সুওয়াল-জাওয়াব:
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
, ১১ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৪ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ১৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
সুওয়াল:
এক মাসিক পত্রিকায় হজ্জের অজুহাতে ছবি তোলাকে বৈধ বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে দলীল হিসেবে পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ ১৭৩, পবিত্র সূরা আনআম শরীফ ১১৯ ও ১৪৫ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, তীব্র প্রয়োজন হারাম বস্তুকে সাময়িক হালাল করে দেয়। তাই হজ্জের ফরয আদায় করতে হারাম ছবি তোলা সাময়িক বৈধতা পাবে। নাউযুবিল্লাহ! এ বিষয়ে সঠিক জাওয়াব কি?
জাওয়াব:
একইভাবে পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার ১৪৫ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قُلْ لَّا أَجِدُ فِيْ مَاۤ اُوحِيَ اِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلٰى طَاعِمٍ يَطْعَمُهٗ إِلَّاۤ اَنْ يَّكُوْنَ مَيْـتَةً اَوْ دَمًا مَّسْفُوْحًا اَوْ لَحْمَ خِنْزِيْرٍ فَاِنَّهٗ رِجْسٌ أَوْ فِسْقًا اُهِلَّ لِغَيْرِ اللّٰـهِ بِهِ ۚ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْـرَ بَاغٍ وَّلَاعَادٍ فَإِنَّ رَبَّكَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
অর্থ: বলে দিন, আমার প্রতি যে পবিত্র ওহী মুবারক নাযিল হয়েছে, উনার মধ্যে লোকেরা যা খায় তারমধ্যে হারাম কিছুই আমি পাই না মৃত, প্রবাহমান রক্ত, শূকরের গোশত ব্যতীত। কেননা এসব অপবিত্র অথবা অবৈধ বা নাফরমানী মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্যের নাম নেয়ার কারণে। তবে কেউ অবাধ্য না হয়ে এবং সীমালঙ্ঘণ না করে তা গ্রহণে বাধ্য হলে আপনার প্রতিপালক তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
উক্ত সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-
فَمَنِ اضْطُرَّ
অর্থ: হারাম ভক্ষণে বাধ্য বা নিরুপায় হলে
غَيْـرَ بَاغٍ
অর্থ: অবাধ্য না হয়ে
وَّلَاعَادٍ
অর্থ: সীমালঙ্ঘন না করে।
অর্থাৎ জীবন রক্ষার জন্য প্রবৃত্তির অনুসরণ না করে অবাধ্যতার উদ্দেশ্য না নিয়ে হারামকে হালাল মনে না করে এবং সীমালঙ্ঘন না করে ও প্রয়োজন অনুযায়ী হারাম বস্তু গ্রহণ করতে পারে মুবাহ হিসেবে।
উল্লেখ্য, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালালসমূহ ও হারামসমূহ স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে। তাই কোন হারাম কখনো হালাল হবে না তদ্রুপ কোন হালালও কখনো হারাম হবে না। আর হজ্জের বিষয়টি জীবন বাঁচানোর মতো কোনো বিষয় নয়। তাই হজ্জের ক্ষেত্রে তাদের সেই অজুহাত মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়, বরং সম্পূর্ণরূপেই পরিত্যাজ্য।
যার প্রমাণ তাদের মুরুব্বী তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হক নিজেও। যেমন সে তার লিখিত ‘আল কুরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা’ নামক বইয়ের ৫৬ পৃষ্ঠায় কি লিখেছে দেখুন- “বর্তমানে হজ্জ করতে মহিলাদের যেহেতু পর্দার ক্ষতি হয়, তাই মহিলাদের উপর হজ্জ ফরয হলে, বদলী হজ্জ করানো চাই। কারণ এই হজ্জের ন্যায় বরকতময় ছফরে অনেক মহিলা দেখা যায় মাহরাম পুরুষ ব্যতীত রওয়ানা হয়ে যায়, যা কবীরা গুনাহ ও নাজায়িয। অনেক সময় দেখা যায় মাহরাম সাথে থাকা সত্ত্বেও মহিলারা হজ্জের ছফরে পর্দাহীন চলে ও অনেক অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। তাই বদলী হজ্জ করানোই মহিলাদের জন্য উত্তম। এ সম্পর্কে আল্লামা কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
لَا يَلِيْقُ بِالْـحِكْمَةِ اِيْـجَابٌ فَـرْضٌ عَلٰى وَجْهٍ يَـفُوْتُهٗ فَـرْضٌ اٰخَرُ
অর্থ: এমন হিকমত বা কৌশল অবলম্বন করা উচিত হবে না, যা দ্বারা একটি ফরয আদায় করতে গিয়ে অন্য একটি ফরয ছুটে যায়। ” (রাহনুমায়ে হুজ্জাজ)
তাদের উক্ত মুরুব্বীর মতে একজন মহিলার যদি টাকা থাকার পরও বেপর্দা হওয়ার আশঙ্কায় হজ্জে যাওয়া না যায় তবে পুরুষের টাকা থাকার পরও হারাম কাজ অর্থাৎ ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়ার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বে তার উপর হজ্জ ফরয হবে কি করে বা সে হজ্জে যাবে কিভাবে?
আওয়ামুন নাস অর্থাৎ সাধারণ জনগণ হোক অথবা খাছ লোক হোক কারো জন্যই ছবি তুলে বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা জায়িয নেই। আর আখাছ্ছুল খাছ যারা অর্থাৎ আলিম-উলামা, পীর-মাশায়েখ বা হাদীদের জন্য তো কখনোই ছবি তুলে বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা জায়িয নেই।
অতএব, পবিত্র পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে যেটা হারাম সেটা পবিত্র মক্কা শরীফ-পবিত্র মদীনা শরীফসহ সমগ্র বিশ্বের মৌলবীরা একমত হয়ে জায়িয বললেও তা কখনই জায়িয হবে না, হতে পারে না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ছবি তুলে ও বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা যাবে না, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২১৭ ও ২৫৪তম সংখ্যার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ পাঠ করুন। (সমাপ্ত)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সুন্নতী কদমবুছি বিষয়ে কওমী মুখপত্রের শরীয়তের খেলাফ বক্তব্যের খন্ডনমূলক জাওয়াব
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১৪)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৬)
২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৫)
১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পুরুষ-মহিলা নামায আদায়ের ছহীহ পদ্ধতি
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৪)
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ড
০৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৩)
০৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১০)
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ডন
২৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ড
২১ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












