১০০ টি চমৎকার ঘটনা
বদকারদের আমলই তাদের বিচার করবে
ঘটনা-৮০
, ৩০ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৫ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২৯ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মহিলাদের পাতা
একদিন সেই লোকটা ঘোষণা শেষ করে চলে যাওয়ার পরে বাদশাহর এক সভাসদ বাদশাহর কানে কানে বললো, ‘হে বাদশাহ! এই যে লোকটা আপনার এখানে আসে, সে এখান থেকে বের হয়ে গিয়ে আপনার দুর্নাম করে। বলে, বাদশাহর মুখে দুর্গন্ধ।’ বাদশাহ শুনে বললো, ‘এর প্রমাণ কি?’ তখন কুচক্রী সভাসদ বললো, ‘আপনি যদি প্রমাণ চান তাহলে কালকে তাকে আপনার কাছে ডাকুন। দেখবেন কালকেই সে মুখে রুমাল দিয়ে আসবে।’
কথামত বাদশাহ পরের দিন লোকটাকে আসার জন্য সংবাদ দিলো। দেখা গেলো সত্যিই লোকটা তার মুখ রুমাল দিয়ে ঢেকে বাদশাহর কাছে আসলো। বাদশাহ তার ক্রোধ হজম করলো, কিছুই বললো না। শুধু একটা চিঠি লিখে লোকটাকে দিয়ে বললো, ‘তুমি এ চিঠিটা অমুক লোকের কাছে পৌঁছিয়ে দিও।’ লোকটা চিঠি নিয়ে বের হয়ে গেলো।
সাধারণত বাদশাহ কাউকে চিঠি লিখত না। আর যদি কাউকে লিখতই, তাহলে তাকে পুরস্কার দেয়ার জন্য লিখত। তাই সেই হিংসুক সভাসদ যখন দূর থেকে দেখলো বাদশাহ লোকটাকে একটা চিঠি লিখে দিলো, সে তাড়াতাড়ি গিয়ে লোকটাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘ভাই! তোমাকে যে চিঠিটা বাদশাহ দিয়েছেন, সে চিঠি তুমি কোথায় নিয়ে যাবে?’ লোকটা বললো, ‘এ চিঠি আমাকে অমুক লোকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।’ হিংসুক সভাসদ বললো, ‘ঠিক আছে, তোমার পৌঁছানোর দরকার নেই। আমার কাছে দিয়ে দাও, আমি পৌঁছিয়ে দিব।’ তারপর সে লোকটার হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে চলে গেলো।
সভাসদ যখন চিঠিটা নিয়ে যথাস্থানে পৌঁছলো, তখন দেখা গেলো চিঠিটা জল্লাদের উদ্দেশ্যে লেখা। জল্লাদ চিঠি খুলে দেখলো, সেখানে পত্রবাহকের মৃত্যুদ-ের ফরমান লেখা। জল্লাদ বললো, ‘হে ব্যক্তি! তোমাকে তো মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে।’ ভয় পেয়ে সভাসদ বললো, ‘এ চিঠি আমাকে নয়, অমুক ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছিল। তুমি বাদশাহকে জিজ্ঞেস করে দেখ।’ কিন্তু জল্লাদ বললো, ‘না, বাদশাহকে জিজ্ঞেস করতে হবে না। বাদশাহর দস্তখত এখানে রয়ে গিয়েছে। আর চিঠিতে স্পষ্ট করেই পত্রবাহকের মৃত্যুদ-ের কথা বলা আছে।’ তারপর সভাসদের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হলো, তার গর্দান ফেলে দেয়া হলো। তার চামড়াটা ছিলে, সেটার মধ্যে ভুষি ভরে বাদশাহর কাছে প্রেরণ করা হলো।
এদিকে পরের দিন সকালে সেই লোকটা যথারীতি আসলো বাদশাহর দরবারে। বাদশাহ তাকে দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললো, ‘কি ব্যাপার! তুমি আসলে কি করে?’ সে বললো, ‘হুযূর! আমি প্রত্যেকদিন যেভাবে আসি, আজকেও সেভাবে এসেছি।’ বাদশাহ জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমাকে আমি যে
চিঠিটা দিয়েছিলাম, সে চিঠিটা কোথায়?’ সে বললো, ‘হুযূর! আপনার অমুক সভাসদ চিঠিটা নিয়ে গিয়েছে এবং বলেছে
যে, সে চিঠিটা সঠিক জায়গায় পৌঁছিয়ে দিবে।’ বাদশাহ বললো, ‘হ্যাঁ, সে সঠিক জায়গায় পৌঁছিয়ে দিবে সত্যিই; তবে জিনিসটা অন্যরকম হয়ে গেলো।’ লোকটি বললো, ‘কেমন?’ বাদশাহ বললো, ‘আসলে আমি চিঠিটা লিখেছিলাম তোমার সম্পর্কে। আচ্ছা! তুমি একটা কথা বলো দেখি, তুমি কি বাহিরে একথা বলে থাকো যে, আমার মুখে দুর্গন্ধ?’ লোকটা অবাক হয়ে বললো, ‘না! আমিতো কখনও একথা বলিনি।’ বাদশাহ জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি যদি একথা নাই বলে থাকো, তাহলে গতকাল তুমি যখন আমার কাছে আসলে, তখন তোমার মুখ রুমাল দিয়ে ঢাকা ছিল কেন?’ লোকটা বললো, ‘হুযূর! মূলতঃ বিষয়টা এরকম নয়। আপনার এই সভাসদ, আপনার এখানে আসার পূর্বে তার বাড়িতে আমাকে দাওয়াত করেছিল। কিছু রসুন মিশ্রিত তরকারি সে আমাকে খেতে দিয়েছিল, যার কারণে আমার মুখে দুর্গন্ধ হয়। আমার মুখের দুর্গন্ধটা আপনার নাকে যেন না যায়, সে জন্য আমি রুমাল দিয়ে আমার মুখ ঢেকে রেখেছিলাম।’ তখন বাদশাহ বললো, “তাহলে তো তোমার কথা সত্যে পরিণত হয়েছে। আমি তোমার প্রতি গোসসা হয়ে চিঠিতে লিখেছিলাম, ‘জল্লাদ! এ ব্যক্তি তোমার কাছে যাওয়া মাত্রই তাকে হত্যা করবে এবং তার চামড়ার মধ্যে ভুষি পরিপূর্ণ করে আমার কাছে পৌঁছিয়ে দেবে।’ জল্লাদ কিন্তু ঠিকই পৌঁছিয়ে দিয়েছে; তবে তোমার লাশ নয়, সেই সভাসদের লাশ। তুমি যে প্রত্যেকদিন বলো, ‘নেককারদের সাথে সদ্ব্যবহার করো আর যে দুষ্ট, দুরাচার তাকে ছেড়ে দাও তার আমলের উপর। তার বিচারের জরুরত নেই, তার আমলের দ্বারাই তার বিচার হবে।’ সত্যিই সেই সভাসদের আমলের দ্বারাই তার বিচার হয়েছে। সে যে তোমার দুর্নাম করেছিল, তোমাকে দোষারোপ করেছিল, তোমার প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করেছিল; এই কারণে তার মৃত্যুদন্ড হয়ে গিয়েছে।”
ইনশাআল্লাহ চলবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (৩)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (১০)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সর্বাবস্থায় আজল বা তাড়াহুড়া না করে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হাশরের ময়দানে যে ৫টি প্রশ্নের উত্তর প্রত্যেককেই দিতে হবে
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












