সুওয়াল-জাওয়াব:
প্রসঙ্গ: পুরুষ-মহিলা নামায আদায়ের ছহীহ পদ্ধতি
, ১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
সুওয়াল:
কিছু বাতিল ফিরকা বের হয়েছে তারা প্রচার করে বেড়াচ্ছে, যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, আমাকে তোমরা যেভাবে নামায পড়তে দেখেছো সেভাবে নামায আদায় করো। তাছাড়া বাজারে বদ আক্বীদা ও বাতিল ফিরক্বার কিছু বইপত্র বের হয়েছে যাতে লিখা হয়েছে, ‘পুরুষ ও মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি একই রকম। কোনরূপ প্রভেদ বা পার্থক্য নেই। ’ এ বিষয়ে সঠিক ফায়ছালা কি হবে?
জাওয়াব:
বাতিল ফিরকার উক্ত বক্তব্য এবং লেখা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ইমাম ও ফক্বীহ্গণের মত ও পথের সম্পূর্ণ খিলাফ ও কুফরী। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ইমাম ও ফক্বীহগণের মতে, নামাযের মধ্যে অনেক স্থানে মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি আর পুরুষের নামায আদায়ের পদ্ধতি এক রকম নয়; বরং পার্থক্য রয়েছে। এ পার্থক্য শরয়ী কারণে এবং এ পার্থক্য কেবল নামাযেই নয় অন্যান্য ইবাদতের মধ্যেও রয়েছে। কেননা পুরুষ ও মহিলার অবস্থা সমান নয়।
উদাহরণস্বরূপ মহিলাদের মাসিক অসুস্থতার সময় নামাযই পড়তে হয় না। বরং উক্ত অবস্থায় নামায পড়লে ছওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হবে। আর উক্ত অবস্থায় যে নামায তরক করা হয় তা কাযাও করতে হয় না। মহিলাদের উক্ত অবস্থায় রোযার মাসে রোযা রাখাও নিষিদ্ধ। বরং অন্য সময় তারা রোযা কাযা করে নিবে। হজ্জের সামর্থ্য থাকার পরও তাদের জন্য একাকী হজ্জ আদায় করা নিষিদ্ধ; যতক্ষণ না তাদের সাথে একজন সচ্চরিত্রবান মাহরাম পুরুষ থাকবে। মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে মহিলারা ছেলেদের অর্ধেক পেয়ে থাকে ইত্যাদি।
অতএব, কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফ মতে নামাযে যে সকল স্থানে পুরুষ ও মহিলার মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে তা উল্লেখ করা হলো-
১. তাকবীরে তাহরীমা বাঁধার সময় পুরুষেরা কান পর্যন্ত হাত উঠাবে। আর মহিলারা হাত উঠাবে কাঁধ পর্যন্ত।
২. ঠান্ডা বা অন্য কোন ওজর না থাকলে তাকবীরে তাহরীমা বাঁধার সময় পুরুষেরা চাদর ইত্যাদি হতে হাত বের করে কান পর্যন্ত হাত উঠাবে। আর মহিলারা সর্বদাই কাপড়ের ভিতর হাত রেখে কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে।
৩. পুরুষেরা নাভীর নীচে বা নাভী বরাবর হাত বাঁধবে। আর মহিলারা বুকের উপর হাত বাঁধবে।
৪. পুরুষেরা হাত বাঁধার সময় ডান হাতের বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা হালকাভাবে বাম হাতের কব্জি ধরবে এবং ডান হাতের অনামিকা, মধ্যমা ও শাহাদত আঙ্গুল বাম হাতের পিঠের উপর বিছিয়ে রাখবে। আর মহিলারা ডান হাতের পাতা বাম হাতের পিঠের উপর রাখবে। কিন্তু কব্জি বা কলাই ধরবে না।
৫. রুকু করার সময় পুরুষেরা এমনভাবে ঝুঁকবে যেন মাথা, পিঠ ও নিতম্ব বরাবর হয়। আর মহিলারা এ পরিমাণ ঝুঁকবে যাতে আঙ্গুল হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে।
৬. রুকুর সময় পুরুষেরা হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক ফাঁক করে হাটু ধরবে। আর মহিলারা আঙ্গুল বিস্তার করবে না এবং হাঁটুও ধরবে না। বরং আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে হাঁটু স্পর্শ করে রাখবে।
৭. রুকুতে পুরুষেরা হাঁটু সোজা করে রাখবে। আর মহিলারা হাঁটু কিছুটা বাঁকাবে।
৮. রুকুর অবস্থায় পুরুষেরা কনুই পাঁজর হতে ফাঁক রাখবে। আর মহিলারা কনুই পাঁজরের সাথে মিলিয়ে রাখবে।
৯. সিজদাকালে পুরুষেরা পেট উরু হতে এবং বাজু বগল হতে পৃথক রাখবে। আর মহিলারা পেট রানের সাথে এবং বাজু বগলের সাথে মিলিয়ে রাখবে।
১০. সিজদা অবস্থায় পুরুষেরা কনুই মাটি হতে উপরে রাখবে। আর মহিলারা মাটির সাথে মিলিয়ে বা বিছিয়ে রাখবে।
১১. সিজদার মধ্যে পুরুষেরা পায়ের আঙ্গুলগুলো ক্বিবলার দিকে মুড়িয়ে তার উপর ভর দিয়ে পায়ের পাতা দু’খানা খাঁড়া রাখবে। আর মহিলারা উভয় পায়ের পাতা ডান দিকে বের করে মাটিতে বিছিয়ে রাখবে।
১২. বসার সময় পুরুষেরা পায়ের আঙ্গুলগুলো ক্বিবলার দিকে মুড়িয়ে রেখে তার উপর ভর দিয়ে ডান পায়ের পাতা খাঁড়া রাখবে এবং বাম পায়ের পাতা বিছিয়ে তার উপর বসবে। আর মহিলারা পায়ের উপর বসবে না। বরং পায়ের পাতা ডান দিকে বের করে চোতরে ভর করে বসবে।
১৩. পুরুষদের জন্য নামাযে জেহরী বা স্বশব্দে ক্বিরায়াত রয়েছে। আর মহিলাদের জন্য জেহরী বা স্বশব্দে ক্বিরায়াত নেই।
১৪. পুরুষদের জন্য জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। আর মহিলাদের জন্য মসজিদে জামায়াতে গিয়ে নামায পড়া আমভাবে মাকরূহ তাহরীমী এবং খাছভাবে কুফরী।
১৫. পুরুষদের জন্য জুমুয়া ফরয। আর মহিলাদের জন্য জুমুয়া নেই।
১৬. পুরুষদের জন্য ঈদের নামায ওয়াজিব। আর মহিলাদের জন্য ঈদের নামায নেই।
১৭. পুরুষের জন্য আযান ও ইক্বামত রয়েছে। মহিলাদের জন্য আযান ও ইক্বামত নেই।
১৮. পুরুষদের জন্য ফজরের ওয়াক্তে বিশেষ পরিস্কার হলে ফরয পড়া মুস্তাহাব। আর মহিলাদের জন্য আঁধার থাকতেই পড়া মুস্তাহাব।
কাজেই, বাতিল ফিরকার লোকদের কোন বক্তব্য এবং তাদের কোন লেখা গ্রহণ করা যাবে না যতক্ষণ না সেটা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের মুয়াফিক না হবে অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুযায়ী না হবে।
জানা আবশ্যক, কোন বিষয়ে মাসয়ালা বা ফতওয়া দিতে হলে সমস্ত বর্ণনা যাচাই করে ফতওয়া দিতে হবে। কোন হাদীছ শরীফের কি হুকুম সেটা জানতে হবে। অন্যথায় মাসয়ালা বা ফতওয়া শুদ্ধ হবে না।
মূলকথা হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পুরুষ-মহিলা, জিন-ইনসান সকলের জন্য আদর্শ মুবারক। উনার সেই আদর্শ মুবারক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-আনহুন্নাগণ উনারা গ্রহণ করেছেন বা উনাদেরকে তিনি শিক্ষা দিয়েছেন। পরবর্তী উম্মত সেই আদর্শ মুবারক গ্রহণ করতে হলে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-আনহুন্না উনাদের থেকে গ্রহণ করতে হবে। আর এ কারণেই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করে দিয়েছেন-
فَإِنْ اٰمَنُـوْا بِمِثْلِ مَا اٰمَنْـتُمْ بِهٖ فَـقَدِ اهْتَدَوْا
অর্থাৎ লোকেরা যদি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ন্যায় ঈমান আনয়ন করে (এবং আমল করে) তবেই তারা হিদায়েত লাভ করবে। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৭)
অতএব প্রতিভাত যে, পরবর্তী পুরুষদের জন্য অনুসরণীয় হচ্ছেন হযরত পুরুষ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা। আর পরবর্তী মহিলাদের জন্য অনুসরণীয় হচ্ছেন হযরত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনারা।
আর এজন্যই পবিত্র হাদীছ শরীফ মারফত জানা যায় যে, হযরত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনারা উনাদের যাবতীয় বিষয় হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের নিকট জেনে নিয়ে আমল করেছিলেন।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুন্নতী কদমবুছি বিষয়ে কওমী মুখপত্রের শরীয়তের খেলাফ বক্তব্যের খন্ডনমূলক জাওয়াব
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১৪)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৬)
২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৫)
১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৪)
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ড
০৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৩)
০৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১০)
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ডন
২৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ড
২১ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












