বদ নযর বা কুদৃষ্টি এবং তার শরয়ী আহকাম (২)
, ০৫ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৯ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৮ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ১২ কার্তিক, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বদ নযর কি? বদ নযর কাকে বলে?
বদ অর্থ: খারাপ, নযর অর্থ: দৃষ্টি। যে দৃষ্টির কারণে ক্ষতি সাধিত হয় কিংবা কারো ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে দৃষ্টি দেয় তাকে বদ নযর বলে। কেউ কেউ উহাকে চোখ লাগা বা নযর লাগা, কুদৃষ্টিও বলে থাকে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَإِنْ يَّكَادُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصَارِهِمْ لَمَّا سَمِعُوا الذِّكْرَ وَيَقُولُونَ إِنَّهُ لَمَجْنُونٌ.
অর্থ: কাফিরেরা যখন পবিত্র কুরআন শরীফ শুনে তখন তারা আপনার দিকে এমনভাবে তাকায়, যেন তারা আপনাকে তাদের বদ নযর বা কুদৃষ্টি দ্বারা আপনাকে আছাড় দিয়ে ফেলে দেবে। নাউযুবিল্লাহ! অবশেষে তারা বলে, তিনি তো একজন পাগল- নাউযুবিল্লাহ! (পবিত্র সূরা ক্বলম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫১)
এ পবিত্র আয়াত শরীফের তাফসীরে হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন, মক্কা শরীফে এক লোক বদ নযরে বিখ্যাত ছিলো। মক্কা শরীফের কাফিররা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্ষতি সাধনের লক্ষ্যে তাকে নিয়োগ করলো। নাউযুবিল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতেন, তখন ঐ বদলোকটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বদ নযর দেয়ার চেষ্টা করতো। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হিফাজত করেন। তার বদ নযর উনার উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। ব্যর্থ হয়ে পরিশেষে উনার পবিত্র শান-মান মুবারকের খিলাফ কথা বলা-বলি শুরু করে দিত। নাউযুবিল্লাহ! (তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে মাজহারী, তাফসীরে বাগবী, তাফসীরে কবীর, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে রুহুল বয়ান, তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন-৮/৫৫০)
পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনাদের ভাইগণের ঘটনা বর্ণনায় ইরশাদ মুবারক করেন-
وَقَالَ يَا بَنِيَّ لَا تَدْخُلُوا مِن بَابٍ وَاحِدٍ وَادْخُلُوا مِنْ أَبْوَابٍ مُّتَفَرِّقَةٍ ۖ وَمَا أُغْنِي عَنكُم مِّنَ اللهِ مِن شَيْءٍ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۖ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ ۖ وَعَلَيْهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُونَ.
অর্থ: হযরত ইয়া’কুব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে আমার প্রিয় সন্তানগণ, মিশরে প্রবেশের সময় আপনারা সবাই এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন না। বরং ভিন্ন ভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম-আহকাম থেকে বিরত রাখার অধিকার কারো নেই। হুকুমদাতা কেবলই মহান আল্লাহ পাক তিনিই। উনার উপরই আমরা ভরসা করি। আর তাওয়াক্কুল বা ভরসাকারীগণের উচিত উনার উপরই তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা। (পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৭)
রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু, হযরত ইমাম মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাসহ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের সকল মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এই আয়াত শরীফ প্রসঙ্গে বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তিনি উনার সন্তানগণের ব্যাপারে বদ নযরের আশঙ্কা করেছিলেন যে, উনার সন্তানদের দেখে লোকদের বদ নযর লাগতে পারে। কারণ উনারা ছিলেন ১১ ভাই। আবার উনারা প্রত্যেকেই সুস্বাস্থ্যবান ও সুঠাম দেহ মুবারকের অধিকারী ছিলেন। এজন্য সন্তানদের মিশরে প্রবেশের সময় আলাদা আলাদাভাবে প্রবেশ করতে বলেছেন। সাথে সাথে এটাও উল্লেখ করেছেন যে, এসব (বদ নযর এবং তা থেকে বাঁচার পদ্ধতি) মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমের উপর নির্ভরশীল। তাই সর্বক্ষেত্রে সবসময় মহান আল্লাহ পাক উনার উপরই তাওয়াক্কুল বা ভরসা রাখা আবশ্যক। (তাফসীরে মাজহারী, তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন-৫/৯৫)
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْعَيْنُ حَقٌّ.
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বদ নযর বা কুদৃষ্টি সত্য। তার তা’ছীর বা প্রভাব আছে। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ-৪০৬৪)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ السَّادِسَةِ اُمِّ سَلَمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى فِي بَيْتِهَا جَارِيَةً فِي وَجْهِهَا سَفْعَةٌ فَقَالَ اسْتَرْقُوا لَهَا فَإِنَّ بِهَا النَّظْرَةَ.
অর্থ: হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পবিত্র হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক নিলেন। একজন বালিকা দেখলেন, যার চেহারায় জ্বিনের বদ নযরের আলামত ছিলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এই বালিকাকে রুকইয়া বা ঝাড়-ফুঁক করুন। কারণ উনার বদ নযর লেগেছে। (বুখারী শরীফ-৫৪০৭, মুসলিম শরীফ-৪০৭৪)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وَسَلَّمَ :اِسْتَعِيذُوْا بِاللهِ فَإِنَّ الْعَيْنَ حَقٌّ.
অর্থ: হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে বদ নযর থেকে পানাহ চাও। কেননা বদ নযর সত্য তথা তার বদ তা’ছীর রয়েছে। (ইবনু মাজাহ শরীফ- ৩৫০৮,রুকইয়াহ-৭২)
-আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যা খাওয়া হারাম করা হয়েছে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












