পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
(রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার ওয়াজ শরীফ থেকে সংকলিত)
, ২৬ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২২ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ২১ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ০৬ ভাদ্র, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
(ধারাবাহিক)
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফে উল্লেখ করেছেন, যেটা সূরা লুকমান শরীফে হযরত লুকমান আলাইহিস সালাম তিনি উনার সন্তানকে উপদেশ দিয়েছেন। তার মধ্যে কিছু উপদেশ রয়েছে, যেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি উল্লেখ করেছেন-
وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ. وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন যে, আমি সন্তানদের আদেশ দিচ্ছি-
وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ
তোমরা তোমাদের পিতা-মাতার প্রতি ইহসান করো, সৎ ব্যবহার করো, বিশেষ করে মাতার প্রতি।
حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলতেছেন যে, তোমাদের মাতা তোমাদেরকে বহন করেছেন। তোমাদেরকে রেহেম মোবারকে ধারণ করে, বহন করে কষ্টের পর কষ্ট করেছেন। অর্থাৎ মাতা উনার রেহেমে তোমাদেরকে ধারণ করে কষ্টের পর কষ্ট করেছেন-
وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ
দু’বছর তোমাদেরকে দুধ পান করিয়েছেন। দুধ ত্যাগ করানোর সময় হচ্ছে- দু’বছর। দু’বছর পরে সন্তানকে দুধ পান করানো নিষিদ্ধ। দু’বছর পর্যন্ত সন্তান মায়ের দুধ পান করবে।
وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ
কাজেই তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, কর্তব্য হচ্ছে- আমার শুকরিয়া করো এবং তোমাদের পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় করো। অর্থাৎ আমার শুকরিয়া আদায় করো এবং তোমাদের পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় করো। কারণ মা তার সন্তানকে ছয় মাস থেকে দু’বছর পেটে ধারণ করে থাকেন।
যেটা আমরা দেখি- মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালাম উনারা মায়ের রেহেম মুবারকে ছিলেন- ছয় মাস। হযরত ইমামুছ ছানী ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমামুছ ছালিছ ইমাম হুসাইন আলাইহিস সলাম উনারাও ছিলেন মায়ের রেহেম মুবারকে ছয় মাস। আর ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মায়ের রেহেম মুবারকে ছিলেন দু’বছর।
সন্তান মায়ের রেহেম মুবারকে ছয় মাস থেকে দু’বছর অবস্থান করে, সেটাই মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন। এ সময় তোমাদের মাতা তোমাদেরকে ধারণ করে অনেক কষ্ট করেছেন। দু’বছর দুধ পান করিয়েছেন। কাজেই আমার শুকরিয়া আদায় করো এবং তোমাদের পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় করো।
এ আয়াত শরীফ সম্পর্কে বলা হয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী, সুলত্বানুল আরেফীন, হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ ওলী ছিলেন। যিনি সুলত্বানুল আরেফীন ছিলেন। উনি যখন মাদ্রাসায় পড়তে গেলেন, পড়া অবস্থায় ওস্তাদ যখন উনাকে নজরানা, মহাপবিত্র কুরআন শরীফ পড়াচ্ছিলেন, পড়তে পড়তে এই আয়াত শরীফ যখন এসে পৌঁছলো-
أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ
“তোমরা শুকরিয়া আদায় করো আমার এবং তোমাদের পিতা-মাতার। ”
তখন সেই হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “হে আমার ওস্তাদ! এই আয়াত শরীফের অর্থ কি?
ওস্তাদ বললেন, অর্থ হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ দিচ্ছেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করতে এবং পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় করার জন্য। ”
উনি বললেন, “হে আমার ওস্তাদ, দয়া করে আজকে আমাকে ছুটি দিন, আমি বাড়িতে যেতে চাই। ”
ওস্তাদ হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ছুটি দিলেন। তিনি বাড়িতে গেলেন, গিয়ে তিনি উনার মাকে বললেন- “হে আমার মা, আজকে এমন একটি আয়াত শরীফ আমি তিলাওয়াত করেছি। ওস্তাদ আমাকে পড়ায়েছেন, যেটা আমার কাছে খুব কঠিন মনে হচ্ছে।
তখন মা জিজ্ঞাসা করলেন, কি আয়াত শরীফ আপনি পড়েছেন বাবা?
তিনি বললেন, আমি যে আয়াত শরীফ পড়েছি, তা হলো- মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-
أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ
অর্থ : মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করার জন্য এবং পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় করার জন্য। ”
আমার পক্ষে দু’টা করা সম্ভব হবে না। হয় আপনি আমাকে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য ছেড়ে দিবেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করবো খালেছভাবে অথবা আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে নেন, আমি আপনারই শুকরিয়া আদায় করি সবসময়। আমি দু’টা কাজ এক সঙ্গে পারবো না।
যখন উনি আরজু করলেন, উনার মা যেহেতু মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী ছিলেন। উনি বললেন- বেশ, আমি আপনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য ছেড়ে দিলাম, আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করুন, এতেই আমি সন্তুষ্ট। মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করলে আমার শুকরিয়া আদায় হবে। আমি সন্তুষ্ট হয়েছি, আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়ায় মশগুল থাকুন।
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আমার মা যখন একথা বললেন, তখন আমি ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল হলাম, তাতে আমি প্রত্যেকটা বিষয়ে আলাদা স্বাদ পেতে লাগলাম এবং শেষ পর্যন্ত উনি মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী, সুলত্বানুল আরেফীন হলেন। অতএব, পিতা-মাতার হক্ব প্রত্যেকের জন্যই যথাযথ আদায় করা উচিৎ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












