বাংলাদেশে গরু জবাই করার রীতি অর্জনে পূর্বপুরুষদের ত্যাগ
, ১৪ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৪ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৩ মে, ২০২৪ খ্রি:, ০৯ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) আপনাদের মতামত
বাংলাদেশে বর্তমানে কোরবানী ঈদে যে গরু জবাই করার রীতি পাওয়া যায়, তা কিন্তু এমনি এমনি লাভ করা হয়নি, বরং বাংলার মুসলমানদের বেশ করে কষ্ট করে এই রীতি অর্জন করতে হয়েছিলো। কোরবানী ঈদকে ডাকাই হতো ‘বকরি ঈদ’ বা ছাগলের ঈদ নামে। সেই বকরি ঈদে গরু কোরবানী চালু করার বিষয়টি এমনি এমনি হয়নি। ইতিহাস বলে, সিলেট মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে এসেছিলো গরু জবাইকে কেন্দ্র করেই। আজ থেকে প্রায় ৭০০ বছর আগে একটি গরু জবাইকে কেন্দ্র করে সিলেটের ইতিহাস রচিত হয়েছিলো। তবে শুধু সিলেট নয় বাংলাদেশের অনেক এলাকাতেই গরু জবাই করতে দিতো না হিন্দুরা। কয়েকটি ইতিহাস জেনে নেই-
১) লেখক মুনতাসীর মামুন তার ‘বাংলাদেশের উৎসব’ নামক বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠায় লিখে- “আজকে আমরা ইদ-উল-আজাহায় গরু কোরবানীর অনায়াসে গরু কিনে এনে সহজেই কোরবানী দিয়ে ফেলি আশি একশো দুরে থাকুক পঞ্চশ বছর আগেও তা তেমন সহজসাধ্য ছিল না। আজকের প্রজন্ম হয়ত অবাক হবে যে এ নিয়ে সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর বিতর্ক চলেছে। এবং কোরবানী বিশেষ করে গরু কোরবানী দেওয়ার অধিকার আমাদের বাপ দাদাদের লড়াই করে আদায় করতে হয়েছে।”
২) ১৮৮২ সালে দায়নন্দ সরস্বতী ভারতে “গো হত্যা নিবারনী” সভা স্থাপন করলে শুরু হয়েছিল বিতর্ক। ‘গো হত্যা’ বা গরু কোরবানীর বিপক্ষে এ সভা থেকে ভারত জুড়ে হয়েছিল প্রবল প্রচার। ১৮৮৭ সালে রাজশাহীর তাহিরপুরের জমিদার শশিশেখর রায় কংগ্রেস মাদ্রাজ অধিবেশনে এ পরিপ্রেক্ষিতে উত্থাপন করেছিলো প্রস্তাব। ফরিদপুর ও বিভিন্ন অঞ্চলেও এ নিয়ে প্রচার শুরু হয়েছিল। তখন এর বিরোধিতা করতে মুসলমানদের বিভিন্ন সভা বা আঞ্জুমান সমূহ এগিয়ে এসেছিল। বিত্তবান হিন্দুদের এ প্রচারনার সমর্থনে এসেছিল স্থানীয় হিন্দু জমিদাররা।
৩) ১৯শ’ শতকের শেষ দিকের অবস্থার একটি বিবরণ পাওয়া যায় ইবনে মাযুদ্দিন আহমদের আত্মজীবনী ‘আমার সংসার জীবন’ এ। তিনি লিখেছিলেন “গোবিন্দপুর হরিশঙ্করপুর, সনাতন, গোপীনগর, আমলা, গোসাঞী পুকুর প্রভৃতি কতকগুলি গ্রাম একজন হিন্দু জমিদারের জমিদারীভুক্তি; সেখানকার মুসলিমগণ বহুকাল অবধি গরু কোরবানী করতে বা গরু জবেহ ও উহার গোশত ভক্ষণ করিতে পারিত না। কেহ করিলে তার আর রক্ষা ছিল না। জমিদার কাছারীর দুর্দান্ত হিন্দু নায়েবগন কোরবানীদাতা ও হত্যাকারীকে ধরিয়া আনিয়া প্রহার ও নানা অপমান করিত এবং তাহাদের নিকট জরিমানা আদায় করিত। সুতরাং তাহাদের অত্যাচারে ঐ অঞ্চল হইতে গো কোরবানী প্রথা উঠিয়া গিয়াছিল।" (তথ্যসুত্র : বাংলাদেশের উৎসব , লেখক : মুনতাসীর মামুন, প্রকাশনা : বাংলা একাডেমী পৃষ্ঠা ৩৩ )
ইতিহাস বলে দিচ্ছে, বাংলায় গরু কোরবানীর রীতি খুব কষ্ট করে অর্জন করতে হয়েছে মুসলমানদের। আবার হিন্দুরাও মুসলমানদের গরু কোরবানী বন্ধে নানা প্রকার প্রয়াস চালিয়েছে, প্রতিনিয়ত বাধা দিয়েছে, কখনই বসে থাকেনি। বর্তমানেও বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে গরু কোরবানী বা জবাইয়ে বিপক্ষে মাঝে মধ্যেই নানান কার্যক্রম লক্ষণীয়।
-মুহম্মদ গোলাম সামদানি (গবেষক ও লেখক)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আমরা স্টেডিয়াম চাই না, আমরা কুরবানীর হাট চাই
১৬ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আরো বেশি কুরবানীর হাট দরকার ছিলো
১৬ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৯৮% মুসলমানের সামর্থ্যহীন গরিবদের পবিত্র কুরবানী করতে সরকারীভাবে অর্থ সাহায্য দেয়া হোক?
১৫ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কুরবানীর হাটে কেন আদায় হবে ‘ইজারা’ ও ‘হাসিল’?
১৪ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আরো বেশি পবিত্র কুরবানীর হাট চাই
১৩ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পূজা-পার্বণে সরকার কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে পারে, কুরবানীর পশুর হাট ব্যবস্থাপনায় কেন ভর্তুকি দিতে পারবে না? (১)
১৩ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
রাষ্ট্রদ্বীন ইসলামের দেশে ইসলামের কথা বলতে পারবো কি? (২)
১২ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
রাষ্ট্রদ্বীন ইসলামের দেশে ইসলামের কথা বলতে পারবো কি? (১)
১১ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলা ভাষায় মুসলমানদের অবদান কত বেশি? (৩)
১০ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বাংলা ভাষায় মুসলমানদের অবদান কত বেশি? (২)
০৯ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাংলা ভাষায় মুসলমানদের অবদান কত বেশি? (১)
০৮ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বাংলাদেশের রোগীরা কেন চিকিৎসা নিতে ভারতে যায়? (৩)
০৭ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)