হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
, ১৬ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৯ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) মহিলাদের পাতা
খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন-
فَاِنْ اٰمَنُوْا بِـمِثْلِ مَا اٰمَنْتُمْ بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوْا.
অর্থাৎ আপনারা অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেরূপ ঈমান মুবারক এনেছেন তদ্রƒপ যদি তারা (অন্য লোকেরা) ঈমান মুবারক গ্রহণ করতে পারে তাহলে তারা হিদায়েত মুবারক লাভ করতে পারবে। (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ : আয়াত শরীফ ১৩৭)
এ লিখনীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বেমেছাল মহব্বত মুবারক প্রকাশের কতিপয় দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(২০)
হযরত যায়েদ ইবনে দাছিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বেমেছাল আত্মত্যাগ মুবারক
সম্মানিত বদর যুদ্ধে যেসব কাফির মারা যায়, তাদের আত্মীয়-স্বজনের অন্তরে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছিলো। মহাসম্মানিত মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী সোফালা, তার দুইপুত্র এই যুদ্ধে হযরত আসেম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাতে নিহত হয়। সুতরাং সোফালা মান্নত করলো, সে হযরত আসেম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাথা মুবারকের খুলি দ্বারা শরাব পান করবে। নাউযুবিল্লাহ! অতএব সে ঘোষণা দিলো, যে ব্যক্তি হযরত আসেম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাথা মুবারক এনে দিতে পারবে তাকে একশত উট পুরস্কার দেয়া হবে।
এই ঘোষণায় আকৃষ্ট হয়ে সুফিয়ান বিন খালিদ নামক জনৈক কাফির প্রস্তুত হতে লাগলো। আজল এবং কারা নামক গোত্রের কিছু সংখ্যক লোককে সে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র মদীনা শরীফে পাঠালো। তারা নিজেদেরকে মুসলমান বলে পরিচয় দিলো। তারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট তা’লীম ও তাবলীগ অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াতের জন্য কিছু সংখ্যক লোককে তাদের এলাকাতে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করলো। বিশেষ করে হযরত আসেম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেও তাদের সাথে পাঠাবার দরখাস্ত করলো। তিনি ছিলেন একজন সুবক্তা/ সুন্দর আলোচক।
তাদের দরখাস্ত অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আসেম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে দশ জন বা ছয় জন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে পাঠালেন। উনাদের মাঝে হযরত যায়েদ ইবনে দাছিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও ছিলেন। পথিমধ্যে ঐ ছদ্মবেশী কাফিররা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। তারা উনাদের উপর আক্রমণ করার জন্য হুযায়ল গোত্রকে আহ্বান করলো।
হুযায়লীরা নিজেদের সরদার খালিদ সুফিয়ানের হত্যার প্রতিশোধের জন্য মুসলমানদের উপর রুষ্ট ছিলো। তারা ভাবলো উনাদেরকে বন্দী করে কুরাইশদের হাতে বিক্রি করলে একদিকে আমাদের সরদার খালিদ সুফিয়ানের হত্যার প্রতিশোধও গ্রহণ করা হবে। অপর দিকে প্রচুর অর্থও উপার্জন করা যাবে। সুতরাং হুযায়ল বংশের দুইশত লোক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে উনাদের উপর আক্রমণ করলো।
হযরত আসেম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শহীদ হলেন। হযরত যায়েদ ইবনে দাছিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে তারিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বন্দী হলেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে তারিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সুযোগ বুঝে হাতের বন্ধন খুলে তরবারি নিয়ে শত্রুদেরকে আক্রমণ করেন। তাদেরকে কতল করতে করতে এক পর্যায়ে তিনিও শহীদ হয়ে যান। কাফির নরপিশাচরা অবশিষ্ট দুই জন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদেরকে কুরাইশদের হাতে বিক্রয় করে দেয়।
উমাইয়ার পুত্র সাফওয়ান স্বীয় পিতার প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য হযরত যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ক্রয় করে। হযরত যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শহীদ করার জন্য উমাইয়ার পুত্র সাফওয়ান স্বীয় ক্রীতদাস নাস্তাদ এর সাথে তানঈম নামক স্থানে প্রেরণ করলো। মহাসম্মানিত মহাপবিত্র মক্কা শরীফ-এ অবস্থান করা কাফির পিশাচ নর-নারী এবং বালক বালিকারা উনার শাহাদতবরণ করার দৃশ্য অবলোকন করে আনন্দ উপভোগ করার জন্য এসে সমবেত হলো। শহীদকারী যখন তরবারি হাতে নিয়ে উনাকে শহীদ করার জন্য প্রস্তুত হলো। তখন সমবেত লোকদের মধ্য হতে হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখনও তিনি সম্মানিত ঈমান গ্রহণ করেন নি) তিনি বলে উঠলেন,
হে হযরত যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু! আপনি কী এটা পছন্দ করবেন যে, আপনাকে ছেড়ে দেয়া হবে; আপনি আপনজনদের কাছে, পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে যাবেন। আর আপনার পরিবর্তে এখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করা হবে?’
হযরত যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার ঈমানি ঈমানী কুওওয়াত উজ্জিবীত হয়ে উঠল। ঈমানি জযবায় জ্বলে উঠে গুরুগম্ভীরভাবে দ্বীপ্ত কণ্ঠে জবাব দিলেন,
‘মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমার প্রাণের বিনিময়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করা তো দূরের কথা, আমি তো এটুকুও মেনে নেব না যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপন মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হুযরা শরীফ-এ অথবা নিজ অবস্থানে থেকেই সামান্য কাঁটাবিদ্ধ হয়ে বিন্দুমাত্র তাকলীফ মুবারক (কষ্ট) গ্রহণ করবেন; আর আমি আমার আপনজনদের কাছে আরামে বসে থাকব। ’
তখন হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন-
وَاللهِ مَا رَأَيْتُ مِنْ قَوْمٍ قَطُّ اَشَدَّ حُبًّا لِّصَاحِبِهِمْ مِنْ اَصْحَابِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহিব্বীন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উনার প্রতি যেরূপ মুহব্বত ও ভক্তি পোষণ করে থাকেন, দুনিয়ার কোনো জাতির মধ্যেই তার তুলনা নেই। সুবহানাল্লাহ!
তারপর সাফওয়ানের ক্রীতদাস নাস্তাদ তরবারি দ্বারা উনাকে আঘাত করলো এবং তিনি হাসিমুখে পবিত্র কালিমা তায়্যিবাহ শরীফ পাঠ করতে করতে সম্মানিত শাহাদাত মুবারক বরণ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
খুব চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্মানিত ঈমান মুবারক কেমন ছিলো, উনাদের ছহীহ সমঝ মুবারক কেমন ছিলো! উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এত বেশী মুহব্বত মুবারক করেছেন যে, উনারা হাসিমুখে উনাদের জীবন কুরবান করে দিয়েছেন, সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক গ্রহণ করেছেন কিন্তু তবুও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম উনার সামন্য থেকে সামান্যতম তাকলীফ মুবারক হয় এমন কিছু উনারা কিছুতেই মেনে নেননি। সুবহানাল্লাহ!
যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ন্যায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত কিছুর চেয়ে সবচেয়ে বেশি মুহব্বত করার এবং উনাদের ন্যায় পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন মুরাদী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (২)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৯)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৩)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












