পিত্তথলিতে পাথর
এডমিন, ২৫ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৮ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১৮ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ০৪ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) স্বাস্থ্য

পিত্তথলিতে পাথর জমা হওয়াকে পিত্ত পাথর বলে। ৩০-এর ওপরে বয়স—এমন প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১৫ জনের পিত্তথলিতে পাথর থাকে। এই ১৫ জনের মধ্য থেকে দু-তিনজনের পিত্তথলিতে পাথর থাকার কারণে উপসর্গ দেখা যায়। পিত্তথলিতে পাথর থাকা সত্ত্বেও বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই কোনো উপসর্গ থাকে না।
উপসর্গ
সাধারণত চর্বিযুক্ত বা তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার পর পেটের উপরিভাগের ডান দিকে অথবা পেটের শুধু উপরিভাগে ব্যথা অনুভূত হয়। কখনো কখনো এই ব্যথা ডান কাঁধের দিকে বা পেছনের দিকে অনুভূত হতে পারে। ব্যথা সাধারণত ১৫ মিনিট থেকে ঘণ্টাখানেক স্থায়ী হতে পারে। অনেক সময় ব্যথার পাশাপাশি বমি বা বমি বমি ভাগ, খাবার হজমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
জটিলতা
১। পিত্তথলির ইনফেকশন (পেটের উপরিভাগের ডান দিকে প্রচণ্ড ব্যথা, বমি, জ্বর এবং কোনো কোনো সময় হাসপাতালে ভর্তিরও প্রয়োজন দেখা দেয়)।
২। এ অবস্থায় চিকিৎসা না নিলে পিত্তথলিতে পুঁজ জমতে পারে, যাকে বলা হয় এমপায়েমা গলব্লাডার।
৩। পিত্তথলির পাথর পিত্তনালিতে নেমে এসে বাধাজনিত জন্ডিসের উদ্ভব ঘটাতে পারে।
৪। পিত্তথলির পাথর পিত্তনালি হয়ে অগ্ন্যাশয়ের মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রে চলে যেতে পারে।
৫। অগ্ন্যাশয়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রমের সময় অগ্ন্যাশয়ের মধ্যে ক্ষত সৃষ্টি করে একিউট প্যানাক্রিয়াটাইটিস তৈরি করতে পারে।
কারণ
পিত্তথলিতে থাকা পিত্তরসে পানির পরিমাণ ৯০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ কঠিন পদার্থ। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পিত্ত লবণ, কোলেস্টেরল, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্লোরাইড ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ। পিত্তে পাথর হওয়ার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং অনেকগুলো উপাদানের ওপর নির্ভরশীল। পিত্তে পাথর হওয়ার প্রক্রিয়াটি বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে তুলে ধরেছেন। তবে সর্বস্বীকৃত প্রতিক্রিয়াগুলো হলো:
১। পিত্তরসের মধ্যে কোনো কারণে পিত্ত লবণের মাত্রা কমে গেলে
২। পিত্তরসের মধ্যে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে
৩। পিত্তথলি পূর্ণমাত্রায় সংকুচিত হতে ব্যর্থ হলে।
সাধারণত উপরোক্ত তারতম্যগুলো ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টিন নামক দুটি হরমোনের আধিক্যের কারণে হয়ে থাকে এবং এই হরমোনগুলো মহিলাদের শরীরে থাকে বিধায় প্রতি একজন পুরুষের বিপরীতে তিনজন মহিলার ক্ষেত্রে এই রোগটি হয়ে থাকে।
পিত্তথলিতে পাথর একটি সাধারণ ও পরিচিত সার্জিক্যাল সমস্যা। পিত্তথলিতে পাথর হলে অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান, অস্ত্রোপচার করাবেন নাকি করাবেন না। আবার অস্ত্রোপচার করালে কীভাবে করাবেন—ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমে নাকি পেট কেটে। অন্যদিকে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা চালাবেন কি না, তা নিয়েও দ্বিধায় পড়ে যান।
চিকিৎসা
যাদের উপসর্গ আছে, তাদের অবশ্যই অপারেশন করিয়ে নিতে হবে। বর্তমানে সাধারণত ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমে (অর্থাৎ পেট না কেটে) শুধু পেট ছিদ্র করে মেশিনের সাহায্যে পিত্তথলির পাথর অপসারণ করা হয়ে থাকে। যাদের উপসর্গ নেই, তাদের সাধারণত কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।