখে ভয় করবে অর্থাৎ ভয় করে গুনাহর কাজ থেকে বেঁচে থাকবে, তাদের জন্য থাকবে ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান। [ পবিত্র সূরা মুলক : আয়াত শরীফ ৯-১২]
এভাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি জাহান্নামের ভয়াবহ আযাবের বাস্তব রূপ বর্ণনা করে বান্দা-বান্দীদেরকে সতর্ক করেছেন। আর তা সহজে উপলব্ধির জন্য সতর্ককারীও পাঠিয়েছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত পাঠাবেন। এই সতর্ককারীগণ উনাদের নছীহত মুবারক যারা গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে গুনাহর কাজ থেকে বিরত থাকবেন, উনাদের জন্য মৃত্যুর পর আর কোনো আফসোস থাকবে না। উনারাই প্রকৃত ঈমানদার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৯)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৩)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












