পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
(রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার ওয়াজ শরীফ থেকে সংকলিত)
, ২৪ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২০ রবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০৪ আশ্বিন, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
(ধারাবাহিক)
মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, হে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী, সুলত্বানুল আরেফীন! আপনি এত ফযীলত পেলেন কি করে?
উনি বললেন যে, অনেক কারণ রয়েছে, তার মধ্যে একটা কারণ হচ্ছে- আমার বয়স তখন কম, অল্প বয়স মোটামুটি বুঝ পয়দা হয়েছে। আমার মায়ের সাথে আমি শুয়েছিলাম। হঠাৎ মধ্য রাতে আমার মা আমাকে বললেন- হে বায়েজীদ! আমাকে এক গ্লাস পানি পান করাও।
তো, মায়ের নির্দেশ পানি পান করাতে হবে। আমি উঠলাম, উঠে দেখি যে পাত্রে আমরা পানি রাখতাম সেখানে পানি নেই। কলসীর কাছে গেলাম, সেখানে পানি নেই। পানি আনবো কোত্থেকে। রাত্র গভীর, খুব ঠান্ডা, বরফ পড়ছে বাইরে। আমি চিন্তা করলাম, মা যেহেতু চেয়েছেন, সেহেতু আমাকে এনে দিতে হবে।
তিনি বাইরে বের হলেন, নদীর পাড়ে গেলেন, সেখানে গিয়ে দেখেন, পানিগুলি বরফ হয়ে রয়েছে। পানি সেখানেও নেই। উনি বরফগুলো কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করলেন, নাড়াচাড়া করার কারণে সেখান থেকে কিছু পানি বের হলো, সেটা উনি পাত্রে করে নিয়ে উনার মায়ের কাছে এসে দাঁড়িয়ে রইলেন।
উনি এসে দেখেন, উনার মা ঘুমিয়ে গেছেন। উনি অপেক্ষা করতে লাগলেন। খুব ঠান্ডা, শীত, যেহেতু বাইরে বরফ পড়তেছিল। উনি বললেন, আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম, যেহেতু মা ঘুমিয়ে গেছেন। হঠাৎ ফজরের আযান হলো। অনেকক্ষণ হলো আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি। আমার সমস্ত শরীর ঠান্ডায় জমে গিয়েছে। মনে হয় বরফ হয়ে গিয়েছে।
যখন আযান হলো, আমার মা ঘুম থেকে উঠলেন। উঠে যখন তাকালেন আমার দিকে, আমি বললাম- হে আমার মাতা! আমি আপনার জন্য পানি নিয়ে এসেছি।
উনি আশ্চর্য হয়ে গেলেন যে, বললেন, ‘হে বায়েজীদ! আমি তোমাকে কখন বলেছিলাম পানির কথা? তুমি এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছো?’
উনি বললেন, যেহেতু পানি কোথাও ছিলো না। আমি নদীর ঘাটে গিয়েছিলাম পানি আনতে, সেখান থেকে এসে দেখি আপনি ঘুমিয়ে গেছেন, আমি আর আপনাকে ডাকিনি। এখন আপনার জন্য পানি এনেছি, আপনি পান করুন।
কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, উনার মাতা সেটা দেখে খুব খুশি হলেন। খুশি হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে দোয়া করলেন খুব উচ্চ স্বরে। উনি দোয়া করলেন যে, “আয় মহান আল্লাহ পাক! বায়েজীদ আমাকে খুশি করেছে, আপনি তাকে খুশি করে দিন। ”
কিতাবে উল্লেখ করা হয়- উনি যখন পানির পাত্রটা উনার মায়ের কাছে দিচ্ছিলেন, তা এত ঠান্ডা ছিল যে, উনার হাতের কিছুটা চামড়া ঠান্ডার কারণে উঠে সেই পাত্রের মধ্যে লেগে গিয়েছিল। ঠান্ডার কারণে উনি সেটা বুঝতে পারেননি। রক্তও ঝরে পড়েনি। উনার মা যখন সে পাত্রে পানি পান করলেন, পান করার পর দেখা গেল, পাত্রের মধ্যে উনার হাতের কিছুটা চামড়া লেগে রয়েছে, উনার হাতের চামড়া উঠে গিয়েছে।
উনার মা উনার জন্য আবার দোয়া করলেন খাছ করে। হযরত সুলত্বানুল আরেফীন বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি বলেন যে, আমার মা আমার জন্য খাছ করে দোয়া করেছিলেন, অন্তরের অন্তস্থল থেকে দোয়া করেছিলেন আমার এ খেদমতে সন্তুষ্ট হয়ে যে, আয় মহান আল্লাহ পাক, আমার ছেলে বায়েজীদ আমাকে যেমন সন্তুষ্ট করেছে, আপনি তদ্রুপ তাকে সন্তুষ্ট করে দিন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার মায়ের দোয়া কবুল করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে সুলত্বানুল আরেফীন করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
যে কত ফযীলত দিয়েছেন মায়ের দোয়ার বদৌলতে। কাজেই পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় করতে হবে, হক্ব আদায় করতে হবে যথাযথভাবে।
এজন্য হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে-
اِنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ اَقْدَامِ اُمَّهَاتِكُمْ
নিশ্চয়ই জান্নাত হচ্ছে, সন্তানের জান্নাত হচ্ছে, তার মায়ের কদমের নিচে, সন্তানের জান্নাত তার মায়ের কদমের নিচে।
কাজেই প্রত্যেক সন্তানকে তার পিতা-মাতার হক্ব যথাযথভাবে আদায় করতে হবে। তাহলে তার ইহকাল এবং পরকাল উভয় তার জন্য নাযাত রয়েছে, খোশ খবর রয়েছে। ইহকালে সে এতমিনান লাভ করবে, পরকালে সে জাহান্নামের আযাব থেকে পানাহ লাভ করবে।
কাজেই প্রত্যেক সন্তানের দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে- তার পিতা-মাতার হক্ব আদায় করা এবং পিতা-মাতার ও দায়িত্ব রয়েছে সন্তানের প্রতি। মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে তৌফিক দান করেন। কারণ প্রত্যেক সন্তানের জন্য তার পিতা-মাতার হক্ব জানা দরকার রয়েছে। আবার পিতা-মাতার জন্য ও তার সন্তানের হক্ব জানা দরকার রয়েছে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের হক্ব সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হওয়া দরকার রয়েছে। ওয়াকিফহাল হওয়ার জন্য জরুরত রয়েছে। কাজেই মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে সেই বিষয় জেনে তার হক্ব আদায় করার জন্য তৌফিক দান করেন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












