সুওয়াল-জাওয়াব
প্রসঙ্গ: পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত
এডমিন, ০৩ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২০ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০২ অগ্রহায়ণ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা

বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ইবতেদায়ী পঞ্চম শ্রেণীর কুরআন মাজীদ ও তাজউয়ীদ শিক্ষা বইয়ের ১১ পৃষ্ঠার ১৩তম লাইনে লেখা হয়েছে- “কুরআন মাজীদের আয়াতসমূহ অর্থ না বুঝে শুধু তিলাওয়াত করার জন্য নাযিল করা হয়নি।” এ লেখাটি কতটুকু শুদ্ধ হয়েছে?
জাওয়াব:
উক্ত লেখাটি সম্পূর্ণরূপে অশুদ্ধ এবং অসম্পূর্ণ হয়েছে। কেননা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার তিলাওয়াতের গুরুত্ব ও ফযীলত আলাদাভাবেই বর্ণিত হয়েছে।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে- “পবিত্র কুরআন শরীফ উনার প্রতি অক্ষর তিলাওয়াতে দশটি করে নেকী লেখা হয়।” যেমন এ সর্ম্পকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِّنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا ، لاَ أَقُولُ الْم حَرْفٌ ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلاَمٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারাক করেন, যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একটি অক্ষর পড়বে, সে ব্যক্তি দশটি নেকী পাবে। আমি বলি না যে, আলিফ- লাম- মীম একটি অক্ষর। বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর ও মীম একটি অক্ষর।” (মিশকাত শরীফ)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ اِقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِى الدُّنْيَا فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا.
অর্থ: “পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠকারী ও আমলকারীকে বেহেশতে বলা হবে, তুমি পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করো ও উচ্চ স্থানে আরোহণ করো এবং দুনিয়ায় যেরূপ শুদ্ধভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে এখানেও তদ্রƒপ তিলাওয়াত করো। নিশ্চয়ই তুমি যতটি আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করবে, সেই পরিমাণ তোমার মর্যাদা-মর্তবা হবে।” (আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসায়ী শরীফ)
এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে, হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে মেছালী ছূরত মুবারকে একশতবার দেখেছেন। শেষবার তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, বারে ইলাহী! আপনি কোন আমলে বেশি খুশি হন। মহান আল্লাহ পাক তিনি জানালেন, আমার কালামে পাক তিলাওয়াত করলে। তখন তিনি বললেন, তা কি অর্থ বুঝে তিলাওয়াত করতে হবে? জাওয়াবে মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, না। শুধু তিলাওয়াত করলেই আমি খুশি হয়ে থাকি। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُونَهُ حَقَّ تِلَاوَتِهِ
অর্থ: “আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তাদের উচিত তা সঠিকভাবে তিলাওয়াত করা।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১২১)
অতএব, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার তিলাওয়াতের বিষয়টি সকলের জন্যেই ফরয তথা ফরযে আইন। আর অর্থ ও হাক্বীক্বত বোঝার বিষয়টি হচ্ছে ফরযে কিফায়া। অর্থাৎ কিছু সংখ্যক বা কতিপয় লোক পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করলে উক্ত ফরযে কিফায়া আদায় হয়ে যায়। আর পবিত্র কুরআন শরীফ বোঝার দ্বারা শুধু অর্থ বোঝাকে উদ্দেশ্যে নেয়া ঠিক হবে না। যদি তাই হয় তবে বাংলা ভাষায় পবিত্র কুরআন শরীফ প্রথম বঙ্গানুবাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত গ্রীস চন্দ্র সেন পাক্কা ঈমানদার হয়ে যেত; কিন্তু সে তা হয়নি। প্রতিভাত হলো, শুধুমাত্র পবিত্র কুরআন শরীফ উনার শাব্দিক বা আভিধানিক অর্থ বুঝলে বা জানলেই চলবে না, বরং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হাক্বীক্বত সম্পর্কে জানতে হবে বা বুঝতে হবে। আর এ বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক উনার সদয় ইচ্ছা মুবারক ও রহমত মুবারক উনার উপর নির্ভরশীল। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
مَنْ يُّرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُّفَقِّهْهُ فِي الدِّيْنِ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি যার কল্যাণ চান কেবল তাকেই দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের সম্পর্কে ছহীহ সমঝ বা বুঝ দান করেন।” (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
প্রতীয়মান হলো, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হাক্বীক্বত সম্পর্কে সকলেই বুঝবে না বা অনুধাবন করতে পারবে না। যেমন উলামায়ে ‘সূ’দের সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَهُمْ قُلُوبٌ لَا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَا يَسْمَعُونَ بِهَا أُولَئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ
অর্থ: “তাদের অন্তর থাকা সত্ত্বেও তারা বুঝবে না, চোখ থাকা সত্ত্বেও তারা দেখবে না এবং কান থাকা সত্ত্বেও তারা শুনবে না। তারা চতুস্পদ পশুর মতো, বরং তার চেয়েও তারা নির্বোধ।” নাঊযুবিল্লাহ! (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭৯)
সর্বোপরি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হুকুম-আহকাম পালন করার বিষয়টি অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অর্থ বুঝলেও যদি পবিত্র কুরআন শরীফ অনুযায়ী আমল করা না হয় তাহলে হাক্বীক্বী ফায়দা লাভ করতে পারবে না।
পবিত্র কুরআন শরীফ অনুযায়ী আমলকারীগণই জান্নাত ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করবেন। এখন উনারা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার তিলাওয়াত অর্থ বুঝে করুন অথবা অর্থ না বুঝেই করুন তাতে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিল করার ব্যাপারে কোন ব্যাঘাত ঘটবে না।
-০-