বাতিল ফিরকা লা-মাযহাবী ও কথিত সালাফীদের কুফরী আকীদা উন্মোচন ও মুসলমানদের বিভ্রান্তির অপনোদন (৩)
, ২০ রবিউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৪ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৩ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ২৯ আশ্বিন, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
অথচ মকতুবাত শরীফ-এ লেখা হয়েছে- “মহান আল্লাহ পাক তিনি “আল্লাহ” শব্দ মুবারক থেকেও পবিত্র।”
তাহলে তিনি বসা ও উপবেশন করার মুহতাজ হন কিভাবে? মহান আল্লাহ পাক তিনি তো বলেই দিয়েছেন যে-
اَللهُ الصَّمَدُ
অর্থাৎ, মহান আল্লাহ পাক তিনি (বসা, উপবেশন করাসহ) সবকিছু থেকেই বেনিয়াজ বা পবিত্র। সুবহানাল্লাহ!
ঠিক মহান আল্লাহ পাক তিনি ইস্তাওয়া থেকেও পবিত্র। আসলে ইস্তাওয়ার সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার কোনো সম্পর্ক নেই। মূল বিষয় হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমি ৬ ধাপে আসমান-যমীন সৃষ্টি করার পর আরশে ‘আযীমকে আলমে খ¦লকের সর্বোচ্চ স্থানে স্থাপন করে আলমে খ¦লক্ব ও আলমে আমরের মধ্যে পার্থক্য সূচনা করে দিয়েছি। এটাই হচ্ছে ইস্তাওয়া। সুবহানাল্লাহ! অন্য কোন অর্থ হবে না। আমি ইস্তাওয়া করবো। আমি উপরে উঠবো, বসবো এধরণের কোন অর্থই গ্রহণযোগ্য না। মহান আল্লাহ পাক তিনি তো ছমাদ, বেনিয়াজ।
আমি ৬ ধাপে আসমান-যমীন সৃষ্টি করার পর আরশে আযীমকে আলমে খ¦লকের সর্বোচ্চ স্থানে স্থাপন করে আলমে খলক্ব ও আলমে আমরের মধ্যে পার্থক্য সূচনা করে দিয়েছি। এটাই হচ্ছে ইস্তাওয়া। সুবহানাল্লাহ!
যেমন- মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَالْـجِبَالَ اَوْتَادًا
অর্থ: “পাহাড়কে আমি পেরেক হিসেবে স্থাপন করেছি।” যমীনকে স্থির করার জন্য। আর আলমে খলক্ব ও আলমে আমরের পার্থক্য সূচনা করার জন্য আলমে খ¦লকের সর্বোচ্চে আরশে আযীমকে আমি স্থাপন করে দিয়েছি। সুবহানাল্লাহ! (আদ দুরারুল মুখতারাহ)
প্রথম আকাশে অবতরণ করা:
৩। প্রকৃতপক্ষের সালাফী হওয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার ছিফতসমূহের ক্ষেত্রে উলামায়ে সালাফের অনুসারী হওয়া আবশ্যক। কিন্তু আমাদের বর্তমান সমাজে নিজেদেরকে যারা ‘সালাফী’ বলে দাবি করে, মহান আল্লাহ পাক উনার ছিফতসমূহ সম্পর্কে তাদের আক্বীদা উলামায়ে সালাফের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। যেমন-
পবিত্র হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে-
اِنَّ اللهَ تَـعَالٰى يَـنْزِلُ فِيْـهَا لِغُرُوْبِ الشَّمْسِ اِلَى السَّمَاءِ الدُّنْـيَا
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি বরাতের রাতে সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন।
এখানে মহান আল্লাহ পাক উনার অবতরণ করা ছিফতটি সম্পর্কে পূর্ববর্তী প্রকৃত সালাফীদের আক্বীদা ছিলো- মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি স্বীয় শান অনুপাতে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন। অর্থাৎ কোন ধরণের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও অবতরণের ধরণ ছাড়া এভাবেই বিশ্বাস করবে ও মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য সাবেত মানবে।
তবে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফের সুন্দর ও সঠিক এবং বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা করেছেন সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি। তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ পাক প্রথম আসমানে অবতরণ করেন, এর অর্থ হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক তিনি রহমতে খাছ নাযিল করেন।” সুবহানাল্লাহ!
পক্ষান্তরে এই ছিফত সম্পর্কে আমাদের দেশের জাল সালাফীদের আকীদা হচ্ছে- ‘মহান আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে অবতরণ করা’ এটি কোন মানুষ সাত তলা বিল্ডিংয়ের ৭ম তলা থেকে ১ম তলায় অবতরণ করার ন্যায়। নাউযুবিল্লাহ! তাদের এই আক্বীদাটি হুবহু ‘মুশাব্বিাহা’ নামক ভ্রান্ত ফিরকার আক্বীদার সাদৃশ্য। এতে স্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয় যে, এ দেশের নামধারী সালাফীরা প্রকৃত সালাফী নয়; বরং জাল সালাফী। যাদের আকীদা-বিশ্বাস খুবই আপত্তিজনক অর্থাৎ কুফরীমূলক।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ইবনে বতুতা তার ভ্রমণ কাহিনীতে একটি ঘটনা লিখেছেন। ঘটনাটি হলো- তিনি ভ্রমণকালে একবার দামেস্কের জামে মসজিদে জুমুয়ার নামায পড়ার জন্য প্রবেশ করলেন। দেখলেন, নামাযান্তে এক ব্যক্তি মিম্বরে বসে বক্তৃতা করছেন। তিনি মনোযোগ দিয়ে তার বক্তৃতা শুনছিলেন। বক্তৃতার মধ্যে লোকটি একটি হাদীছ শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে বললেন, শেষ রাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। একথা শোনা মাত্র শ্রোতাদের থেকে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলো- মহান আল্লাহ পাক তিনি অবতরণ করেন কিভাবে? লোকটি মিম্বর থেকে নিচে নেমে এলেন এবং বললেন, মহান আল্লাহ পাক এভাবে অবতরণ করেন, যেভাবে আমি মিম্বর থেকে অবতরণ করলাম। ইবনে বতুতা লেখেন, তখন লোকজন লোকটিকে গণধোলাই দিলো। ইবনে বতুতা উপস্থিত লোকদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, কে এই ব্যক্তি? তারা বললো, সে ইবনে তাইমিয়া। (তুহফাতুল আলমাঈ)
বর্তমানে আমাদের দেশের নামধারী সালাফীরা ইবনে তাইমিয়ার এই দর্শনেই বিশ্বাসী। এই ঘটনা থেকে অনুমিত হয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার ছিফাতের ক্ষেত্রে এসব সালাফীদের কেমন ভ্রান্ত আক্বীদা রয়েছে।
(অসমাপ্ত)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যা খাওয়া হারাম করা হয়েছে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












