সুওয়াল-জাওয়াব
সুওয়াল-জাওয়াব
, ২৪ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১০ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০৯ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
সুওয়াল:
এক ব্যক্তির একদিন পারিবারিক দ্বন্দ্ব হয়। উনার আহলিয়া (স্ত্রী) বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় গিয়ে লোকদেরকে বিচার দেয়। রাস্তার এক লোক তার কথা শুনে তার আহাল (স্বামী) কে অপমানজনক অনেক কথা-বার্তা বলে। সে আহাল (স্বামী) তা সহ্য করতে না পেরে সবার সামনেই তার আহলিয়াকে (স্ত্রী) একসাথে তিন ত্বালাক্ব দেয়। কিন্তু সরকারী আইন মুতাবিক ত্বালাক্ব হয়নি বলে স্থানীয় চেয়ারম্যান সাহেবের সালিশের মাধ্যমে তারা আবার সংসার করতে থাকে। এভাবে প্রায় পাঁচ বছর অতিবাহিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, তার আহলিয়া বা স্ত্রী হিলা করতে নারাজ। তাকে হিলা করার কথা বললে, থানা পুলিশের ভয় দেখায়।
জানার বিষয় হচ্ছে- সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে উল্লেখিত বিষয়ের সঠিক ফায়ছালা কি?
জাওয়াব:
সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া মতে উল্লেখিত ব্যক্তির আহলিয়া বা স্ত্রীর উপর তিন ত্বালাক্ব পতিত হয়েছে।
অতএব, সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত মুতাবেক উল্লেখিত আহাল বা স্বামী এবং আহলিয়া বা স্ত্রী উভয়ের হিলা ব্যতীত সংসার করার কোন অধিকার নেই।
উক্ত আহাল ও আহলিয়ার জন্য ফরয হচ্ছে, এখনই পৃথক বা আলাদা হয়ে যাওয়া এবং খালিছ তওবা ইস্তিগফার করা। আর এ বিষয়ে সম্মানিত শরীয়ত উনার যে ফায়ছালা রয়েছে সে অনুযায়ী আমল করা।
কারণ এমতাবস্থায় তাদের পরস্পর দেখা-সাক্ষাত কবীরা গুনাহের শামিল। তাদের একান্তবাস ব্যভিচারের অন্তর্ভুক্ত হবে। এমতাবস্থায় যতজন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে সকলেই অবৈধ বলে গণ্য হবে।
উক্ত আহাল ও আহলিয়া পাঁচ বছর ঘর সংসার করে কঠিন কবীরা গুনাহে গুনাহগার হয়েছে।
কারণ তারা এ ব্যাপারে সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত ব্যতীত সরকার, চেয়ারম্যান, মেম্বার, সম্প্রদায় ও ব্যক্তির ফায়ছালা মেনেছে। যা মানা কুফরী হয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে ত্বালাক্ব দেয়া সম্পর্কে সরকারী যে আইন রয়েছে তা সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার সম্পূর্ণ খিলাফ বা বিরোধী হওয়ার কারণে তা মানা কাট্টা কুফরী হবে।
কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার বিরোধিতা করে কোনো মানুষের আনুগত্য করা জায়িয নেই।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
আর এ বিষয়ে থানা পুলিশকে ভয় পেলে হবে না এবং থানা পুলিশের দোহাই দিলেও চলবে না। ভয় পেতে হবে মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে এবং উনাদের আদেশ নির্দেশ মুতাবেক আমল করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِىْ وَلِاُتِمَّ نِعْمَتِىْ عَلَيْكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
অর্থ: “তোমরা মাখলূক্বাতকে ভয় করো না, আমাকে ভয় করো। তাহলে আমি তোমাদের নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দিবো এবং তোমরা অবশ্যই হিদায়েতপ্রাপ্ত হবে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫০)
নচেৎ ইহকাল ও পরকালে কঠিন কাফফারা আদায় করতে হবে।
উল্লেখ্য, উক্ত আহাল যদি তার ত্বালাক্ব প্রাপ্তা আহলিয়াকে নিয়ে সংসার করতে চায় তাহলে উক্ত আহলিয়া (্স্ত্রী) ইদ্দত পালনের পর অন্যত্র বিবাহ বসে ঘর সংসার করার পর অর্থাৎ একান্তবাসের পর যদি দ্বিতীয় আহাল বা স্বামী তাকে ত্বালাক্ব দেয় অতঃপর ইদ্দত পালন করে তারপর প্রথম আহাল বা স্বামী উক্ত আহলিয়া বা স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ করে সংসার করতে পারবে। এটা মহান আল্লাহ পাক উনারই নির্দেশ মুবারক।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَاِنْ طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَه مِنْ بَعْدُ حَتّٰى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ
অর্থ: অতঃপর যদি সে তার আহলিয়াকে (স্ত্রীকে) তিন ত্বালাক্ব দেয়, তবে সে আহলিয়া (স্ত্রী) যে পর্যন্ত না তাকে ছাড়া অপর কোন আহাল বা স্বামীর সাথে বিবাহ বসবে, সে পর্যন্ত তার জন্য হালাল হবে না। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩০)
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَلِىٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَرْفُوْعًا أَيُّمَا رَجُلٍ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ ثَلاَثًا مُبْهَمَةً أَوْ ثَلاَثًا عِنْدَ الأَقْرَاءِ لَمْ تَحِلَّ لَهُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ لَرَاجَعْتُهَا
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি মারফূ’ সনদে বর্ণনা করেন, কোনো ব্যক্তি যদি তার আহলিয়াকে একত্রে তিন ত্বালাক্ব দেয় তবে সে আহলিয়া তার জন্য হালাল হবে না, যতক্ষণ না সে অন্য আহালকে বিবাহ করবে।” (দারু কুতনী, ফিকহুস সুনান ওয়াল আছার-২/৭৫)
যদি কারো আহলিয়া নিয়ে সমস্যা হয়, তাহলে কোন তারতীবে উক্ত সমস্যা সমাধান করতে হবে তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللَّاتِى تَخَافُوْنَ نُشُوْزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِى الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ ۖ فَاِنْ اَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا ۗ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا
অর্থ: “তোমরা যারা নিজেদের আহলিয়ার (স্ত্রী) অবাধ্যতার আশঙ্কা করো তারা তাদের আহলিয়াকে নছীহত করো (তাতে কাজ না হলে) তাদের বিছানা পৃথক করে দিও। (তাতে কাজ না হলে) তাদের (মৃদু) প্রহার করবে। (এই পন্থা অবলম্বন করলে) যদি তারা অনুগত হয়ে যায় তাহলে তাদের ব্যাপারে অন্য কোনো পথের অনুসন্ধান করা থেকে বিরত থাকবে। অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মহান।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)
আর যদি এসব তারতীব অবলম্বন করার পরও কোনো ফল পাওয়া না যায়, আহলিয়ার মনোভাবের পরিবর্তন না আসে, আহাল-আহলিয়া উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক বিচ্ছেদের দিকে গড়তে থাকে তাহলে এরূপ ক্ষেত্রে কোন্ তারতীব অবলম্বন করতে হবে তাও মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিয়েছেন। ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَاِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَمًا مِنْ اَهْلِه وَحَكَمًا مِنْ اَهْلِهَا اِنْ يُرِيدَا اِصْلَاحًا يُوَفِّقِ اللّٰهُ بَيْنَهُمَا ۗ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا
অর্থ: “যদি তোমরা তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিই আশঙ্কা করো তাহলে আহাল বা স্বামীর পরিবার থেকে মিমাংসা করার যোগ্যতা সম্পন্ন একজনকে এবং আহলিয়া বা স্ত্রীর পরিবার থেকে মিমাংসা করার যোগ্যতা সম্পন্ন একজনকে সালিশ নিযুক্ত করবে। আর এই দুই ব্যক্তি যদি সংশোধন কামনা করে তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি আহাল ও আহলিয়ার মধ্যে মুহব্বত-সম্প্রীতি পয়দা করে দিবেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাজ্ঞানী, সর্ববিষয়েই খবর রাখেন।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৫)
আর এই তারতীব অবলম্বন করে তথা সালিশ দুই ব্যক্তির মাধ্যমে সংশোধনের সর্বাত্মক কোশেশও যদি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। বিচ্ছেদ ছাড়া কোনো পথ না থাকে তাহলে কিভাবে ত্বালাক্ব বা বিচ্ছেদ ঘটাবে তারও বর্ণনা মহান আল্লাহ পাক তিনি সুনিপুনভাবেই দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَاَحْصُوا الْعِدَّةَ ۖ وَاتَّقُوا اللّٰهَ رَبَّكُمْ
অর্থ: “যখন তোমরা আহলিয়াদেরকে (স্ত্রীদেরকে) ত্বালাক্ব দেয়ার ইচ্ছা করবে তখন তাদেরকে ইদ্দতের মধ্যে ত্বালাক্ব দিবে এবং ইদ্দত গণনা করবে। আর এ ব্যাপারে তোমাদের মহান রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করবে।” (পবিত্র সূরা ত্বালাক্ব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১)
(আগামী পর্বে সমাপ্য)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুন্নতী কদমবুছি বিষয়ে কওমী মুখপত্রের শরীয়তের খেলাফ বক্তব্যের খন্ডনমূলক জাওয়াব
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১৪)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৬)
২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৫)
১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পুরুষ-মহিলা নামায আদায়ের ছহীহ পদ্ধতি
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৪)
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ড
০৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৩)
০৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১০)
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ডন
২৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












