পিতা-মাতা উনাদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য (১)
, ০৭ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৫ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ২৪ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ ভাদ্র শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
একজন বান্দার জন্য দু’টি হক্ব আদায় করা ফরয-ওয়াজিব উনাদের অন্তর্ভুক্ত। একটি হচ্ছে হক্কুল্লাহ অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হক্ব। অপরটি হক্কুল ইবাদ অর্থাৎ বান্দার হক্ব। আর বান্দার হক্বের মধ্যে সর্বাধিক হক্বদার হলেন পিতা-মাতা। কেননা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পর পিতা-মাতা উনারাই সন্তানের প্রতি সর্বাধিক সহানুভূতিশীল। মুহব্বত আসে উপর দিক থেকে। অর্থাৎ একজন পিতা-মাতা সন্তানকে যতটুকু মুহব্বত করবে, সন্তান পিতা-মাতা উনাদেরকে ততটুকু মুহব্বত করতে পারবে না। সুবহানাল্লাহ!
পিতা-মাতা সন্তানকে কষ্ট করে লালন-পালন করেন ও চরিত্র গঠনের সর্বাধিক শিক্ষা প্রদান করেন। মা কষ্ট করে সন্তানকে রেহেমে ধারণ করেন ও চরিত্র গঠনের সর্বাধিক শিক্ষা প্রদান করেন। আর বাবা নিজের উপার্জিত টাকা-পয়সা সন্তানের জন্য ব্যয় করেন। এ কারণে সম্মানিত ইসলাম পিতা-মাতা উনাদেরকে সর্বাধিক মর্যাদা প্রদান করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে পবিত্র সূরা বনী ইসরাঈল উনার পবিত্র ২৩ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا
অর্থ: “তোমাদের রব মহান আল্লাহ পাক তিনি মুবারক আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা উনার ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করো না এবং তোমাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হলো তোমরা তোমাদের পিতা-মাতা উনাদের প্রতি সৎ ব্যবহার করবে। উনাদের একজন অথবা দুজন যখন বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছেন, উনাদের প্রতি কোনো কাজে উফ্ বলো না। এবং উনাদের সাথে কোন কথা বলতে হলে ধমক দিয়ে কথা বলো না এবং উনাদের সাথে নরম সুরে, দয়ার সাথে, ইহসানের সাথে কথা বলো।” অর্থাৎ সম্মান সূচক কথা বলো।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “কোন ব্যক্তি তার পিতা-মাতা দু’জনকে অথবা যেকোন একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেল কিন্তু তার গুনাহখতা ক্ষমা করাতে পারলো না তার জন্য হালাকী বা ধ্বংস। নাঊযুবিল্লাহ!
অর্থাৎ পিতা-মাতা সন্তানের নিকট থেকে কতটুকু ভাল ব্যবহার পাওয়ার হক্বদার তা এ পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে বুঝা যায়।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “সৎ ব্যবহার পাওয়ার সর্বাধিক হক্বদার হলেন মা। অতঃপর পিতা তারপর নিকটতম ও দূরবর্তী আত্মীয়-স্বজন”। প্রত্যেক সন্তানের নিকট থেকে পিতা-মাতা উভয়ই সদাচরণ ও সদ্ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য এবং দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে উভয়ের মর্যাদাই অপরিসীম।
স্নেহময়ী মা উনাকে কতগুলো বিশেষত্বের কারণে পিতা-মাতা উভয়ের মধ্যে মা উনার হক্বকে বেশী প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যেমন-
১. মা উনি কষ্ট করে সন্তানকে রেহেমে ধারণ করেন।
২. জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতীব কষ্ট করে সন্তান প্রসব করেন।
৩. দুই বছর পর্যন্ত দুধ পান করান।
একজন মা উনার ছোহবতে সন্তান কমপক্ষে ১০ বছর পর্যন্ত অবস্থান করে। এ সময় মা যদি সন্তানকে দ্বীনি শিক্ষা দিতে পারেন তবে বড় হয়েও সন্তানের পক্ষে হক্বের উপর ইস্তেকামত থাকা সম্ভব হয়। মা উনার দেওয়া শিক্ষার কারণে সন্তানরা সত্যবাদী আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী হয়। যেমন- এ প্রসঙ্গে একটি ওয়াকিয়া রয়েছে।
একবার হযরত আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ডেকে উনার আম্মাজান বললেন, বাবা এখনতো আপনি বড় হয়েছেন, আপনাকে কুরআন শরীফ-হাদীছ শরীফ উনাদের ইলিম শিক্ষা করতে হবে। আমি আপনাকে ইলিম শিক্ষা করার জন্য বাগদাদ শরীফে পাঠাবো। ওখানে গিয়ে আপনি অনেক বড় হক্কানী-রব্বানী আলিম উনাদের কাছ থেকে ইলিম শিক্ষা করবেন। আপনাকে যেহেতু অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে তাই আমি আপনার জামার আস্তিন মুবারকে ৪০টি স্বর্ণমুদ্রা বেঁধে সেলাই করে দিচ্ছি। আপনি এগুলো প্রয়োজন মত খরচ করবেন। তবে আমার একটি নছিহত মুবারক মনে রাখবেন। তা হলো, জীবনে কখনো মিথ্যা কথা বলবেন না। একথা বলে উনি ছেলেকে দোয়া করে বিদায় দিলেন। এদিকে হযরত আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যে কাফেলায় রওনা দিয়েছিলেন সে কাফেলায় ডাকাত আক্রমন করে সবকিছু নিয়ে গেলো। উনাকে কিছু বললো না। কিন্তু কিছুক্ষণ পর একটি ডাকাত এসে জিজ্ঞেস করলো, হে বালক! আপনার কাছে কিছু রয়েছে? তিনি বললেন- “হ্যাঁ, আমার জামার আস্তিন মুবারকে ৪০টি স্বর্ণমুদ্রা রয়েছে।” এ কথা শুনে ডাকাতটি চলে গেলো এবং ডাকাত দলের সর্দারসহ সবাইকে ডেকে আনলো। তারা বললো, আপনি স্বর্ণমুদ্রার কথা বললেন কেন? মিথ্যা বললে তো আমরা কেউ বুঝতাম না। তখন তিনি বললেন, “দেখ আমার মা আমাকে সর্বদা সত্য কথা বলার শিক্ষা দিয়েছেন। আমি এখন কেন সেই শিক্ষা ভুলে গিয়ে তোমাদেরকে মিথ্যা বলবো? ডাকাত দলের সবাই তখন নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে খালিছ তওবা করে। পরবর্তীতে ওলীআল্লাহগণ উনাদের ছোহবত ইখতিয়ার করে যিকির ফিকিরের মাধ্যমে ওলীআল্লাহ হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!
আমরা এ ওয়াকিয়া থেকে বুঝতে পারলাম যে, সন্তানের চরিত্র গঠনে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম।
-সাইয়্যিদা সুমাইয়া আহমদ (কুড়িগ্রাম)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৯)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৩)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












