পিতা-মাতা উনাদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য (২)
, ০৮ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৬ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ১০ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মহিলাদের পাতা
وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِىْ صَغِيْرًا.
অর্থ: “উনাদের জন্য দুয়া করো যে, আয় মহান আল্লাহ পাক উনাদের প্রতি আপনি দয়া করুন, রহমত বর্ষণ করুন যেভাবে পিতা-মাতা উনারা আমাদেরকে ছোট বেলাতে লালিত-পালিত করেছেন, দয়া করেছেন, ইহসান করেছেন। আপনি উনাদের প্রতিও ইহসান করুন, দয়া করুন। ”
এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যে প্রত্যেক সন্তানের জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি খাছ করে কয়েকটা নির্দেশ দিয়েছেন-
১. পিতা-মাতা উনাদের কোন কাজের মধ্যে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে উফ শব্দ বলা যাবে না।
২. উনাদেরকে ধমক দিয়ে কর্কশ সুরে বা কঠোর ভাষায় কোন শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।
৩. খুব নরম সুরে, সম্মানিত ভাষায় কথা বলতে হবে।
৪. সবসময় উনাদের ভালাইয়ের জন্য কোশেশ করতে হবে।
৫. সন্তান যতদিন জীবিত থাকবে, ততদিন সে পিতা-মাতা উনাদের জন্য দোয়া করবে। এটা তার দায়িত্ব-কর্তব্য।
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, পিতা-মাতাই হচ্ছেন তোমাদের জন্য বেহেশত এবং দোযখ। অর্থাৎ সৎ ব্যবহার করলে জান্নাত পাবে। অসৎ ব্যবহার করলে দোযখ যাবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পিতা উনার মর্যাদা সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “ পিতা-মাতা উনাদের সন্তুষ্টির মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি নিহিত এবং পিতা-মাতা উনাদের অসন্তুষ্টির মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি নিহিত। ”
তাই আমাদের সর্বাবস্থায় পিতা-মাতা উনাদের খিদমত করতে হবে, উনাদের হক্ব যথাযথভাবে আদায়ের জন্য চেষ্টা করতে হবে।
পিতা-মাতা উনাদের সাথে উত্তম আচরণের আদর্শ স্থাপন করেছেন স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সাথে নিয়ে বসে কাজ করছিলেন। এমন সময় সেখানে উনার মহাসম্মানিতা দুধ মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ্ আছ ছানিয়াহ্ আলাইহাস সালাম (হযরত হালিমা সাদিয়া আলাইহাস সালাম) তিনি তাশরীফ মুবারক আনেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজে চাদর মুবারক অথবা রুমাল মুবারক বিছিয়ে দিলেন বসার জন্য এবং উনি সেখানে বসলেন।
পিতা-মাতা কাফির-মুশরিক হলেও তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা যাবে না। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قَالَتْ حَضْرَتْ اَسْمَاءَ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ اُمِّىْ مُشْرِكَةُ اَفَاَصِلُهَا قَالَ نَعَمْ صِلِيْهَا.
অর্থ: হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি একবার আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার মা মুশরিক আমি কি তার সাথে উত্তম আচরণ করবো? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আপনি উত্তম আচরণ করুন। ”
তবে পিতা-মাতা যদি শরীয়তের খিলাফ কোন কাজের আদেশ নির্দেশ দেয় তাহলে সেটা মানা যাবে না। কেননা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاِنْ جَاهَدَكَ عَلى اَنْ تُشْرِكَ بِىْ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا.
অর্থ: যদি পিতা-মাতা তোমাদেরকে আমার সাথে শিরক করার নির্দেশ দেয় তাহলে এবং তোমার যদি ঐ সম্পর্কে কোন জ্ঞান থেকে থাকে তাহলে তোমরা তা অনুসরণ করো না।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوْقٍ فِىْ مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ.
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী করে কোন মাখলুকাতের আনুগত্য করা জায়িয নেই।
আমরা এই আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম যে, পিতা-মাতা উনাদের মর্যাদা-মর্তবা অপরিসীম। উনাদের সাথে সদ্ব্যবহার করা, খিদমত করা, ভরণ-পোষনের জন্য ব্যয় ভার বহন করা প্রত্যেক সন্তানের দায়িত্ব কর্তব্য এবং জান্নাত লাভের মাধ্যম। মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদের সকলকে পিতা-মাতা উনাদের যথাযথ হক্ব আদায়ের তাওফিক দান করেন। আমীন! সমাপ্ত।
-সাইয়্যিদা সুমাইয়া আহমদ (কুড়িগ্রাম)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (৩)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (১০)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সর্বাবস্থায় আজল বা তাড়াহুড়া না করে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হাশরের ময়দানে যে ৫টি প্রশ্নের উত্তর প্রত্যেককেই দিতে হবে
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












