মন্তব্য কলাম
পর্যবেক্ষক মহল বার বার সতর্ক করছেন- “দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ তৈরী করে তাতে দেশবাসীকে জর্জরিত করে নীরবে, নিভৃতে, নারিকেল দ্বীপ বঙ্গোপসাগর, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দুর্লভ খনিজ সব মার্কিনীদের হাতে তুলে দেয়ার- তথা মার্কিনী ঘাটি গড়ার এবং মার্কিনী এজেন্ডা বাস্তবায়নের এক সর্বগ্রাসী ষড়যন্ত্র চলছে।”
, ২৮ রবিউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২২ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ২১ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ০৫ কার্তিক, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মন্তব্য কলাম
নতুন ষড়যন্ত্র হিসেবে খেলাপি ঋণ নিয়ে ছলাকলা করছে অন্তর্বর্তী সরকার
১৯ শে অক্টোবর ঋণ অবলোপন নীতিমালা আরও শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদদের মতে অচিরেই এই খেলাপী ঋণের পরিমাণ হবে ৭ লাখ কোটি টাকা
খেলাপি ঋণ মানুষের জীবনে প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ দুইভাবেই প্রভাব ফেলে।
উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহার না হওয়ায় তা সরাসরি মুদ্রাস্ফীতিকে চরমভাবে উসকে দেয়।
“যতো বেশি ঋণ খেলাপি হবে, ততোই সরকারের বাজেটে ঘাটতি হবে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। শিল্প ও এসএমই খাতে ঋণের প্রবাহ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। এতে ভালো ঋণগ্রহীতারা ঋণ পাচ্ছেন না।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা কৃষকরা মূলধন না পাওয়ার কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এতে সরবরাহ ব্যবস্থায় টান পড়ায় দ্রব্যমূল্যের ওপর মারাত্মক চাপ তৈরি হচ্ছে।
সাধারণ ব্যবসায়ীকে ঋণ দিতে গিয়ে ওই খেলাপি ঘাটতি পূরণের জন্য তাদের কাছে বেশি সুদ চাইছে ব্যাংক। এতে ভালো ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সুদ পোষাতে পণ্যের দাম বেশি রাখতে বাধ্য হচ্ছে বিক্রেতারা।
অর্থাৎ ঘুরে ফিরে সাধারণ মানুষকে সেই বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে।
সব কিছু মিলিয়ে কঠিন দুর্ভিক্ষের সরকারের পিঠে চলছে দেশ (নাউযুবিল্লাহ)
কোনো ঋণ মন্দ ও ক্ষতিজনক মানে খেলাপি হলে তা অবলোপন করতে পারবে ব্যাংকগুলো। এ জন্য শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হবে এবং গ্রাহককে ৩০ দিন আগে অবহিত করতে হবে।
এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে উন্নয়ন সহযোগী ও ঋণদাতা সংস্থাগুলোও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছে।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দুই বছর টানা মন্দ ও ক্ষতিজনক মানে খেলাপি না হলে কোনো ঋণ অবলোপন করা যায় না।
এদিকে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালার আলোকে অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নগদ প্রণোদনা প্রদান করা যাবে। কোনো ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের বিপরীতে নগদ প্রণোদনা প্রদান-সংক্রান্ত নীতিমালা না থাকলে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে তা তৈরি করতে হবে।
অর্থাৎ ঋণ অবলোপন নীতিমালা আরও শিথিল করল বাংলাদেশ ব্যাংক
খেলাপি ঋণ অবলোপনে শর্ত তুলে নিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
উল্লেখ্য নতুন ষড়যন্ত্র হিসেবে খেলাপি ঋণ নিয়ে ছলাকলা করছে অন্তর্বর্তী সরকার
উল্লেখ্য বাংলাদেশ ব্যাংক তথা অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতায় এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি
দেশে সর্বশেষ জুন মাসের শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা মোট ঋণের প্রায় চার ভাগের এক ভাগের বেশিই ইতিমধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে। গত মার্চের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। তখন খেলাপি ঋণের হার ছিল ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে ব্যাংকগুলো এ রকম তথ্যই উল্লেখ করেছে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুনে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা এ বছরের জুনে বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।
অন্তর্বর্তী সরকার কোনো রাজনৈতিক সরকার নয় এবং কোনো রাজনৈতিক ব্যবসায়িক দ্বারা প্রভাবিত নন। এ ছাড়াও কোনো দরবেশ বাবার ঝাড়ফুঁক দ্বারা প্রভাবিত নয়। তবুও এ সরকারের সময় লোন প্রভিশনিং ও রিশিডিউলিং করার জন্য তিন তিনটি পরিপত্র ও সার্কুলার জারি করা হয়। সর্বশেষ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে বিআরপিডির সার্কুলারের মাধ্যমে বলা হয় ২ শতাংশ জামানতে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করা যাবে। এর উদ্দেশ্য হলো, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যবসা করতে গিয়ে সমস্যা পড়েছে বা মার্কিন ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু ও চাঙা করতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সার্কুলারে বলা হয়, দুই শতাংশ নগদ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ পাবে। ওই ঋণটি পরিশোধের জন্য দশ বছর সময় দেওয়া হবে এবং ঋণ পরিশোধের জন্য আরও দুই বছর গ্রেস পিরিয়ড বা ঋণ পরিশোধে বিরতি সুবিধা পাবেন। যারা সুবিধা নিতে চান, তারা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আবেদন করবেন।
এখানে দুটি বিষয়ে যৌক্তিক সমালোচনা করতেই হয়। এক. ডলারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার এমন ব্যবসায়ী অর্থাৎ আমদানি ও রপ্তানিকারকের জন্য বিশেষ সুবিধা, কিন্তু ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পায় ২০২২ সাল থেকে এবং সরকার পতন হয় ২০২৪ সালের আগস্টে। দুই. বিগত সরকারের সময়, জামায়াত বা বিএনপিপন্থি ব্যবসায়ীরা কতটুকু ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পেরেছেন? কেউ কেউ বলছেন, বিগত সরকার ছিল ফ্যাসিস্ট। তাহলে এই হার কতটুকু? সুতরাং এখন সুবিধা কার জন্য দেওয়া হলো এবং ভবিষ্যৎ কী? এবারের সার্কুলারে যা পরিবর্তন হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন পাওয়ার পর ৬ মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। ঋণ পুনঃতফসিলের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আবার কেউ যদি এককালীন বা অ্যামিকেবল সেটেলমেন্ট করে, তাহলে আরও এক বছর সময় পাবে। এখানেও দুটি বিষয় সামনে আসে। এক. কেউ যদি মনে করে, ২ শতাংশ নগদ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করবে, তাহলে সে করতে পারবে। এর জন্য সব মিলিয়ে সে ১২ বছর সময় পাচ্ছে। কিন্তু তার ভবিষ্যৎ কী? ১৬ মে ২০১৯ সালে একই ধরনের সুবিধা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, যা বিআরপিডি সার্কুলার-০৫। উইকিপিডিয়া বলছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ লাখ ১৮৩ কোটি টাকা। পাঁচ বছর পরে এসে তথ্য বলছে, ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার ওপরে খেলাপি ঋণ। তার মানে, এর ভবিষ্যৎ ভালো নয়। তবু কেন এই সার্কুলার?
খুঁজে বের করতে হবে, কে প্রকৃত অর্থেই ক্ষতিগ্রস্ত। সেই প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে আপত্তি নেই। কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেই সুবাদে যদি আরও সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে, সেটি হবে দেশের অর্থনীতির জন্য বিপত্তি। আইন সংশোধনের আগে, পুরো বিষয় খতিয়ে দেখা উচিত বলে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। হয়তো সাময়িকভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে গেল, কিন্তু তার দীর্ঘ মেয়াদে কখনো সুফল বয়ে আনবে না। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, অ্যামিকেবল সেটেলমেন্ট বা এককালীন ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে এক বছর সময় দেওয়া হবে। অর্থাৎ এখানে ঋণগ্রহীতাকে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, যা ব্যাংকের কাছে মর্টগেজ ছিল, তা মুক্ত করে দেওয়া হলো। এখন ঋণগ্রহীতা হয়তো ঋণটি পূর্ণ পরিশোধ হয়ে যাবে। যা ব্যাংকে কখনোই খেলাপি হিসেবে ফিরে আসবে না।
বড়লোক বাবার এক ছেলে বখাটে ও আরেক ছেলে কিছুটা দায়িত্ববান। বাবা চান ছেলেরা নিজের পায়ে দাঁড়াক। কিন্তু মায়ের অতি আহ্লাদে শেষতক বাবা তাদের মাসে মাসে মোটাদাগের তহবিল দিতে বাধ্য হন। কিছুদিন পর দেখা গেল, বখাটে আরও বখাটে হয়েছে এবং ভালো ছেলেটিও নতুন করে ‘বাহুত্রা’ হয়ে গেছে। এটি বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের চিত্র।
বাংলাদেশের জিডিপি প্রায় ৫৭ লাখ কোটি টাকা। মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৩ লাখ কোটি টাকা আর ব্যক্তি খাতে এর পরিমাণ সাড়ে ১৭ লাখ কোটি টাকা। ব্যক্তি খাতে বিতরণ করা এ ঋণের শতকরা ২৪ ভাগ, অর্থাৎ চার ভাগের এক ভাগই আজ খেলাপি।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেই লোন প্রভিশনিং নিয়ে বিআরপিডি সার্কুলার ১৫ জারি করে। এই কারণেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাত আজ এক গভীর সংকটের মুখে। ঋণ আদায়ের দুর্বলতা ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে ব্যাংকগুলোর তারল্য কমে যাচ্ছে, আর অর্থনীতির রক্তপ্রবাহে তৈরি হচ্ছে ভয়াবহ চাপ। একদিকে আমানতকারীদের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে বিনিয়োগ ও উৎপাদন কার্যক্রমে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব।
টিকে থাকার সংগ্রামে এখন অনেক ব্যাংক সরকারি সহায়তার দিকে তাকিয়ে আছে, অথচ নতুন উদ্যোক্তারা পাচ্ছেন না প্রয়োজনীয় ঋণ। বাস্তবতা হলো এই সমস্যা আর সাময়িক নয়; এটি এখন জাতীয় অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য এক বড় হুমকি।
বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের প্রভাব দিন দিন গভীর হচ্ছে। খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি ব্যাংকগুলোর সুদ আয় কমিয়ে মুনাফা হ্রাস করছে এবং লভ্যাংশ বিতরণে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। এর সঙ্গে সঙ্গে আমানতকারীদের মধ্যে আস্থা কমে যাচ্ছে, যা নগদ উত্তোলনের প্রবণতা বাড়াচ্ছে এবং ব্যাংকের দৈনন্দিন পরিচালনায় চাপ সৃষ্টি করছে। নতুন ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা সংকুচিত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন সম্ভব হচ্ছে না, ফলে অর্থনীতির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
খেলাপি ঋণ মেটাতে সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অতিরিক্ত অর্থ সরবরাহ করতে হয়, যা বাজারে অতিরিক্ত নগদ যোগ করে মুদ্রাস্ফীতি বাড়াতে পারে। একই সঙ্গে জনগণের করের টাকাই ব্যবহার হয় ব্যাংক সহায়তার জন্য; যা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য জনসেবা খাতে ব্যয় হওয়া উচিত ছিল। খেলাপি ঋণ যদি আরও বৃদ্ধি পায়, তবে এটি সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
প্রশ্ন হলো, আগে খেলাপি ঋণ মন্থর গতিতে বাড়লেও এখন কেন ক্ষিপ্র গতিতে বাড়ছে।
কোনো ঋণ সময়মতো পরিশোধ করা না হলে খেলাপি হয়ে যায়। ব্যাংকগুলো আমানতকারীর অর্থই ঋণ হিসেবে বিতরণ করে। বিতরণ করা ঋণ সময়মতো ফেরত না পেলে আমানতকারীরা টাকা তুলতে সমস্যায় পড়েন। এখন যে কটি ব্যাংক গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে সমস্যায় পড়েছে, সেসব ব্যাংকের ঋণ আদায় হচ্ছে না।
গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ব্যবসায়ীদের অনেকের ব্যবসা স্তিমিত হয়ে পড়েছে-এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে।
খেলাপি ঋণ মানুষের জীবনে প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ দুইভাবেই প্রভাব ফেলে।
উৎপাদনের উদ্দেশ্যে ব্যাংক ঋণ দিলেও এই ঋণের অর্থ উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহার না হওয়ায় তা সরাসরি মুদ্রাস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে।
যতো বেশি ঋণ খেলাপি হবে, ততোই সরকারের বাজেটে ঘাটতি হবে। খেলাপিদের চাপে ব্যাংক সরকারকে ঋণ দিতে পারবে না।
সুতরাং ব্যাংক সরকারকে ঋণ দিতে বেশি টাকা ছাপাবে। তখন সেটাও পরোক্ষভাবে মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়ে দেবে।
ঋণের অর্থ যদি উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার হতো তাহলে টাকার বিপরীতে পণ্য বাজারে থাকতো। এতে মুদ্রাস্ফীতি হতো না।
এতে ঋণ দেয়ার সক্ষমতা কম
ঋণগ্রহীতারা ঋণ শোধ করতে না পারায় পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
কারণ তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেয়ার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। শিল্প ও এসএমই খাতে ঋণের প্রবাহ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। এতে ভালো ঋণগ্রহীতারা ঋণ পাচ্ছেন না।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা কৃষকরা তাদের প্রয়োজনীয় ঋণ পাচ্ছে না। তারা মূলধন না পাওয়ার কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এতে সরবরাহ ব্যবস্থায় টান পড়ায় দ্রব্যমূল্যের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে।
অর্থাৎ বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সেটার প্রভাব গিয়ে পড়ছে পণ্য মূল্যের ওপর। এ কারণে সাধারণ মানুষকে বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে।
অর্থাৎ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও পরোক্ষভাবে খেলাপি ঋণ দায়ী।
খেলাপি ঋণের প্রভাবে ব্যাংকের সাধারণ আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা ব্যাংকে টাকা রাখলে লাভ পাচ্ছে কম, ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ পোষাতে আমানতকারীদের লাভের হার কমিয়ে দিচ্ছে।
অপরদিকে ভালো ব্যবসায়ীরাও ঋণ পেতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছে। তাদের ওপর বেশি সুদ চাপানো হচ্ছে।
অথচ এই ব্যবসায়ী যদি ঋণ পেলে দেশের উৎপাদন বাড়ত বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সাধারণ ব্যবসায়ীকে ঋণ দিতে গিয়ে ওই খেলাপি ঘাটতি পূরণের জন্য তাদের কাছে বেশি সুদ চাইছে ব্যাংক। এতে ভালো ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এই বাড়তি সুদ পোষাতে পণ্যের দাম বেশি রাখতে বাধ্য হচ্ছেন বিক্রেতারা। অর্থাৎ ঘুরে ফিরে সাধারণ মানুষকে সেই বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে।
এমনকি ব্যাংকের ক্ষুদ্র শেয়ারহোল্ডাররাও প্রাপ্ত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
“ভালো ব্যবসায়ীরা ঋণ পাচ্ছে না। সুদের হারটাও সরকার বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা।”
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলছেন, “যদি খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে স্বাভাবিকভাবে ব্যাংক নাগরিকদের কাছে থেকে যে আমানত বা জমা নিচ্ছে তাদেরকে সেই জমা বাবদ আগের চাইতে কম হারে সুদ দেবে।"
"আবার ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রেও আগের চাইতে বেশি সুদ রাখবে। এতে বিনিয়োগ কমে যাবে।”
আইনে ঋণ খেলাপিদের জন্য সুযোগ বাড়ানো হয়েছে।
খেলাপি ঋণের ফলে সরকারের বাজেটে যে ঘাটতি হবে, তখন ভারসাম্য করার জন্য সরকারের কর বৃদ্ধি করা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।
সেটিও হবে পরোক্ষ কর যা সব শ্রেণী পেশার মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
“যদি প্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে ওই খেলাপিদের থেকে কিছু টাকা আদায় করা যেতো তাহলে লাভ হতো। কিন্তু সরকার নিচ্ছে পরোক্ষ কর বা ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স।"
"তার মানে এক জনের দোষের বোঝা বহন করবে নির্দোষ সাধারণ মানুষ। সরকার তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এই মানুষগুলোর ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে”।
যদি সরকারের ব্যয় করার বা বিনিয়োগের চাহিদা থাকে এবং যেখানে ন্যায্য কর পাওয়ার কথা সেখান থেকে কর না পায় তাহলে স্বাভাবিকভাবে সরকার অন্য খাতে করের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে।
তখন প্রত্যক্ষ করের চেয়ে পরোক্ষ করের ওপর বোঝা বাড়াবে।
অর্থাৎ যাদের কর দেয়ার কথা ছিল তারা দেবে না। গরিব বড়লোক নির্বিশেষে সবাই এই বোঝা বহন করবে।
খেলাপি ঋণ বা মন্দ ঋণের সাথে টাকা পাচারের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই টাকাগুলোর একটা বিরাট অংশ বৈদেশিক মুদ্রায় বদলে নিয়ে বিদেশে পাচার হয়ে যায়। ফলে তা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও চাপ তৈরি করছে।
অর্থাৎ সাধারণ মানুষের আমানতের ওই টাকা দেশের কোন উপকারে আসে না।
এক কথায় এই খেলাপি ঋণের প্রভাবে উৎপাদন হচ্ছে, ব্যাংক টাকাও ফেরত পাচ্ছে না। উপরন্তু টাকা বিদেশ পাচার হয়ে যাচ্ছে, যা অর্থনীতিকে চক্রাকারে আঘাত করছে।
এটাই শেষ নয়, খেলাপি ঋণ ধীরে ধীরে ৬-৭ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছে যাবে। কারণ, বকেয়া ঋণের পরিমাণ ইতোমধ্যেই বেড়ে ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এগুলোও এখন খেলাপি হবে।
এতে কমবে সব ধরনের উৎপাদন। চক্র বৃদ্ধি হারে বাড়বে বেকারত্ব হার। দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতি তথা দেশে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ।
পর্যবেক্ষক মহল বার বার সতর্ক করছেন দেশে দুর্ভিক্ষ এনে তাতে দেশবাসীকে জর্জরিত করে নীরবে, নিভৃতে, বঙ্গোপসাগর, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দুর্লভ খনিজ সব মার্কিনীদের হাতে তুলে দেয়ার- এক সর্বগ্রাসী ষড়যন্ত্র চলছে।
অথচ জনগণ কেনো নির্বিকার। ঈমানী চেতনা নবায়ন দরকার।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান আরিফ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এর তথ্যানুযায়ী বেনিয়া বৃটিশগুলো মুসলিম ভারত থেকে লুট করেছে ১২ হাজার লক্ষ কোটি টাকা প্রকৃতপক্ষে তারা লুট করেছে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র এখনও বন্ধ করলে যা লাভ হবে চালু রাখলে তার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি হবে ৫৩টি পরিবেশবাদী সংগঠনের দাবী অবিলম্বে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হোক কিন্তু তাদের উপেক্ষা করে পরিবেশ উপদেষ্টা প্রমাণ করছে তার পরিবেশবাদী তৎপরতা অন্য পরিবেশবাদীদের সাথে সাংঘর্ষিক এবং তার পরিবেশবাদী প্রচারণা কার্যকলাপ আসলে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নয় বরং বিশেষ প্রভুর নির্দেশনায় (প্রথম পর্ব)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
জুয়ার নেশায় বুদ হচ্ছে শিশু-কিশোররা-শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সাইটই পরিচালিত হয় দেশের বাইরে থেকে অনলাইনে জুয়ায় ছোট ছোট বাজির টাকা দিন শেষে একটি বড় অঙ্কের অর্থ হয়ে দেশ থেকে ডলারের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে প্রতিদিন এসব খেলা স্বাভাবিক গেমের মতো হওয়ায় প্রকাশ্যে খেলা হলেও আশপাশের মানুষ তা বুঝতে পারেন না কেবলমাত্র ইসলামী মূল্যবোধের উজ্জীবনেই জুয়া বন্ধ সম্ভব ইনশাআল্লাহ
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
গার্মেন্টসের চেয়েও বড় অবস্থানে তথা বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানে অধিষ্ঠান হতে পারে বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা করলে শুধু মাত্র এ খাত থেকেই বছরে ১১ লাখ কোটি টাকা অর্জন সম্ভব ইনশাআল্লাহ। যা বর্তমান বাজেটের প্রায় দেড়গুণ আর শুধু অনিয়ম এবং সরকারের অবহেলা, অসহযোগীতা দূর করলে বর্তমানেই সম্ভব প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা অর্জন জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সমৃদ্ধি সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং সরকারের গাফলতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা জনগণের জন্যও জরুরী। (২য় পর্ব)
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার রোবে, দোয়ার বরকতে- কুদরতীভাবে কমে যাচ্ছে ডলারের আধিপত্য বাংলাদেশের রিজার্ভ ডলারে রাখা উচিৎ নয়- এতে লাভ আমেরিকার মুসলিম বিশ্বে অভিন্ন মুদ্রা ব্যবস্থা বিশেষত মূল্যহীন কাগজী মুদ্রা বাদ দিয়ে সুন্নতী দিনার-দিরহাম মুদ্রা চালু করা আবশ্যক ইনশাআল্লাহ (দ্বিতীয় পর্ব)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বিদেশি হাইব্রিড বীজের ফাঁদে দেশের কৃষি। হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় ফসলের জাত, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। ফুলে-ফেঁপে উঠছে বীজ কোম্পানিগুলো।
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুশরিক ভারতের প্রতি লা’নত ওদের জনসংখ্যা দিন দিন নিম্নমুখী পক্ষান্তরে ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে খোদায়ী রহমত। (সুবহানাল্লাহ) বাংলাদেশে জনসংখ্যার এখন ৬৫ ভাগই কর্মক্ষম এবং জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার উর্ধ্বগামী বাংলাদেশ ভোগ করছে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের নিয়ামত। সুবহানাল্লাহ!
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ: মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়াতে সতর্কতা তথা মধ্যম আয়ের স্থবিরতা তাওয়াক্কুল আর তাকওয়া অবলম্বনে সব সমস্যা দূর হয়ে অচিরেই বাংলাদেশ হতে পারবে শীর্ষ সমৃদ্ধশালী দেশ ইনশাআল্লাহ
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
রিজওয়ানার পরিবেশবাদী প্রচারণার বিপরীতে রবি ঠগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনে ইতিবাচক বার্তা এবং ইউনুসের পানি ও প্রকৃতি প্রেমের বানীর পরিবর্তে আপত্তি সত্ত্বেও একনেকে রবি ঠগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প অনুমোদনে জনগণ তথা নেটিজনের মূল্যায়নটা কী?
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যখন কোনো দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুদ্ধবিমান কিনে, তখন তা শুধু একটি বিমান কেনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এর সাথে যুক্ত হয় একাধিক শর্ত, নিষেধাজ্ঞা এবং জটিল টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
লাগামহীন ব্যর্থতার পর মাদক নিয়ন্ত্রণেও সরকার চরমভাবে ব্যর্থ। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিজস্ব দুর্বলতার কারণে মাদক নিয়ন্ত্রণে নজরই দিতে পারছে না। উল্টো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য নিজেরাও জড়িয়ে পড়ছে মাদক ব্যবসায়।
২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে চীন ভারতের ভূ-রাজনীতি দেখতে চায় না দেশ প্রেমিক জনসাধারণ পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করা গেলে তিস্তা মহাপরিকল্পনাও এদেশীয় অর্থায়নেই সম্ভব ইনশাআল্লাহ তিস্তা মহাপরিকল্পনা যথাযথ করতে পারলে এবং বাস্তবায়ন করলে দেশের উত্তারঞ্চল সোনালী সমৃদ্ধিতে আরো সমুজ্জল হবে ইনশাআল্লাহ
২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












