মন্তব্য কলাম
প্রকৃত অর্থে মূল্যস্ফীতি কী কাঙ্খিতভাবে কমেছে? মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জন্য সম্যক ধারণা সহজ করা হয় না কেন? মূল্যস্ফীতি কতভাবে মানুষের পকেট কাটে তা সর্বজনবিদিত নয় কেন? মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে বর্তমান সরকারের প্রচারণা নিয়ে চরম ধোঁয়াশা।
গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থাসহ সব তন্ত্র মন্ত্রের অর্থব্যবস্থায় মূল্যস্ফীতিতে গণমানুষ পিষ্ট হবেই। কারণ সেখানে মানুষ রাষ্ট্রের গোলাম। অপরদিকে ইসলামী অর্থব্যবস্থায় মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনার গোলাম। তাই ইসলামী অর্থব্যবস্থায় সমৃদ্ধি অকল্পনীয়।
, ২৮ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২২ সাদিস, ১৩৯৩ শামসী সন , ২০ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মন্তব্য কলাম
সরকারি পরিসংখ্যানের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও খোদ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির তথ্য উঠে আসছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে বিভিন্ন সময়ে সিন্ডিকেট, ডলারের দাম বৃদ্ধি, সরবরাহে ঘাটতি, আর কারসাজির কথা গণমাধ্যমে উঠে আসছে প্রায়শই। কিন্তু মূল্যস্ফীতি বা মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ নিয়ে সাধারণ মানুষ রয়েছে ধোঁয়াশায়।
মূল্যস্ফীতি কী?
অর্থনীতিবিদরা আগের বছর বা মাসের সঙ্গে অথবা কোন নির্দিষ্ট সময়কালের সঙ্গে বর্তমানের তুলনা করে খাদ্য, কাপড়, পোশাক, বাড়ি, সেবা ইত্যাদি বিভিন্ন উপাদানের মূল্য বৃদ্ধির যে পার্থক্য যাচাই করেন সেটাই মূল্যস্ফীতি।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, “মূল্যস্ফীতি দিয়ে আমরা যেটা বুঝি তা হলো, কোন একটা নির্দিষ্ট সময় থেকে পরবর্তী আরেকটি সময়ে দাম কেমন বেড়েছে? যেমন ধরুন একটা জিনিসের দাম ২০২০ সালে ছিল ৫ টাকা, পরবর্তী বছর তা হয়েছে ৬ টাকা। সব জিনিসের দাম তো একইরকমভাবে বাড়ে না। বিভিন্ন জিনিসের মূল্য বৃদ্ধির তথ্য একটি পদ্ধতির মাধ্যমে গড় করে মূল্যস্ফীতি বের করা হয়। ”
মূল্যস্ফীতি সাধারণত খাদ্য মূল্যস্ফীতি এবং খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি- এই দুই ভাবে ভাগ করা হয়।
কয়েকভাবে মূল্যস্ফীতি বের করা হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ২০২১ সালের ১৫ই জুলাই মূল্য কী ছিল আর এই বছরের ১৫ই জুলাই কী মূল্য আছে - এই দুইয়ের শতকরা ব্যবধান।
আরেকটি হচ্ছে, এক বছরে জিনিসপত্রের গড় মূল্য আর পরের বছরের ১২ মাসে গড় মূল্যের তুলনা করেও মূল্যস্ফীতি বের করা হয়।
বাংলাদেশ বর্তমানে ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে মূল্যস্ফীতি গণনা করা হয়।
এ নিয়ে আপত্তি আছে অর্থনীতিবিদদের। কারণ তারা মনে করেন, মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে, খাদ্যাভ্যাস ও ভোগের ধরন পাল্টেছে। ফলে ভিত্তি বছরও নতুন করে নির্ধারণ করা উচিত।
মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরার জন্য দফায় দফায় সুদের হার বাড়িয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। ডলারের বিপরীতে গ্রেট ব্রিটেনে পাউন্ডের অবমূল্যায়ন হয়েছে ১২ শতাংশের বেশি, ইউরোর দর পড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশেও আছড়ে পড়েছে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির ঢেউ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল কর্তৃক প্রকাশিত ওহভষধঃরড়হ: চৎরপবং ড়হ ঃযব ৎরংব প্রতিবেদনে। সেখানে মূল্যস্ফীতিকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, সেটা সহজ বাংলায় বলা যায়- জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য পণ্য ও সেবাসমূহের মূল্য একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর শতকরা যে হারে বৃদ্ধি পায় সেই বৃদ্ধির হারই মূল্যস্ফীতির গাণিতিক পরিমাণ। মূল্যস্ফীতি সাধারণত এক বছরের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির হিসাব। মূল্যস্ফীতি নিরূপণের গাণিতিক পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রায় একই ধরনের খাদ্য ও সেবাগ্রহণ এবং সম্পদ অর্জনের জন্য কারো যদি ২০২০ সালে ১০০ টাকা প্রয়োজন হতো, ২০২১ সালে সেই ধরনের খাদ্য ও সেবাগ্রহণ এবং সম্পদ অর্জনের জন্য খরচ হয়েছে ১০৫ টাকা, তাহলে ২০২১ সালে দেশে মূল্যস্ফীতির হিসাব হবে ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি নিরূপণের একাধিক গাণিতিক পদ্ধতি বিদ্যমান। তার মধ্যে ভোক্তা মূল্যসূচক (ঈড়হংঁসবৎ চৎরপবং ওহফবী-ঈচও), উৎপাদকের মূল্যসূচক (চৎড়ফঁপবৎ চৎরপবং ওহফবী-চচও), সমন্বিত ভোক্তা মূল্যসূচক (ঐধৎসড়হরুবফ ওহফবী ড়ভ ঈড়হংঁসবৎ চৎরপবং-ঐওঈচ), ব্যক্তির জীবনযাত্রার ব্যয়সূচক (চবৎংড়হধষ ঈড়হংঁসঢ়ঃরড়হ ঊীঢ়বহফরঃঁৎবং চৎরপব ওহফবী চঈঊচও) এবং জিডিপি বিচ্যুতি (এউচ উবভষধঃড়ৎং) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মূল্যস্ফীতি নিরূপণের ক্ষেত্রে ভোক্তা মূল্যসূচককে প্রাধান্য দিয়ে আসছে।
মুদ্রাস্ফীতি বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে, তবে সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলো হচ্ছে-
১. যোগাযোগের চেয়ে চাহিদা যখন বেশি
যখন অনেক মানুষ কোনো পণ্য কিনতে চায়, কিন্তু সেই পণ্যের পরিমাণ কম থাকে, তখনই এটি ঘটে। ধরা যাক, সাধারণভাবে মানুষ এক কোটি কেজি চাল কিনতে চান এবং কৃষকেরা ঠিক এক কোটি কেজিই উৎপাদন করেন। অর্থাৎ সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। কিন্তু হঠাৎ একটি বন্যা বা অন্য কোনো কারণে চালের ফসল নষ্ট হয়ে গেল। ফলে অবশিষ্ট থাকল মাত্র ৩০০০ লাখ কেজি চাল। অর্থাৎ চাহিদা আগের মতোই রয়ে গেছে, কিন্তু জোগান বা সরবরাহ কমে গেছে। ফলে মানুষ একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কিনতে চায় এবং দাম বাড়ে। আগে হয়তো এক কেজি চালের দাম আগে ছিল ৬০ টাকা, তখন তা ৬৫ টাকা হয়ে যায়। যখন মানুষ কোনো পণ্য কিনতে প্রতিযোগিতা করে, তখন তারা দামের ওপর টান দেয়-এটিই চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতি।
২. ব্যয়চালিত মূল্যস্ফীতি বা কস্ট-পুশ ইনফ্লেশন
যখন জিনিসপত্র তৈরির খরচ বেড়ে যায়, তখন এটি ঘটে। ধরুন, একজন মুড়ি বিক্রেতা ১ কেজি মুড়ি ৩০ টাকায় বিক্রি করেন। চাল কিনে তাকে মুড়ি ভাজতে হয়। কিন্তু বন্যায় তো চালের ফলন নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে মুড়ি বিক্রেতারও বেশি দামে চাল কিনতে হয়। এক কেজি মুড়ি বানাতে আগে লাগত-চাল এক কেজি ২০ টাকা, অন্যান্য খরচ ৫ টাকা, লাভ ৫ টাকা। মোট ৩০ টাকা।
কিন্তু এখন চলের দাম বেড়ে হয়ে গেছে ২৫ টাকা। বাকি সব খরচ একই থাকলেও লাভ করতে হলে বিক্রেতাকে এখন দাম বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করতে হবে।
এটিই হলো ব্যয়চালিত মুদ্রাস্ফীতি, যখন উৎপাদন ব্যয় দাম বাড়িয়ে দেয়।
৩. অন্তর্নিহিত মূল্যস্ফীতি বা বিল্ট-ইন ইনফ্লেশন
এটি ঘটে, যখন মূল্যবৃদ্ধি জীবনের ব্যয় বাড়িয়ে দেয় এবং কর্মীরা বেশি বেতন দাবি করেন।
ধরা যাক, একটি গার্মেন্টস কারখানার কর্মীদের গড় জীবনযাত্রার খরচ ২০ হাজার টাকা এবং তারা মাসে ২৫ হাজার টাকা আয় করে। অর্থাৎ তারা ব্যয় মিটিয়ে কিছুটা সঞ্চয় করতে পারে। কিন্তু দাম বেড়ে গেলে তাদের মাসিক ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ হাজার টাকা। ফলে তারা বেতন বাড়ানোর দাবি জানানো শুরু করেন। যদি কোম্পানি বেতন ২৫ হাজার টাকা করে, তবে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে কারখানাও তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এভাবে বেতন ও দাম একে অপরকে টানে এবং একটি চক্র তৈরি হয়।
৪. অতিরিক্ত অর্থ সরবরাহ
যখন অর্থনীতিতে অতিরিক্ত টাকা থাকে, তখনো দাম বেড়ে যেতে পারে। ধরা যাক, একটি রুটির দাম ১০ টাকা এবং পাঁচজনের কাছে রুটি কেনার জন্য ১০ টাকা করেই আছে। ফলে প্রত্যেকে একটি করে রুটি কিনছে। অর্থাৎ সব ঠিকঠাকই আছে।
কিন্তু যদি সরকার প্রত্যেককে আরও ১০ টাকা করে দেয়, তাহলে প্রত্যেকের কাছে এখন আছে ২০ টাকা। ফলে সবাই এখন দুটি রুটি কিনতে চায়, কিন্তু রুটি তো এখনো ৫টি! বেকারি এটা দেখে দাম বাড়িয়ে দেয়। এখন একটি রুটির দাম বেড়ে হয় ২০ টাকা।
এভাবেও টাকার মূল্য কমে যায় এবং দাম বাড়ে।
৫. মজুরি বৃদ্ধিজনিত মূল্যস্ফীতি
কর্মীদের বেতন বা মজুরি বাড়ার কারণে উৎপাদনের খরচ বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতি ঘটে। কেননা এর ফলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো সেই অতিরিক্ত খরচ পণ্যের দামে যুক্ত করে দেয়।
ধরা যাক, একটি পোশাক কারখানায় কর্মীরা মাসে ৮ হাজার টাকা বেতন পেতেন। কর্মীদের বেতন বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করা হলো। এতে কারখানার মোট উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। কারখানার মালিক যদি আগের দামে পণ্য বিক্রি করেন, তাহলে মুনাফা থাকবে না। তাই তিনি উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে বাজারে পোশাকসহ নানা পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। এই পরিস্থিতিকে বলা হয়, মজুরি বৃদ্ধিজনিত মূল্যস্ফীতি। তবে যদি বেতনের সঙ্গে সঙ্গে কর্মীদের উৎপাদনশীলতাও বাড়ে, তাহলে সমস্যা হয় না। সমস্যা তখনই হয়, যখন বেতন বাড়ে, কিন্তু উৎপাদন বাড়ে না।
এটি কেইনসীয় অর্থনীতির একটি সম্প্রসারিত অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে ১৯৫০-৬০-এর দশকে যখন মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্বের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা চলছিল, তখন এ ধারণা অর্থনীতিতে গুরুত্ব পেতে শুরু করে।
মূল্যস্ফীতি কীভাবে পরিমাপ করা হয়
সরকার এখন প্রতি মাসে মূল্যস্ফীতির হার প্রকাশ করে। এ নিয়ে আলোচনা হয়, গণমাধ্যমে নানা ধরনের সংবাদ প্রকাশ করা হয়। হার বেশি হলে আলোচনা-সমালোচনা বেশি হয়। কারণ, মূল্যস্ফীতি খুব বেশি হলে তা অর্থনীতির ক্ষতি করতে পারে।
কিন্তু এই মূল্যস্ফীতির হার কীভাবে পরিমাপ করা হয়? সরকার বা প্রতিষ্ঠানগুলো এটি কীভাবে হিসাব করে? এই মূল্যস্ফীতি মাপার বিভিন্ন উপায় আছে, কিন্তু সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি হলো ভোক্তা মূল্যসূচক বা কনজ্যুমার প্রাইস ইনডেক্স বা সিপিআই।
সুতরাং প্রশ্ন হচ্ছে, এই সিপিআই কী? এটি এমন একটি পদ্ধতি, যা দিয়ে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার দাম সময়ের সঙ্গে কীভাবে পরিবর্তন হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করে।
যেমন-
ক. ২০২৪ সালে দর:
ক্স রুটি ৩০ টাকা, দুধ ৪০ টাকা, ডিম ৫০ টাকা, মোমবাতি ১০ টাকা, সিনেমার টিকিট ৫০ টাকা; মোট = ১৮০ টাকা।
খ. ২০২৫ সালে দর:
ক্স রুটি ৩২ টাকা, দুধ ৪২ টাকা, ডিম ৫৫ টাকা, মোমবাতি ১২ টাকা, সিনেমা টিকিট ৫৫; মোট = ২০৭ টাকা।
তাহলে ১ বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এমন হলে সিপিআই ৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ ধরা হয়।
বাংলাদেশে সিপিআই যেভাবে নির্ণয় করা হয়
এ কাজ করে থাকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বিবিএস একটি নির্দিষ্ট সময়ের ভোক্তাদের খরচের ওপর ভিত্তি করে একটি ‘ভোগ্যপণ্যের ঝুড়ি’ তৈরি করে। এ ঝুড়িতে খাদ্য, আবাসন, পোশাক, শিক্ষা, চিকিৎসা, পরিবহন ইত্যাদি বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে। প্রতিটি পণ্যের জন্য একটি ওজন বা ওয়েট নির্ধারণ করা হয়, যা সেই পণ্যের খরচের অনুপাত নির্দেশ করে। বিবিএস শহর ও গ্রামের জন্য দুটি আলাদা ঝুড়ি তৈরি করে। সব মিলিয়ে এক হাজারের বেশি পণ্য এই ঝুড়িতে রাখা হয়।
প্রতি মাসে দেশের ৬৪টি জেলায় ১৫৪টি প্রধান বাজার থেকে ওই ঝুড়িভুক্ত পণ্যের বাজারমূল্য সংগ্রহ করা হয়। এরপর মূল্যসূচক হিসাব করা হয়। এ জন্য নির্ধারিত ভিত্তি বছর অনুযায়ী, প্রতিটি পণ্যের দাম কতটুকু বেড়েছে, তা হিসাব করা হয়।
বিশ্বের একেকটি দেশে একেক রকম মূল্যস্ফীতি হয়ে থাকে। অনেক উন্নত দেশে মূল্যস্ফীতির উপরে সামান্যই পরিবর্তন হয়ে থাকে।
অনেক সময় মৃদু মূল্যস্ফীতি হয়, অনেক সময় অতি মূল্যস্ফীতি। যখন জিনিসপত্রের দাম আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে, মানুষ তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়, সেটা মৃদু মূল্যস্ফীতি। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম রাতারাতি বেড়ে গেলে তাকে অতি মূল্যস্ফীতি বলা হয়।
প্রশ্ন হচ্ছে- এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের মূল্যস্ফীতির পার্থক্য কেন তৈরি হয়?
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় মূল্যস্ফীতির ঘটনা দেখা গেছে আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়েতে। সেখানে আয়ের চেয়ে সরকারের ব্যয় বেশি হলে সরকার অতিরিক্ত টাকা ছাপিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে।
ফলে, বাজারে পণ্যের চেয়ে টাকার যোগান বেশি হয়েছে। মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছিল ৩৭০০ শতাংশে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হাঙ্গেরিতে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল প্রায় ১৯০০০ শতাংশ।
একই রকম চিত্র দেখা গিয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে। ১৯২২ থেকে ১৯২৩ সালে জার্মানিতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছিল ৩২২ শতাংশ।
বিশ্লেষকদের মতে উচ্চ দাম থাকার পরেও মূল্যস্ফীতি কম হতে পারে বা শূন্যও হতে পারে। যেমন গতবছর ১০০ টাকা দিয়ে কোনো পণ্য কিনে একই পণ্য যদি এ বছরও ১০০ টাকায় কিনতে হয় সেক্ষেত্র পণ্যের দাম যা-ই হোক না কেন মূল্যস্ফীতি বা মূল্যবৃদ্ধির হার শূন্য। বাংলাদেশে গত দুই বছর ধরে দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতির মানে হচ্ছে উচ্চ দামের জিনিস আরো বেশি খরচ করে কিনতে হচ্ছে। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরের চলন্ত গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। তার আগের বছরে, অর্থাৎ ২০২৩ সালে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৪৮। বিবিএসের তথ্যে আরো দেখা গেছে, শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষ মূল্যস্ফীতির কারণে বেশি ভুগছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থা হ’ল, মিশ্র অর্থনীতি (গরীবফ ঊপড়হড়সু)। এখানে ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক উভয় ব্যবস্থার কিছু কিছু উপাদান রয়েছে। উভয় ব্যবস্থায় ব্যক্তি ও রাষ্ট্র উৎপাদন ও বণ্টনে স্বাধীন। এইসাথে শুরু থেকেই রয়েছে সূদী প্রথা।
যেখানে কোনরূপ লোকসানের ঝুঁকি ছাড়াই ঋণদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একচেটিয়াভাবে ফুলে-ফেঁপে ওঠে। ফলে সমাজে সৃষ্টি হচ্ছে ধনী ও দরিদ্রের পাহাড় প্রমাণ বৈষম্য।
অতঃপর ১৯৯১ সাল থেকে চালু হয়েছে ভ্যাটের খড়গ। যা সামগ্রিক অর্থব্যবস্থাকে আরও ধনতান্ত্রিক করে ফেলেছে।
পক্ষান্তরে ইসলামী অর্থ ব্যবস্থায় ব্যক্তি স্বাধীনতা স্বীকৃত। কিন্তু তা হালাল-হারাম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সেখানে যাকাত-ছাদাক্বা ও অন্যান্য ব্যয়-বণ্টনের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার ভিত্তিক অর্থনীতি সুনির্ধারিত। এখানে অসৎ উদ্দেশ্যে মওজূদদারী, ফটকাবাজারী ও প্রতারণা চিরকালের জন্য নিষিদ্ধ। ফলে এখানে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের স্বার্থ সুরক্ষিত।
এই অর্থ ব্যবস্থায় সম্পদের মূল মালিক হ’লেন আল্লাহ। তাই এর উৎপাদন ও ব্যয় বণ্টন সবই হবে আল্লাহর বিধান মতে। এখানে দুনিয়া মুখ্য নয়, আখেরাতই মুখ্য। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় মানুষ প্রবৃত্তির গোলাম। যার গণতান্ত্রিক তথা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় মানুষ রাষ্ট্রের গোলাম। আর ইসলামী অর্থব্যবস্থায় মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনার গোলাম। সুতরাং ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা মানুষকে যে সমৃদ্ধি দেয় তা কল্পনার বাইরে। তারপরেও আফসুস! মানুষ উৎকৃষ্ট বিষয়ের বিপরীতে নিকৃষ্ট বিষয়ের প্রতিই ধাবিত হয়। নাউযুবিল্লাহ!
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান আরিফ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এর তথ্যানুযায়ী বেনিয়া বৃটিশগুলো মুসলিম ভারত থেকে লুট করেছে ১২ হাজার লক্ষ কোটি টাকা প্রকৃতপক্ষে তারা লুট করেছে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র এখনও বন্ধ করলে যা লাভ হবে চালু রাখলে তার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি হবে ৫৩টি পরিবেশবাদী সংগঠনের দাবী অবিলম্বে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হোক কিন্তু তাদের উপেক্ষা করে পরিবেশ উপদেষ্টা প্রমাণ করছে তার পরিবেশবাদী তৎপরতা অন্য পরিবেশবাদীদের সাথে সাংঘর্ষিক এবং তার পরিবেশবাদী প্রচারণা কার্যকলাপ আসলে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নয় বরং বিশেষ প্রভুর নির্দেশনায় (প্রথম পর্ব)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
জুয়ার নেশায় বুদ হচ্ছে শিশু-কিশোররা-শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সাইটই পরিচালিত হয় দেশের বাইরে থেকে অনলাইনে জুয়ায় ছোট ছোট বাজির টাকা দিন শেষে একটি বড় অঙ্কের অর্থ হয়ে দেশ থেকে ডলারের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে প্রতিদিন এসব খেলা স্বাভাবিক গেমের মতো হওয়ায় প্রকাশ্যে খেলা হলেও আশপাশের মানুষ তা বুঝতে পারেন না কেবলমাত্র ইসলামী মূল্যবোধের উজ্জীবনেই জুয়া বন্ধ সম্ভব ইনশাআল্লাহ
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
গার্মেন্টসের চেয়েও বড় অবস্থানে তথা বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানে অধিষ্ঠান হতে পারে বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা করলে শুধু মাত্র এ খাত থেকেই বছরে ১১ লাখ কোটি টাকা অর্জন সম্ভব ইনশাআল্লাহ। যা বর্তমান বাজেটের প্রায় দেড়গুণ আর শুধু অনিয়ম এবং সরকারের অবহেলা, অসহযোগীতা দূর করলে বর্তমানেই সম্ভব প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা অর্জন জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সমৃদ্ধি সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং সরকারের গাফলতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা জনগণের জন্যও জরুরী। (২য় পর্ব)
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার রোবে, দোয়ার বরকতে- কুদরতীভাবে কমে যাচ্ছে ডলারের আধিপত্য বাংলাদেশের রিজার্ভ ডলারে রাখা উচিৎ নয়- এতে লাভ আমেরিকার মুসলিম বিশ্বে অভিন্ন মুদ্রা ব্যবস্থা বিশেষত মূল্যহীন কাগজী মুদ্রা বাদ দিয়ে সুন্নতী দিনার-দিরহাম মুদ্রা চালু করা আবশ্যক ইনশাআল্লাহ (দ্বিতীয় পর্ব)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বিদেশি হাইব্রিড বীজের ফাঁদে দেশের কৃষি। হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় ফসলের জাত, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। ফুলে-ফেঁপে উঠছে বীজ কোম্পানিগুলো।
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুশরিক ভারতের প্রতি লা’নত ওদের জনসংখ্যা দিন দিন নিম্নমুখী পক্ষান্তরে ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে খোদায়ী রহমত। (সুবহানাল্লাহ) বাংলাদেশে জনসংখ্যার এখন ৬৫ ভাগই কর্মক্ষম এবং জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার উর্ধ্বগামী বাংলাদেশ ভোগ করছে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের নিয়ামত। সুবহানাল্লাহ!
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ: মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়াতে সতর্কতা তথা মধ্যম আয়ের স্থবিরতা তাওয়াক্কুল আর তাকওয়া অবলম্বনে সব সমস্যা দূর হয়ে অচিরেই বাংলাদেশ হতে পারবে শীর্ষ সমৃদ্ধশালী দেশ ইনশাআল্লাহ
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
রিজওয়ানার পরিবেশবাদী প্রচারণার বিপরীতে রবি ঠগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনে ইতিবাচক বার্তা এবং ইউনুসের পানি ও প্রকৃতি প্রেমের বানীর পরিবর্তে আপত্তি সত্ত্বেও একনেকে রবি ঠগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প অনুমোদনে জনগণ তথা নেটিজনের মূল্যায়নটা কী?
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যখন কোনো দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুদ্ধবিমান কিনে, তখন তা শুধু একটি বিমান কেনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এর সাথে যুক্ত হয় একাধিক শর্ত, নিষেধাজ্ঞা এবং জটিল টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
লাগামহীন ব্যর্থতার পর মাদক নিয়ন্ত্রণেও সরকার চরমভাবে ব্যর্থ। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিজস্ব দুর্বলতার কারণে মাদক নিয়ন্ত্রণে নজরই দিতে পারছে না। উল্টো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য নিজেরাও জড়িয়ে পড়ছে মাদক ব্যবসায়।
২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে চীন ভারতের ভূ-রাজনীতি দেখতে চায় না দেশ প্রেমিক জনসাধারণ পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করা গেলে তিস্তা মহাপরিকল্পনাও এদেশীয় অর্থায়নেই সম্ভব ইনশাআল্লাহ তিস্তা মহাপরিকল্পনা যথাযথ করতে পারলে এবং বাস্তবায়ন করলে দেশের উত্তারঞ্চল সোনালী সমৃদ্ধিতে আরো সমুজ্জল হবে ইনশাআল্লাহ
২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












