বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ঔপনিবেশিক-ব্রাক্ষণ্যবাদী আগ্রাসন ও ষড়যন্ত্র পরিভাষা, শব্দ ও বানান আগ্রাসন (১১)
, ২১ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৫ সাদিস, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৩ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৮ কার্তিক, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
যুগ যুগ ধরে যেসব আরবী-ফারসী শব্দ, পরিভাষা এবং বানানরীতি বাংলা ভাষার প্রাণ হয়ে বাংলার মধ্যে একাকার হয়ে মিশেছিল, বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছিলো। কলকাতার কথিত বিজ্ঞরা সেসব আরবী-ফারসী শব্দ, পরিভাষা এবং বানান রীতিকে বেছে বেছে বের করে তার স্থলে সংস্কৃত শব্দ, পরিভাষা ও বানান রীতি প্রবেশ করিয়েছে। এর বিরুদ্ধে একসময় মুসলমান কবি-সাহিত্যিকরা কলম ধরলেও শতভাগ সংস্কৃতের আগ্রাসন ঠেকানো সম্ভব হয়নি। যার ফলে বাংলা ভাষায় এখনও প্রচুর সংস্কৃত শব্দ ও পরিভাষা চলমান রয়েছে, এবং কথিত মান্য বা প্রমিত বানানরীতির ব্যবহারও চলছে যা একদিকে বাংলা ভাষার উপর আগ্রাসন, অন্যদিকে মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদার জন্য হুমকিস্বরূপ। বহিরাগত সংস্কৃতের আগ্রাসী ও ঈমানবিধ্বংসী সেসব শব্দ ও পরিভাষাগুলোর মধ্যে এখানে কিছু শব্দ ও পরিভাষা তুলে ধরা হয়েছে, এবং দুই একটা বানানরীতির ব্যবহার দেখানো হয়েছে যেগুলো ব্যবহার করা মানে বাংলা ভাষার বিকৃতিকে মেনে নেয়া।
এছাড়া এই তালিকায় এমন কিছু শব্দ ও পরিভাষা উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো ব্যবহার করা সরাসরি শিরক ও কুফরির অন্তর্ভুক্ত। নাঊযুবিল্লাহ! একজন মুসলমান কোনোক্রমেই এসব শব্দ ও পরিভাষা ব্যবহার করতে পারে না। মুসলমানকে অবশ্যই শরীয়তসম্মত শব্দ ও পরিভাষা ব্যবহার করতে হবে।
ইসলামী পরিভাষা ও শব্দের
বানানে হিন্দুত্ববাদী ষড়যন্ত্র:
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রণীত আধুনিক/প্রমিত বাংলা বানান রীতির একটি নিয়ম হচ্ছে- অ-তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে ‘ই’ বা ই’কার, উ’ বা উ’কার লিখতে হবে। ঈ বা ঈ’কার কিংবা ঊ বা উ’কার লেখা যাবে না।
অথচ যুগ যুগ ধরে বাঙালিরা ‘ঈদ’ পরিভাষাকে ঈ দিয়ে লিখে আসছেন, এবং নবী পরিভাষাকে ঈ’কার দিয়ে লিখে আসছেন।
অ-তৎসম শব্দ বলতে বুঝায়- তৎসম শব্দ বাদে বাকি চার প্রকার শব্দকে অর্থাৎ অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব (খাঁটি বাংলা), দেশী ও বিদেশী শব্দকে।
কথা হলো- বাকি চার প্রকার শব্দের ক্ষেত্রে উপরোক্ত নিয়ম চাপিয়ে দিলেও কলকাতার কথিত হিন্দুত্ববাদী বুদ্ধিজীবীরা কিন্তু তাদের ধর্মীয় গ্রন্থের ভাষা তৎসম বা ‘সংস্কৃত’ এর ক্ষেত্রে এই নিয়ম চাপিয়ে দেয়নি। এজন্য তারা ‘তৎসম’কে বাদ দিয়ে লিখেছে যে- ‘অ-তৎসম’ শব্দের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। ‘তৎসম’ শব্দের ক্ষেত্রে নয়।
বুঝেছেন ব্যাপারটা? ডাল মে কুচ কালা হায়! বাংলা বানান রীতির নামে কলকাতার বুদ্ধিজীবীরা কি করেছে বুঝেছেন! তারা তাদের ধর্মীয় ভাষাগুলিকে অপরিবর্তিত রেখেছে ঠিকই, কিন্তু মুসলমানদের দ্বীনী শব্দ ও পরিভাষাগুলোকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। আর মুসলমানরাও তাদের এই নিয়মগুলো মেনে নিয়েছে!
আশ্চর্য্যরে বিষয়! এমনকি বাংলাদেশের বাংলা একাডেমিও এই নিয়ম মেনে নিয়েছে এবং জারী করেছে।
১৯৩৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক বাংলা বানানরীতির নামে কথিত প্রমিত বানানের রীতি বা নিয়মগুলো তৈরি করে। অত্যন্ত ধূর্তভাবে তারা আরবী ফারসীর মূল যে বানান এবং মূল যে চেতনা সেটিকে উঠিয়ে দিতে চেয়েছে, পাশাপাশি তাদের সংস্কৃত ভাষার সব জিনিসই অপরিবর্তিত রেখেছে, ঠিক রেখেছে।
বাংলা ভাষা থেকে মুসলমানী ঘ্রাণ অর্থাৎ আরবী-ফারসী শব্দ উঠিয়ে ফেলার যেই পরিকল্পনা ব্রিটিশ ও সংস্কৃত ভাষার বি-রা হাতে নিয়েছিল এটিকে সেই পরিকল্পনারই অংশ বিশেষ বলা চলে। হাজার বছরেরও অধিককাল ধরে বাংলা ভাষার প্রাণ হয়ে বাংলা ভাষার মধ্যে একাকার হয়ে থাকা আরবী-ফারসীকে উঠিয়ে দিয়ে সংস্কৃত শব্দবহুল জটিল-কঠিন ও দুর্বোধ্য এক ধরণের বিকৃত বাংলা ভাষা সৃষ্টির পায়তারার অন্যতম একটি অনুষঙ্গ হচ্ছে প্রমিত বানানরীতির নামে আরবী বানানসমূহকে বিকৃত করে লেখার নিয়ম জারি করা!
এভাবে বাংলা ভাষা, বাংলা ব্যাকরণ ও বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কলকাতার কথিত বুদ্ধিজীবীরা এমন দুষ্কৃতি করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- বাংলা একাডেমি বাংলা ভাষা বিকৃতকরণের এসব দুষ্কৃতিকে প্রতিহত না করে উল্টো কলকাতার তৈরিকৃত নিয়মনীতিকেই অনুসরণ করে চলেছে। একটা স্বাধীন দেশের প্রতিষ্ঠানের জন্য এটা একটা দুঃখজনক ঘটনা। এর দ্বারা বাংলা একাডেমি তার স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্যবোধ ও মৌলিকত্ব প্রমাণে যে ব্যর্থ হয়েছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। (সমাপ্ত)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যা খাওয়া হারাম করা হয়েছে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












