সুওয়াল-জাওয়াব:
সুন্নতী কদমবুছি বিষয়ে কওমী মুখপত্রের শরীয়তের খেলাফ বক্তব্যের খন্ডনমূলক জাওয়াব
, ১৬ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৯ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
সুওয়াল:
ক্বওমী মাদরাসার মুখপত্রের জুমাদাল উখরা ১৪৪৬ হিজরী সংখ্যায় এক সুওয়ালের জাওয়াবে বলা হয়েছে, কদমবুছি নিষেধ হওয়ার পক্ষে শরীয়তে কোন নস তথা প্রমাণ নেই। তবে সেজদার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ যেনো না হয়ে যায় সেজন্য সতর্কতা হলো- কদমবুছি থেকে বিরত থাকা।
জাওয়াব (২য় অংশ):
عَنْ حَضْرَتْ بُـرَيْدَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ فَائْذَنْ لِّى اُقَبِّلُ يَدَيْكَ وَرِجْلَيْكَ فَاَذِنَ لَهٗ اَىْ فِى تَـقْبِيْلِ يَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ فَـقَبَّـلَهُمَا
অথ: হযরত বুরাইদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (গাছের সিজদা দেয়ার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর) আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে আপনার উভয় হাত ও পা মুবারকে বুছা (চুম্বন) দেয়ার অনুমতি দিন। তখন উনাকে উভয় হাত ও পা মুবারকে বুছা (চুম্বন) দেয়ার অনুমতি দেয়া হলো। তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উভয় হাত ও পা মুবারকে বুছা (চুম্বন) দিলেন। (নাসীমুর রিয়াজ শরহে কাজী আয়াজ খ- ৩ পৃঃ ৫০, কিতাবুল আযকার লিন্ নববী)
عَنِ الْوَازِعِ بْنِ زَارِعٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ ، عَنْ جَدِّهَا وَكَانَ فِيْ وَفْدِ عَبْدِ الْقَيْسِ قَالَ: لَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ فَجَعَلْنَا نَـتَـبَادَرُ مِنْ رَوَاحِلِنَا فَـنُـقَبِّلُ يَدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرِجْلَهٗ
অর্থ: হযরত ওয়াযে’ ইবনে যারে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দাদা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা আব্দুল কায়েস গোত্রে থাকা অবস্থায় যখন মদীনা শরীফ আসতাম, তখন আমরা সাওয়ারী হতে তাড়াতাড়ী অবতরণ করে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল মাগফিরাত বা হাত মুবারক ও নূরুদ দারাজাত বা পা মুবারক বুছা (চুম্বন) দিতাম। (আবু দাউদ শরীফ খ- ২ পৃঃ ৭০৯, বযলুল মাজহুদ খ- ৬ পৃঃ ৩২৮, ফতহুল বারী খ- ১১ পৃঃ৫৭, মেশকাত শরীফ, মেরকাত খ- ৭ পৃঃ ৮০, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহেরে হক্ব, ই’লাউস সুনান খ- ১৭ পৃঃ ৪২৬)
উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত হয়েছে যে, কদমবুছি করা সুন্নতে ছাহাবা’র অন্তুর্ভুক্ত। আর সুন্নতে ছাহাবা পালন করা সম্পর্কে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِيْ وَسُنَّةِ الْـخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ تَمَسَّكُوْابِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْـهَا بِالنَّـوَاجِذِ
অর্থ: তোমাদের প্রতি আমার সুন্নত মুবারক ও আমার হেদায়েতপ্রাপ্ত হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন তথা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সুন্নত মুবারক পালন করা ওয়াজিব। তোমরা তা মাড়ির দাঁত দিয়ে দৃঢ়তার সহিত আঁকড়ে ধরো অর্থাৎ আমল করো। (মেশকাত শরীফ)
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আজকাল কিছু নীম মোল্লার উদ্ভব ঘটেছে যাদের ক্বদমবুছী সম্পর্কে ইলিম না থাকায় কু যুক্তি দিয়ে থাকে যে, কদমবুছী করতে মাথা নীচু করতে হয় যা সিজদার নামান্তর বিধায় তা শিরিক। নাউযুবিল্লাহ!
নীম মোল্লাদের বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, তারা তো অনেক কাজে মাথা নীচু করে সম্পাদন করে থাকে তাহলে তারাওতো শিরিক কাজ করে মুশরিক হয়েছে। যেমন পানাহারে, অযু- ইস্তিঞ্জায়, লেখা-পড়ায়, ঘর ঝাড়– দেয়ার সময় ইত্যাদি কাজে মাথা নীচু করতে হয়, এগুলোকে তো শিরক বা সিজদা বলা হয় না।
মূলতঃ সিজদা হয় নাক ও কপাল দিয়ে। আর চুম্বন হয় মুখ দিয়ে। চুম্বন করতে তো মাথা নীচু করতেই হবে। যদি মাথা নীচু করলেই শিরিক হয় তাহলে জামায়াতে নামাযের সময় কাতার বন্দী হয়ে একজন অপরজনের পায়ের কাছে সিজদা করে নামায পড়ে থাকে তাহলে এটাকেতো আরো বড় শিরক বলা হতো। কিন্তু তাতো বলা হয় না।
মোটকথা, মাথা নিচু হলেই সিজদা বা শিরিক হয় না। সিজদার আলাদা হুকুম। আর কদমবুছি’র আলাদা হুকুম। একটার সাথে আরেকটার কোন সম্পর্ক নেই।
দলীলসমূহ : (১) বুখারী, (২) তিরমিযী, (৩) নাসাঈ, (৪) আবু দাউদ, (৫) ইবনে মাজাহ, (৬) মেশকাত, (৭) ফতহুল বারী, (৮) উমদাতুল ক্বারী, (৯) মেরকাত,(১০) আশয়াতুল লুময়াত, (১১) লুময়াত,(১২) মোজাহেরে হক্ব, (১৩) তোহফাতুল আহওয়াজী, (১৪) ই’লাউস্ সুনান, (১৫) আদাবুল মুফরাদ, (১৬) মুছান্নেফ ইবনে আবী শায়বা, (১৭) বজলুল মাজহুদ, (১৮) কিতাবুল আযকার লিন নববী, (১৯) নাসিমুর রিয়াজ শরহে কাজী আয়াজ, (২০) দালায়েল লিল বায়হাক্বী, (২১) তবরানী, (২২) মুসতাদরেকে হাকেম, (২৩) মুসনাদে আহমদ, (২৪) আলমগীরী, (২৫) শামী, (২৬) দুররুল মুখতার, (২৭) গায়াতুল আওতার, (২৮) তাতারখানিয়া, (২৯) মুহীত ইত্যাদি।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুন্নতী কদমবুছি বিষয়ে কওমী মুখপত্রের শরীয়তের খেলাফ বক্তব্যের খন্ডনমূলক জাওয়াব
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১৪)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৬)
২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৫)
১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পুরুষ-মহিলা নামায আদায়ের ছহীহ পদ্ধতি
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৪)
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ড
০৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৩)
০৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১০)
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ডন
২৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












