পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
(রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার ওয়াজ শরীফ থেকে সংকলিত)
, ১৯ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১২ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
(ধারাবাহিক)
সেই লোকের যে স্ত্রী ছিল সেও ভাসতে ভাসতে এক এলাকায় গিয়ে পৌঁছেছিল। সে এমন এক লোকের বাড়ীর পাশে গিয়ে পৌঁছল, যে লোকটা ছিল নেককার, দ্বীনদার, পরহেজগার, আল্লাহওয়ালা। সে সকালে যখন সেই মহিলাকে দেখলো তখন চিন্তা করলো, কোথা থেকে এই বেগানা মহিলা এখানে আসলো? পরে তারা বুঝতে পারলো, নৌকা ভেঙ্গে এখানে এসেছে। তাই সেই লোকটা মহিলাকে আশ্রয় দিল এবং কয়েক বছর ওখানে রাখলো। যখন নেককার লোকটি সংবাদ পেলো, একজন লোক, সে খুব দানশীল, গরীবকে সাহায্য করে থাকে। তখন সেই নেককার লোকটা যার অবস্থা মোটামুটি ছিল সে বললো, “আমি আর কতদিন তোমাকে লালন-পালন করবো? তুমি এক কাজ করো, আমার সাথে চল, সেই নেককার লোকের কাছে তোমাকে পৌঁছে দেই, সে তোমার একটা ব্যবস্থা করে দিবে। অথবা তার কাছে সাহায্য নিয়ে আসি, তোমার চলাচলের জন্য যেন সুবিধা হয়। ”
এই বলে সেই মহিলাকে সে নিয়ে আসলো এক নৌকা দিয়ে। এনে তার ঘাটে বেঁধে সেই দানশীল লোকের কাছে সে পরামর্শ করলো কি করা যেতে পারে? সে কিছু দান-খয়রাত করলো। রাত অনেক হয়ে গেল। সে দানশীল ব্যক্তি বললো, তুমি এত রাতে যাবে কোথায়? তুমি থাক, তোমার থাকার এবং খাওয়ার ব্যবস্থা আমি করবো। তখন সে বললো যে, আমি তো একা নই, আমার সাথে আমার নৌকাতে একজন মহিলা রয়েছেন। যার জন্য আমি তোমার এই দান খয়রাতগুলো গ্রহণ করেছি। সে অভাবগ্রস্থা। তখন সেই পুরুষ বললো- তাহলে এক কাজ করো। তাকে পাহারা দেয়ার জন্য আমি লোক দিচ্ছি। তুমি চিন্তা করো না। পাহারা দেয়ার জন্য লোক দিলো, সেই ছেলে দু’টাকে দিল পাহারা দেয়ার জন্য।
সেই ছেলে দু’টা এখানে এসে সৎচরিত্রবান, নেককার, পরহেজগার, দ্বীনদার এবং তাদের সততায় তারা এখানে মোটামুটি পরিচিতি লাভ করে নেককার হিসেবে। যেহেতু তারা সৎচরিত্রবান ছিল সে জন্য সেই ছেলে দু’টাকে পাহারা দেয়ার জন্য দেয়া হলো, সেই নৌকার পাশে যখন তারা গিয়ে পৌঁছল, তখন তারা পরস্পর বললো যে, “আজকে রাত্রে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কি করবো সারা রাতে? করার তো কিছু নেই। এক কাজ কর তুমি কোথা থেকে এখানে আসলে? আর আমি বা কোথা থেকে আসলাম? আমরা পরস্পর আমাদের পিছনের জীবনের কথা আলোচনা করি, তাতে রাত্র শেষ হয়ে যাবে। ”
তখন প্রথম যে ছেলেটা সেখানে এসেছে, সে তার ইতিহাস বর্ণনা করলো যে, আমরা এরকম ছিলাম, খুব সুখে ছিলাম, শান্তিতে ছিলাম। আমার পিতা, আমার এক ভাই, আমার মা ছিলেন কিন্তু হঠাৎ আমরা, আমার দাদার ঋণ পরিশোধ করে শেষ পর্যন্ত নিঃস্ব হয়ে যাই, সম্বলহীন হয়ে যাই। তখন আমরা অন্য কোথাও চলে যাওয়ার জন্য নৌকায় চড়েছিলাম, নৌকা ভেঙ্গে আমরা ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাই। কে কোথায় গিয়েছি? তার সংবাদ আমাদের জানা নেই, আমারটা আমিই জানি।
যখন প্রথম ছেলে একথা বললো, তখন দ্বিতীয় ছেলেটা বললো, তোমার পিতার নাম কি? সে জবাব দিল। তখন সেই ছেলেটা বললো যে, দেখ তুমি তোমার যে ভাইকে তালাশ করতেছিলে আমি মনে হয় তোমার সেই ভাই। আমার জীবনের ঠিক একই ঘটনা। আমরা দুই ভাই ছিলাম এবং হারিয়ে গিয়েছিলাম। তখন তাদের পরিচয় হয়ে গেল। সেই মহিলা নৌকায় বসে বসে সেই ঘটনা শুনলো, শুনে সে চুপ করে রইলো, কথা সে বললো না। সকালে যখন সে পুরুষ আসলো, সে তাকে দেখলো বিমর্ষ, চিন্তিত। কি ব্যাপার? সে বললো, এখানে কথা বলা যাবে না, এখানকার এলাকার যিনি মালিক, ওনার কাছে যেতে হবে। ওনার কাছে আমার কিছু কথা রয়েছে, আমি বললে হয়তো তারা (ছেলেরা) শুনবে না।
ঠিক আছে সেই লোক অপারগ হয়ে সেই মহিলাকে নিয়ে গেল সেই লোকের কাছে। সে বলল কি? কেন নিয়ে এসেছ? জবাব দিল, সে মহিলার কিছু কথা রয়েছে। লোকটা প্রথমে একটু উত্তেজিত হয়ে গেল। কি ব্যাপার? কোন অঘটন কি ঘটিয়েছে তারা? সে মহিলা বললো যে, না ‘তেমন কিছু ঘটেনি। ’ যেহেতু তার চেহারা আবৃত করা ছিল। তার চেহারা দেখা যাচ্ছিলো না। ‘তবে গত রাতে তারা একটা গল্প বলেছিল, সে গল্পটা আমি আবার শুনতে চাই। তারা যেন আবার বলে। ’
ছেলে দু’টোকে ডাকানো হলো। ডেকে বলা হলো যে, তারা যে গত রাতে কাহিনী বলেছে, সেটা আবার বলতো। পুনরায় সেই কাহিনী যখন সেই ছেলে দু’টা বলল, তখন সেই লোকটা তার আসন থেকে লাফ দিয়ে উঠে বললো যে, সত্যিই যদি এই ঘটনা সত্যই হয়ে থাকে তাহলে তো তোমরাই আমার সন্তান। আমি তোমাদের পিতা। যখন সে পরিচয় দিল, তখন সেই মহিলা বললো যে, ‘মহান আল্লাহ পাক উনার কসম আমিই তাদের মাতা। ’ যেই ঘটনা বাস্তব সত্য, সেটা তাদের মুখ দিয়ে আবার শুনার জন্য আমি বলেছি তাদের বলার জন্য। অন্য কোন কারণে নয়। তখন পরিচয় হয়ে গেল। তারা আবার পরস্পর সেখানে সুখে শান্তিতে থাকতে লাগলো।
তাদের প্রতি গায়েবী নেদা হলো ঐ ছেলের প্রতি, যে ছেলে তার পিতার ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিল যে, “তুমি তোমার পিতার ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছিলে, কষ্ট করেছো। মহান আল্লাহ পাক তোমাকে তার বদলা, জাযা-খায়ের দিয়েছেন। তোমাকে ইহকালে সুখ দেয়া হলো এবং পরকালে তোমার জন্য সুখ অপেক্ষা করতে থাকলো। ” সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সর্বাবস্থায় আজল বা তাড়াহুড়া না করে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হাশরের ময়দানে যে ৫টি প্রশ্নের উত্তর প্রত্যেককেই দিতে হবে
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (২)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৯)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৩)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












