বদ নযর বা কুদৃষ্টি এবং তার শরয়ী আহকাম (১)
, ২৮ রবিউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২২ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ২১ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ০৫ কার্তিক, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মহিলাদের পাতা
মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। বিশেষত উম্মতে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত। মানুষের কল্যাণের জন্যই উনাদের সৃষ্টি। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ.
অর্থ: তোমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত। তোমাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১০)
উম্মতে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সকলের কল্যাণকামী হবেন, উনাদের দ্বারা কারো কোন ক্ষতি সাধিত হবে না- এটাই স্বাভাবিক।
তবে উনাদের মধ্যে কিছু মানুষ আছে, যারা সেই লক্ষ- উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে গেছে। তারা অন্যের সুখ-স্বাচ্ছন্দে ঈর্ষান্বিত হয়। পরের ভালো তারা সহ্য করতে পারে না। কখনো তারা স্বেচ্ছায় কারো প্রতি বদ দৃষ্টি দেয়। কখনো বা তাদের অজান্তে তাদের বদ নযর অন্যের উপর পড়ে যায়। ফলে তাদের কুদৃষ্টির দ্বারা উম্মতে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্ষতিগ্রস্থ হন। তাদের বদ নযর, হিংসা-বিদ্বেষ, যাদু-টোনার কারণে মানুষ, জ্বিন, পশু-পাখি, গাছ-পালা, তরু-লতা, ক্ষেত-খামার অফুরন্ত ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সাথে সাথে নানা ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনার সূত্রপাত ঘটে থাকে। তাদের সু-নযর কু-নযরে পরিণত হয়।
মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّ النَّظْرَةَ سَهْمٌ مِنْ سِهَامِ إِبْلِيسَ.
অর্থ: নিশ্চয়ই বদ নযর বা কুদৃষ্টি হচ্ছে শয়তানের একটি বিষাক্ত তীর। (আল মুস্তাদরাক লিল হাকিম, আল মু’জামুল কবীর লিত তবারানী ইত্যাদি)
নযর বা দৃষ্টির দ্বারা যখন কারো ক্ষতি সাধিত হয় কিংবা ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে কারো প্রতি নযর দেয়া হয় তখন তাকে বদ নযর বা কুদৃষ্টি বলে। জ্বিন-ইনসান সকল সৃষ্টির বদ নযর বা কুদৃষ্টির প্রভাব (তা’ছীর) আছে। কারো বেশী, কারো কম। এমন কিছু জ্বিন ও ইনসান (মানুষ) আছে যাদের বদ নযর বা কুদৃষ্টির ফলে মানুষ এতই প্রভাবিত হয় যে, শেষ পর্যন্ত তাকে কবরে যেতে হয়। পশু-পাখিদের উপর পড়ে গেলে সেই পশু-পাখি মারা যায়। গাছ-পালা, ক্ষেত-খামারের উপর পড়ে গেলে, ফল ও ফসল নষ্ট হয়ে যায়।
কখনো নিজের বদ নযর নিজের উপরই প্রভাব বিস্তার করে, নিজেরই ক্ষতি সাধন করে। আবার কখনোবা নিজের সন্তান-সন্ততির উপর বদ নযর বা কুদৃষ্টি পড়ে সন্তান-সন্ততির ক্ষতি সাধন করে। তারা নানা রোগ ব্যাধির সম্মুখীন হয়। কখনো অন্যের উপর পড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। মানুষিক কিংবা শারীরিক রোগের সৃষ্টি হয়।
কখনো বা পরহেযগার, মুত্তাকী ব্যক্তিগণের বদ নযর বা কুদৃষ্টির প্রভাব বা তা’ছীর দ্বারা ক্ষতি সাধিত হয়। কেউ বা স্বেচ্ছায় কারো উপর কুদৃষ্টি দেয় আবার কখনো বা অজান্তে কারো উপর অনাকাঙ্খিত অবস্থার সৃষ্টি করে। ফলে মানুষ, পশু-পাখি, গাছ-পালা, তরু-লতা, ক্ষেত-খামারের মধ্যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে অসুস্থতা দেখা দেয়।
অবশ্য জ্বিনদেরও কখনো বদ নযর বা কুদৃষ্টি কারো উপর পড়ে যেতে পারে। তখনও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মানুষিক কিংবা শারীরিক নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। তাই তো বদ নযর বা কুদৃষ্টি সম্পর্কিত ইলিম বা জ্ঞান হাছিল করা আবশ্যক।
আমরা আলোচ্য নিবন্ধে, বদ নযর কি? বদ নযর কাকে বলে? বদ নযর কখন ও কিভাবে পড়তে পারে? কার উপর পড়তে পারে? তার রূপরেখা কি? বদ নযর থেকে মুক্তির উপায় কি? যাদের বদ নযর ক্ষতিসাধন করে তাদের হুকুম ও করণীয় কি? ইত্যাদি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফের আলোকে স্বল্প পরিসরে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ!
-আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












