পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
(রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার ওয়াজ শরীফ থেকে সংকলিত)
, ১০ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৬ রবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ১৯ ভাদ্র, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
(ধারাবাহিক)
একদিন সে স্বপ্নে দেখলো, কোন এক বুযুর্গ ব্যক্তিকে। সে বুযুর্গ ব্যক্তি তাকে স্বপ্নে বলতেছেন যে, হে সন্তান! তুমি এক কাজ করো, অমুক স্থানে যাও, সেখানে গিয়ে দেখবে একশত দীনার রয়েছে, সেই একশত স্বর্ণমুদ্রা তুমি নিয়ে এসো, তোমার কাজে লাগবে।
সেই সন্তান জিজ্ঞাসা করলো স্বপ্নের মধ্যেই সেই বুযুর্গ ব্যক্তিকে যে, হুজুর! সেই একশত দীনার যে আমি আনবো তার মধ্যে কি কোন বরকত রয়েছে?
উনি বললেন যে, না, তার মধ্যে কোন বরকত নেই।
যখন সে বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন যে, না, এরমধ্যে কোন বরকত নেই। তখন সেটা শুনে সে সন্তান বললো- তাহলে সেটা আমার দরকার নেই।
আবার পরের দিন সে স্বপ্নে দেখলো সেই বুযুর্গ ব্যক্তিকে। দশটা স্বর্ণমুদ্রা রয়েছে, দীনার রয়েছে, সেটা নিয়ে এসো তোমার কাজে লাগবে। সে আবার পুনরায় জিজ্ঞাসা করলো যে, হে বুযুর্গ ব্যক্তি! সেই দশ দীনারের মধ্যে কি কোন বরকত রয়েছে?
তিনি বললেন যে, না তার মধ্যে কোন বরকত নেই।
তখন সে ছেলে বললো যে, না সেটা আমার দরকার নেই। তৃতীয় দিন সে আবার স্বপ্নে দেখলো সেই মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী উনাকে। উনি বলতেছেন যে, তুমি অমুক স্থানে যাও। সেখানে মাত্র একটা দীনার রয়েছে, একটা স্বর্ণমুদ্রা রয়েছে, সেটা তুমি নিয়ে এসো তোমার কাজে লাগবে।
সে তখন আবার জিজ্ঞাসা করলো যে, হে বুযুর্গ ব্যক্তি! সেটার মধ্যে কি কোন বরকত রয়েছে?
সেই মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী বললেন যে, হ্যাঁ, এরমধ্যে বরকত রয়েছে, তুমি সেটা তোমার কাজে ব্যবহার করতে পার।
তখন সেই সন্তান ঘুম থেকে উঠে বাদ ফজর সেই মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী যা বলেছেন, সেই নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে সত্যিই সে দেখলো, একটা দীনার পড়ে রয়েছে। সেটা সে সংগ্রহ করে নিয়ে আসলো। যেহেতু তার খাওয়ার পরার কোন ব্যবস্থা ছিলনা। সে সরাসরি বাজারে চলে গেল। সেটা ভাঙ্গিয়ে কিছু পয়সা দিয়ে সে একটা মাছ কিনে আনলো বাজার থেকে। মাছ কিনে এনে যখন সে কাটতে দিলো খাওয়ার জন্য। কাটার পর দেখা গেল তার ভিতর থেকে দু’টা মুক্তা বের হল। সুবহানাল্লাহ! এখন মুক্তা যে বের হয়েছে, সে মুক্তা চিনতে পেরেছে। কিন্তু তার কত টাকা মূল্য হবে সেটা সে বুঝতে পারেনি।
সে যখন মুক্তার বিষয় প্রকাশ করলো বা বললো, তখন তাকে বলা হলো তুমি এক কাজ করো, বাদশাহর কাছে সেটা নিয়ে যাও। বাদশাহ্ই অধিক মূল্য দিয়ে মুক্তা কিনে থাকে। যখন সে সন্তান বাদশাহর কাছে নিয়ে গেল সেই মুক্তা। বাদশাহ তার জাওহরীকে ডাকলো। ডেকে বললো- হে জাওহরী! দেখতো মুক্তার কত মূল্য।
জাওহরী দেখেতো তায়াজ্জুব হয়ে গেল যে, তুমি এই মুক্তা পেলে কোথায়? এমন মূল্যবান মুক্তা! যা আমার জীবনে আমি খুব কম দেখেছি। কত মূল্য হতে পারে? কমপক্ষে ষাট হাজার দীনার হতে পারে। ষাট হাজার স্বর্ণমুদ্রা কমপক্ষে মুক্তা দু’টার মূল্য।
তখন বাদশাহ বললো, তাকে সেটা দিয়ে দাও। মুক্তা দু’টা রেখে দাও। রেখে তাকে ষাট হাজার দীনার, স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে দেয়া হলো।
বলা হয় যে, একটা দীনার হচ্ছে এক ভরি স্বর্ণের সমান কমপক্ষে, ক্ষেত্রবিশেষে কম-বেশী রয়েছে। তিন ভাগের এক ভাগ, চার ভাগের এক ভাগও রয়েছে।
ষাট হাজার দীনার যখন সে নিয়ে আসলো বা নিয়ে বাড়িতে পৌঁছলো, তখন গায়েবী নেদা হলো যে, “হে সন্তান! তুমি যে তোমার পিতার খেদমত করেছিলে, তুমি যে তোমার পিতার খেদমত করেছিলে, তোমার পিতার খেদমতের বদৌলতে মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাকে এই স্বচ্ছলতা দান করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই
أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ
যে শুকরিয়া আদায় করো আমার এবং তোমার পিতা-মাতার।
শুকরিয়া আদায় করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জাযা-খায়ের দান করেন। যেমন এই লোককে মহান আল্লাহ পাক তিনি দিয়েছেন। ঠিক তদ্রুপ যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় করবে, সে তদ্রুপ ফায়দা হাছিল করবে।
তবে শর্ত হচ্ছে-
وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا
হ্যাঁ, তোমাদের পিতা-মাতা যদি শরীয়তের খেলাফ আদেশ-নিষেধ করে, যেটা কুফরী-শেরেকীর অর্ন্তভুক্ত, সেটা কিন্তু তা’মীল করা যাবে না। সেটা আমল করা যাবে না। সেটা আমল করা যাবে না।
তবে যে পিতা-মাতা মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে রুজু হয়ে রয়েছেন,
وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ
উনাদেরকে তোমরা ইত্বায়াত করবে, অনুসরণ-অনুকরণ করবে, তাহলে তোমাদের জন্য কামিয়াবী। যে আমার থেকে গাফেল, শরীয়তের খেলাফ আদেশ-নিষেধ করে, তারটা অনুসরণ করা যাবে না, অনুকরণ করা যাবে না।
যেটা হাদীছ শরীফে রয়েছে
لاَ طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ.
যে, কোন মাখলুকের (সৃষ্টির) আনুগত্য করতে গিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী করা জায়েয নেই। কোন মাখলুকের আনুগত্য করতে গিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী করা নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। পিতা-মাতার আনুগত্য করতে হবে, যা শরীয়তসম্মত আদেশ-নিষেধ রয়েছে, ঠিক তদ্রুপ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












