পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
(রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার ওয়াজ শরীফ থেকে সংকলিত)
, ২৮ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৫ ছানী, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৪ জুলাই, ২০২৫ খ্রি:, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
(ধারাবাহিক)
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে এসেছে- হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: رِضَا الرَّبِّ فِي رِضَا الْوَالِدِ وَسَخَطُ الرَّبِّ فِي سَخَطِ الْوَالِدِ.
পিতা-মাতার সন্তুষ্টির উপর মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক। আর পিতা-মাতার অসন্তুষ্টির উপর মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি তার পিতা-মাতাকে সন্তুষ্ট করে, তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক পাওয়া তার জন্য সহজ হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি পিতা-মাতাকে অসন্তুষ্ট করে, তার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক পাওয়া কঠিন ও দূরূহ হয়ে যায়।
কাজেই প্রত্যেকের স্মরণ রাখতে হবে যে, পিতা-মাতার সন্তুষ্টির উপর মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক এবং উনাদের না খুশির বা অসন্তুষ্টির উপরে মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি।
এ প্রসঙ্গে বলা হয়-
عَنْ حَضْرَتْ مُعَاوِيَةَ بْنِ جَاهِمَةَ السَّلَمِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَنَّ جَاهِمَةَ، جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ:
হযরত মুয়াবিয়া ইবনে জাহিমাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, উনার পিতা হযরত জাহিমাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। উনি একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আসলেন, এসে বললেন-
يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرَدْتُ أَنْ أَغْزُوَ وَقَدْ جِئْتُ أَسْتَشِيرُكَ
আয় মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমি এসেছি আপনার কাছে যে, আমি নিয়ত করেছি জিহাদে যাবো, তাই আপনার কাছে আমি পরামর্শ নিতে এসেছি। আপনি আমাকে কি পরামর্শ দান করেন, আমি কি জিহাদে যাবো? এখন আপনি যদি আমাকে অনুমতি দেন, তাহলে আমি যাবো।
فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: هَلْ لَكَ مِنْ أُمٍّ ؟ قَالَ : نَعَمْ قَالَ : فَالْزَمْهَا فَإِنَّ الْجَنَّةَ عِنْدَ رِجْلَيْهَا.
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনার কি মাতা রয়েছেন? উনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার মাতা রয়েছেন। আমার মাতা এখনও জীবিত রয়েছেন।
فَالْزَمْهَا فَإِنَّ الْجَنَّةَ عِنْدَ رِجْلَيْهَا.
“আপনি গিয়ে আপনার মাতার খেদমত করুন, আপনার মাতার কদমের নিচে আপনার জান্নাত রয়েছে। ” সুবহানাল্লাহ!
এই হাদীছ শরীফের ব্যখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে- জিহাদে যাওয়া হচ্ছে ফরজে কিফায়া, যদি ফরজে আইন হয়, সেটার মাসয়ালা হচ্ছে আলাদা। সাধারণ অবস্থায় যেহেতু জিহাদে যাওয়া ফরজে কিফায়া। সেই ছাহাবী যখন বললেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমি জিহাদে যেতে চাই।
যেহেতু জিহাদ হচ্ছে ফরজে কিফায়া, সেজন্য মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আপনার মাতা কি জমীনে রয়েছেন?”
উনি বললেন হ্যাঁ, যার খেদমত করার জন্য অন্য কোন লোক নেই। কাজেই আপনি সেখানে চলে যান। আপনি জিহাদে না যেয়ে আপনার মায়ের খেদমতে চলে যান, আপনার মায়ের খেদমত করুন, মায়ের খেদমত করলে আপনার মায়ের কদমের নিচেই আপনার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি জান্নাত রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এই হাদীছ শরীফ এবং সেই আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে, শুধু জিহাদেই নয়, জিহাদ এবং এই জাতীয় যা রয়েছে, যেমন- ইলিম অর্জন করা ফরজ, ফরজে আইন। কতটুকু ইলিম অর্জন করা ফরজ, যে পরিমাণ ফরজে আইন সে পরিমাণের জন্য সে বের হতে পারবে কিন্তু যখন ফরজ পরিমাণ ইলিম তার হয়ে যাবে, তার পিতা-মাতা কেউ থাকবে, অথচ তাদের খেদমত করার মতো কোন লোক থাকবে না, তখন তার জন্য ফরজের চেয়ে অতিরিক্ত ইলিম অর্জন করার জন্য তার বাড়ী থেকে বের হওয়া নিষেধ। যতক্ষণ পর্যন্ত তার পিতা-মাতা তাকে অনুমতি না দিবেন, ইজাযত অর্থাৎ অনুমতি না দিবেন, হুকুম না দিবেন, তার জন্য সে জিহাদই হোক বা ইলিম অর্জন হোক বা অন্যান্য কোন কাজ হোক না কেন সে কাজে তার পিতা-মাতা তাকে হুকুম না দেয়া পর্যন্ত তার জন্য যাওয়া নিষেধ। যদি সে ব্যতীত তার পিতা-মাতার খেদমত করার মতো আর অন্য কোন লোক না থাকে। যদি কেউ থাকে, তাহলে তাদেরকে সে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে তার পরে যাওয়া সম্ভব হবে। অন্যথায় তার জন্য নাজায়েয এবং হারামের অন্তর্ভুক্ত হবে। যা ইমাম-মুজতাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরামগণ ফতওয়া দিয়েছেন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












